সাম্প্রতিক পোস্ট

শারমিন আখতারের দৃঢ়তা

মানিকগঞ্জ থেকে মাহফুজা আখতার
শারমিন আক্তার। বয়স মাত্র ১৬ বছর। মানিকগঞ্জ জেলার সিংগাইর উপজেলা বাঘারচর গ্রামেই এই কিশোরী বাস করেন। তার পিতা সোনামুদ্দিন একজন দিনমজুর। ৮ শতাংশ জমিই সোনামুদ্দিনের একমাত্র সহায় সম্বল। দরিদ্রতা এবং বরের পক্ষ থেকে কোন যৌতুক দাবি না করায় শারমিনের বাবা মাত্র ১৩ বছর বয়সেই শারমিনকে বিয়ে দেন! শারমিন জানেন এটা বাল্য বিয়ে কিন্তু পিতার সাথে না পেরে রাজি হন। কিন্তু বিয়ের ৬ মাস পর যৌতুকের জন্য শারমিনের ওপর চাপ ও নির্যাতন আসলে তিনি প্রতিবাদ করে বাবার বাড়িতে ফিরে আসেন। শ্বশুর বাড়িতে চলে আসায় সমাজে শারমিনের বিরুদ্ধে নানান কথা উঠে তবে তিনি তাতে বিচলিত হননি। বরং জীবনের এই কালো অধ্যায় ভুলে থাকার চেষ্টা করেন। বাবা-মায়ের সাথে পরামর্শ করে আবার পড়াশোনায় মনোযোগ দেন।

shar
এভাবে গত বছর (২০১৫) সারমিন আখতার চরজামালপুর দাখিল মাদ্রাসায় আষ্টম শ্রেণীতে ভর্তি হন। পড়াশোনায় গভীর মনোযোগ দেন। তার পরিশ্রম ও একনিষ্ঠতার কারণে জেএসসি পরীক্ষায় ৪.৮০ পেয়ে উত্তীর্ণ হন। পড়াশোনার চালিয়ে যাওয়ার জন্য শারমিন নিজেই নিজের খরচ বহনের উদ্যোগ নেন। তিনি  ২য় ও ৩য় শ্রেণীর ৩ জন শিক্ষার্থীকে পড়াতে শুরু করেন। প্রাইভেট পড়ানোর টাকা দিয়ে তিনি নিজে প্রাইভেট পড়েন এবং অন্যান্য শিক্ষা উপকরণ কেনেন। এই প্রসঙ্গে শারমিন আখতার বলেন, “আমি আগে বুঝতামনা  এখন বুঝতে শিখেছি। এখন আমার বয়স মাত্র ১৬ বছর। আমার মত কোন মেয়ে যেন বাল্য বিবাহের শিকার না হয়।” তিনি আরও বলেন, “আমি আজ লেখা পড়া শুরু করেছি, ভবিষ্যতে চাকরি করব। বাবা মাকে সাহায্য করব।”

মেয়েকে অল্প বষয়ে বিয়ে দিয়ে অনুতাপ করেছেন শারমিন আখতারের মা রানী বেগমও। তিনি বুঝতে পেরেছেন যে, বাল্য বিবাহ দিয়ে তিনি অপরাধ করেছেন। তিনি বলেন, “আমার মেয়ে খেলাপড়ায় ভালো ছিল। আমরা ভূল করেছি ওকে অল্প বয়সে বিয়ে দিয়ে।” তিনি আরও বলেন, “এই বিয়ের সময় ছেলেপক্ষ থেকে কোন দাবি না থাকায় আমরা এই বিয়েতে রাজি হই। আমাদের মতো কোন বাবা মা যাতে এমন ভুল না করে সেই দোয়া করি।” শারমিন আখতারের পিতা সোনামুদ্দিনও নিজের ভুল বুঝতে পেরেছেন। তিনি বলেন, “আমার মেয়ে বাল্য বিবাহ থেকে মুক্ত হয়ে নতুনভাবে জীবন গড়ার চেষ্টা করেছে। এবছর জেএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশের পর আমি প্রতিজ্ঞা করেছি ওকে লেখাপড়া শিখিয়ে তার স্বপ্ন পূরণ করার  চেষ্টা করব”।

নতুন শারমিন শুধু তার পিতামাতাকে নন বরং সমাজের সবাইকে বাল্য বিয়ের কুফলতা সম্পর্কে বার্তা দিতে সমর্থ হয়েছেন। এইভাবে ঘরে ঘরে প্রত্যেক পিতামাতা যদি প্রতিজ্ঞা করেন ছেলেমেয়েদেরকে বাল্য বিবাহের অভিশাপ থেকে মুক্ত করবেন তাহলে দেশে বাল্য বিবাহের হার অনেকাংশে কমে যাবে; অনেক জীবন আলোকিত হবে।

happy wheels 2