মাদককে ‘না’ বলে নতুন জীবনে পা রাখলো মিতাব

মানিকগঞ্জ থেকে রিনা আক্তার

আজকের তরুণ আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। তারুণ্যের অগ্রযাত্রাই পারে সুস্থ-সুন্দর সমাজ গড়তে এবং তরুণরাই পারে দেশকে উন্নয়নের শিখরে পৌছে দিতে। যুব শক্তির সামষ্টিক কার্যক্রমই পারে সমাজে নারী-পুরুষের বৈষম্য রোধ করে সামাজিক ন্যায্যতার সমাজ বিনির্মাণ করতে। এমনই এক তরুণ মিতাব হোসেন। মিতাব হোসন মানিকগঞ্জ জেলার সিংগাইর উপজেলার আজিমপুর গ্রামে বসবাস করে। মিতাবের বয়স ১৭বছর। মিতাব সিংগাইর মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের এস.এস.সি পরীক্ষার্থী। পড়াশুনার পাশাপাশি সে ছাত্ররাজনীতিও করে। সিংগাইর পৌরসভার ছাত্রলীগের সাংগঠানিক সম্পাদক হিসেবে ভালো সংগঠক এবং সে ভালো ফুটবলারও।

20190819_171440
বাবা-মা আর ছোট একটি বোনকে নিয়ে তার পরিবার। মিতাবের বাবার নাম খবির মোল্লা (৪৩), মায়ের নাম আনিছা আক্তার (৩৫), ছোট বোনের নাম খাদিজাতুল মাহি (৫)। মিতাবের বাবা একজন প্রবাসী। মিতাব ২য় মায়ের কাছেই থাকে। তার ২য় মা তাকে অনেক আদর-যত্ন করেন। কিন্তু গত ২০১৮ সালের অক্টোবরের দিকে সে তার নানা বাড়িতে চলে যায়। তখন তার মাও বিদেশ চলে যান। সেখানে মিতাব প্রায় একাই থাকতো। এমনকি তাকে শাসন করার মতোও মা বাবা কেউ ছিলো না। ছিলো শুধু তার বৃদ্ধ নানী।

এমতাবস্থায় সে ক্রমেই নেশাগ্রস্ত খারাপ ছেলেদের সাথে মিশতে থাকে। তার বাবা এবং মা দুজনই তাকে পড়াশোনার জন্য টাকা দিতেন। কিন্তু সে ঠিকমতো স্কুলে যেতো না। স্কুল ফাঁকি দিয়ে খারাপ ছেলেদের সাথে আড্ডা দিতো। এভাবে সে মাদকের দিকে ক্রমেই ধাবিত হতে থাকে। মাদকের দিকে সে এমনভাবেই আকৃষ্ট হয়ে পড়ে যে, সে গত ফেব্রুয়ারি মাসে  এ.এস.সি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারেনি। সে ক্রমেই আরো পতনের দিকে ধাবিত হতে থাকে। সে এতোটাই নেশাগ্রস্ত হয়ে পড়ে যে এক পর্যায়ে সে প্রায় পাগলের মতো হয়ে যায়। সে অস¦াভাবিক আচরণ করতে থাকে। যখন সে নেশার দ্রব্য না পায় তখন সে অস্থির হয়ে পড়ে, নিজের শরীর নিজেই আঘাত করে। একবার সে তার নিজের মাথা এবং হাত দিয়ে নিজেই আঘাত করে ক্ষত-বিক্ষত করে ফেলে ছিলো। সকলেই ভাবতে ছিলো এটা মনে হয় ভুতের আছর। তখন তার মা বিদেশ থেকে বাড়িতে এসে অনেক ওঝা, ফকিরও দেখায়। আসলে কোন ভূতের আছর নেই সে ইয়াবা ও ফেনসিডল দ্বারা আক্রান্ত। মাঝে মধ্যেই সে খুব ভালো আচরণ করে আবার খারাপ আচরণও করে। সামাজিক বিভিন্ন কাজেও সে সম্পৃক্ত থাকে।

IMG_20190819_170521
একসময় বারসিক’র কর্মী রিনা আক্তারের মাধ্যমে তার বাড়ির পাশে বারসিক আয়োজিত যুব কর্মশালায় সে অংশগ্রহণ করে। কিন্তু সে সারদিন থাকতে পারেনি। এক ধরনের অস্থিরতা কাজ করছে তার মধ্যে। তখন বারসিক কর্মকর্তা মো: নজরুল ইসলাম ও বাহাউদ্দিন বাহার বারসিক কর্মকর্তা রিনা আক্তারকে মিতাবের উপর বিশেষ নজর রাখতে বললেন। তখন থেকেই মিতাবকে বারসিক’র বিভিন্ন কর্মশালায় নিয়ে আসে এবং শহীদ রফিক যুব স্বেচ্ছাবেক টিমের সাথে যুক্ত করেন।

এক সময় সে চরম বিপদসীমা অতিক্রম করলে বারসিক কর্মী রিনা ও তার সচেতন প্রতিবেশীরা তার পরিবারকে গুরুত্বসহকারে অবগত করেন। তারপর মিতাবের বাবা বিদেশ থেকে চলে আসে এবং বিভিন্ন ডাক্তার দেখান। ডাক্তার দেখানোর পর যে ্্ওষুধগুলো তাকে দিয়েছিলো সেগুলো খাওয়ার পর সে সীমিত সময়ের জন্য ভালো হলেও কিছু সময় পর দেখা যায় সে আবার অস্বাভাবিক আচরণ করে। এই অবস্থা দেখে তার বড় চাচা তাকে রিহাবে ভর্তির পরামর্শ দেন, তখন তার বাবা ও চাচা আরো কয়েকজন মিলে শ্যামলী সরকারি মানসিক হাসপাতালে ভর্তি করেন। সেখানে প্রায় একমাস চিকিৎসার পর তাকে সেখান থেকে আনা হয়। কিন্তু কয়েক দিন পর দেখা যায় সে আবার সেই আগের মতোই আচরণ করছে। এমতাবস্থায় তার বাবা তাকে আবার তেতুলঝোড়া প্রাইভেট রিহাবে ভর্তি করেন। সেখানে প্রতি মাসে প্রায় ৩০,০০০ টাকা করে লাগতো। সেখানে প্রায় ৪ মাস থাকার পর তাকে সুস্থ করে বাড়িতে আনা হয়।

20190819_171455

বর্তমানে সে নিজেই মাদকের বিরুদ্ধে কথা বলছে এবং বারসিকসহ বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠনের সাথে সেচ্ছাসেবামুলক কাজে স্বাতফুর্তভাবে অংশগ্রহণ করছে। মিতাব বলেন, ‘আমি আর কোনদিন এই পথে যাব না এবং আমার চোখের সামনে কেউ বিপথগামী হলে আমি তাকে সাধ্যমত ফিরিয়ে আনতে ভূমিকা রাখব।’

happy wheels 2

Comments