নেত্রকোনায় শ্রমিক সংকটের কারণে তলিয়ে যাচ্ছে কৃষকের ধান

নেত্রকোনা থেকে পাবর্তী সিংহ

আমাদের দেশের অর্থনৈতিক প্রেক্ষপটে এখন আর কোন মানুষকে না খেয়ে থাকতে হয় না। গ্রামের মানুষ শুধুমাত্র কৃষিকাজ করবে এমন ধারণার ও পরিবর্তন হয়েছে। জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে  জীবিকা নিবার্হে কাজের ক্ষেত্রও  পরির্বতন হয়েছে, সৃষ্টি হয়েছে পেশার ভিন্নতা। গ্রামের প্রত্যেক পরিবার থেকে কোন না কোন মানুষ গ্রামের বাইরে কাজ করতে যায়।তারা কাজ করে ইটের ভাটায়, গামের্ন্সে, গাড়ি চালক হিসেবে, কলকারখানায়, দৈনিক শ্রমিক হিসেবে। ফলে কৃষিক্ষেত্রে দিনকে দিন শ্রমিকের সংখ্যা কমে যাচ্ছে।
বর্তমানে প্রতিটি কৃষকই তার কোন জমি অনাবাদী রাখতে চান না। সব জমিতেই তাঁরা ফসল ফলান বা ফলাতে চান। কিন্তু শুধু ফসল ফলালেই তো হয় না; এই ফসল ঘরে তোলার জন্য শ্রমিকেরও প্রয়োজন হয়। উপরোন্তু হাওর এলাকায় অকাল বন্যা বা অতিবৃষ্টির কারণ খুব দ্রুতই মাঠের ফসল নামাতে হয়। তবে কাজের ক্ষেত্র বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে আজ কৃষিকাজে শ্রমিকের সঙ্কট বেড়েই চলেছে বিশেষত হাওর এলাকায়।

Ntশ্রমিক সঙ্কটের কারণে নেত্রকোনার হাওর এলাকার অনেক কৃষকের ফসল মাঠেই পরে রয়েছে। অতিরিক্ত বৃষ্টির কারণে এবং ফসল ঘরে তোলার জন্য কৃষি শ্রমিকের সঙ্কটে জেলার আটপাড়া উপজেলার বাঘড়া হাওরে কৃষকের শত শত একর জমির বোরো ধান তলিয়ে যাচ্ছে। যে জমিগুলোর ধান আছে সেগুলোও কৃষকরা ঘরে তুলে আনতে পারছেনা শ্রমিকের অভাবে। সাধারণত কৃষকের জমিতে ফসল তোলার ক্ষেত্রে ফসলের পাঁচ এক ভাগ শ্রমিককে তাঁর মজুরি হিসেবে দেওয়া হয়। তবে প্রকৃতির প্রতিকূলতার কারণে কৃষকরা শ্রমিককে অর্ধেক ফসল দেওয়ার বিনিময়েও ফসল তোলার জন্য এলাকায় শ্রমিক পাচ্ছেন না! শ্রমিক অভাবে কারণে কৃষকরাও আজ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বলে জানান।

এই প্রসঙ্গে কৃষক মজিবর মিয়া বলেন, “আমি এই বছর ৮ কাডা জমি আদি করছি। সব ক্ষেত ফানির মইধ্যে, কোন কামলা পাইতাছি না। তাই নিজে কষ্ট কইর‌্যা যাই আনতারি।”
অন্যদিকে কৃষক মো. দুলাল মিয়া বলেন, “তিন বা চার বছর আগেও আশপাশের গেরাম (গ্রাম) থ্যাইক্যা (থেকে) লোকজন ধান কাটতে আইতো (আসতো)। এহন সবাই গারমেন্স (গার্মেন্টস) করে, ব্যবসা করে। ধান কাটার লোক অহন আর বেশি পাওয়া যায় না।” তিনি বলেন, “পানির কারণে আরও কামলা পাই না ।অর্ধা অর্ধি দিয়াও ধান কাটাইতে পারতাছি নাহ্।  এক কাটা ক্ষেত ধান কাটাতে ১২ শ’ টাকা লাগে। কিন্তু ধানের তো দাম নাই।”
এভাবে শ্রমিকের অভার কারণে আজ কৃষি কাজ করেও লাভবান হচ্ছেন না কৃষকরা। উপরোন্তু ধানের মূল্য কম হওয়ায় তারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।

happy wheels 2

Comments