অচাষকৃত উদ্ভিদ বৈচিত্র্য রক্ষা করা আমাদেরই দায়িত্ব

মানিকগঞ্জ থেকে রাশেদা আক্তার

‘এই গাছটার নাম ভূঁইআম্বলী এটা খেলে আমাশয় উপশম হয়, এটার নাম পিপল দাঁতে পোকা লাগলে শিকড় ব্যবহার করলে উপকার হয়, এটার নাম পিপল জাঙ্গী- গরম লাগলে পাতার রস দিয়ে শরবত খায়, মাথায় দেয় গরম কেটে যায়, এটা দূর্ব্বা- হাত-পা কেটে গেলে প্রলেপ দিলে রক্তপড়া বন্ধ হয়’-এভাবেই প্রতিটি গাছের সাথে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার মধ্য দিয়ে তার অভিজ্ঞতার বর্ণনা দিচ্ছিলেন শিরিন আক্তার (২৬ বছর)। ৬০ বছর বয়সী নুরুন্নাহার বেগম, রেনু বেগমও এসব গাছের গুণাগুণ এবং উপকারিতার কথা জানান সবাইকে।

74238366_539206570229564_8312228517811060736_n
‘প্রাণবৈচিত্র্য রক্ষা করি, অচাষকৃত উদ্ভিদ বৈচিত্র্য সংরক্ষণ করি’ শ্লোগানকে সামনে রেখে দিয়ারা নারী উন্নয়ন সংগঠনের আয়োজনে এবং বারসিক’র সহযোগিতায় গতকাল অচাষকৃত উদ্ভিদের পাড়া মেলা অনুষ্ঠিত হয়েছে। অচাষকৃত উদ্ভিদের পুষ্টিগুণ সম্পর্কে সকলকে জানানোর পাশাপাশি অচাষকৃত উদ্ভিদ সংরক্ষণ ও ব্যবহারের চর্চা টিকিয়ে রাখার লক্ষ্যে এই কর্মসূচির আয়োজন করা হয়।

75220794_1430419283800627_470497406530617344_n
মেলায় দিয়ারা নারী উন্নয়ন সংগঠনের ২৭ জন সদস্য তাদের বাড়ির আশেপাশে জন্মানো অচাষকৃত উদ্ভিদ সংগ্রহ করে কুলায়, ডালিতে সাজিয়ে মেলায় নিয়ে আসেন। মেলায় ২৭ জন নারী সর্বোচ্চ ৪২ রকমের অচাষকৃত খাদ্য ও ঔষধি উদ্ভিদ প্রদর্শন করেন। এগুলোর মধ্যে রয়েছে- থানকুনি, বিষজারণ, তুলসী, পিপল, পিপল জাঙ্গি, নাকফুল, রক্ত জবা, কেচলা, বাশক, দূর্ব্বা, তেলাকুচ, সেচি শাক, পানা ফুল, কলমী, জংলা কচু, পাথর চুনা, কাঁটাখুইরা, ঢেঁকি শাক, ঘাওপাতা, স্বর্ণলতা, চিনিগুড়া, ছিটকী, ঘোটা শাক, তিত বেগুন, ডন্ড কোলস, হারমচকা, বিলাই এচড়া, কল্পনাথ, নুনাফল, কুরআদা, ওলটকম্বল, মটমটা, জগডুংরা, কানিলা, সোনাতুলা, কচুর লতি, লতা পাতা, শিমুল, আগড়া, ভুঁইআম্বলী, খারকুন, ধুতরা ইত্যাদি।

75242119_503907277005572_3293439574646194176_n
এই প্রসঙ্গে শিল্পী বেগম বলেন, ‘এসব শাকসবজি আমি প্রায় প্রতিদিনই রান্না করে খাই। আমার স্বামী ও সন্তানেরা খুব পছন্দ করে। আমরা এগুলোর গুণ জানি না তবে জানি শাকসবজি বেশি খেলে পুষ্টি পাওয়া যায়। তাই এগুলো খাই।’ রেনু বেগম বলেন, ‘আগে চকে পাতারে এসব গাছ কত দেখা গেছে। জমি পতিত থাকছে সেখানে কত হইছে। এখন আগাছা মারার ঔষধ দেয় সব মরে শেষ হয়ে যায়। এই গাছগাছালির অনেক উপকার আছে। আমার বাবা কবিরাজী চিকিৎসা করতেন। আমি কিছু কিছু শিখেছি তাই জানি। এগুলো সংরক্ষণ করা প্রয়োজন।’ নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী টুম্পা বলেন, ‘এই গাছগুলো রাস্তাঘাটে কত দেখি কিন্তু এগুলো যে বাঁচিয়ে রাখতে হবে তা বুঝতাম না। এখানে এসে জানতে পারলাম। অনেক ধরণের গাছের নাম ও জানতে পারলাম।’

মেলায় অচাষকৃত উদ্ভিদ প্রদর্শনকারী সকলকে পুরুষ্কার প্রদান করা হয়। প্রদর্শনী শেষে আলোচনার মধ্য দিয়ে নারীরা অচাষকৃত উদ্ভিদের ব্যবহার বৃদ্ধি ও চর্চা করার জন্য সকলকে আহবান জানানো হয়। সেই সাথে অচাষকৃত উদ্ভিদ সংরক্ষণে সকলে একসাথে কাজ করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।

happy wheels 2

Comments