কেমন আছেন খেজুর আটি গ্রামের জনগোষ্ঠী?

শ্যামনগর, সাতক্ষীরা থেকে বিশ্বজিৎ মন্ডল

গত ২০ মে ২০২০ তারিখে উপকূলীয় এলাকায় ঘূর্ণিঝড় আম্ফান আঘাত হানে। যার ফলে উপকূলীয় এলাকায় ব্যাপক ক্ষয় ক্ষতি হয়। বিশেষ করে সাতক্ষীরা জেলার শ্যামনগর উপজেলায় বিভিন্ন স্থানে নদীর বাঁধ ভেঙে লবণ পানি প্রবেশ করায় ক্ষতির পরিমাণটা বেশি হয়।  এলাকার  কৃষি জমি, চিংড়ি ঘের, বসতভিটার বিভিন্ন ফসলাদি, ঘর বাড়ি, প্রতিষ্ঠান, ল্যাট্রিন, সুপেয় পানির উৎস, যোগাযোগের রাস্তা, বিভিন্ন ধরনের গাছ-পালার ব্যাপক ক্ষতি হয়। বছরে বারবার ঘুরে আসছে নানান ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ। আর দুর্যোগে উপকূলীয় এলাকার মানুষের যেন বেঁচে থাকাটা কঠিন হয়ে পড়েছে।

কোন একটি দুর্যোগ শেষ হতেই মানুষ যখন তা আবার কাটিয়ে উঠতে নানান ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করতে থাকে। আর এ উদ্যোগ বাস্তবায়ন করতে না করতেই আবার অন্য নামের কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগ এসে হাজির হয়। প্রতিনিয়ত যেন দুর্যোগের সাথে যুদ্ধ করে টিকে থাকতে হচ্ছে এ এলাকার মানুষকে। এ টিকে থাকা হয়তোবা যতদিন এলাকার মানুষ প্রাণবৈচিত্র্য টিকে থাকবে ততোদিনই এভাবেই যেতে হবে। এর শেষ যে কি তা কেউ বলতে পারবেনা।

প্রতিনিয়ত এ দুর্যোগ উপকূলীয় এলাকার মানুষকে আরো পিছিয়ে দিচ্ছে। সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার পথ যেন রুদ্ধ করে দিচ্ছে। ঘূর্ণিঝড় আমফান যে হয়েছে তা প্রায় ৪ মাস অতিক্রান্ত হতে চলেছে। কিন্তু এখনোই অনেক পরিবার নিজের বসততি ঘর তৈরি, বসত ভিটা ও পুকুরের লবণ পানি অপসারণ করতে পারিনি। কেউ কেউ করতে পারলেও কোন ধরনের ফসলাদি আবাদ করতে পারছেন না।

এ বিষয়ে চলতি মাসের প্রথমে মাঠ পর্যবেক্ষণে শ্যামনগর উপজেলার কাশিমাড়ি ইউনিয়নের খেজুরআটি গ্রামে স্থানীয় জনগোষ্ঠীর সাথে আলোচনা ও তাদের বসতভিটার চিত্র থেকে যা উঠে আসে তা খুবই ভয়ংকার। প্রবীণ কৃষক মহিউদ্দীন সরদার বলেন, দুর্যোগ তো সব সময় লেগে আছে আমাদের সাথে। আমরা তার সাথে পাল্লা দিয়ে চলছি। আদৌ কি তা সম্ভব। আমাদের এখানকার অধিকাংশ মানুষ দরিদ্র। আর এ দুর্যোগ যেন আরো দরিদ্র তৈরি করে দিচ্ছে আমাদের। ঘূর্ণিঝড় আম্ফান হওয়াতেও আমাদের বসতভিটায় ও ঘরের মধ্যে দিয়ে দীর্ঘ ৪৬ দিন জোয়ার ভাটা প্রবাহিত হয়েছে। যার ফলে অনেকের ঘর-দুয়ার ভেঙে গেছে। সুপেয় পানির পুকুরগুলো নষ্ট হয়ে গেছে।’ তিনি আরও বলেন, আমাদের নিচের পানি ভালো ছিলো বলে আমরা কোন রকমে টিকে আছি। কিছু না পাইলে শুধু পানি খেতে পেরেছি। এখন যে পুকুরের পানির অপসারণ করবো ক্ষেতগুলোতে সবজি চাষ করবো তা করতে পারছি না। কারণ বসতভিটার মাটি সব লবণ হয়ে গেছে ফসল লাগালে তা তেমন বের হচ্ছেনা। গোসল করার ভালো পানি না থাকায় গায়ে বিভিন্ন ধরনরে ঘা পাচড়া বের হচ্ছে। ভিটাগুলো যেন গাছ শুন্য হয়ে পড়েছে। যার কারণে এলাকায় গরমের মাত্রা বেশি।

কৃষক নুর ইসলাম বলেন যে, বর্তমান সময়ে মহামারী করোনা দূর্যোগ এর সাথে প্রাকৃতিক দুর্যোগ ঘূর্ণিঝড় আম্পান একত্রিত হয়ে আমাদের সর্বশান্ত করে দিয়েছে। প্রয়োজনীয় দ্রবাদি বিশেষ করে খাদ্যদ্রব্যর মূল্য বৃদ্ধি হওয়াতে আমাদের পক্ষে টিকে থাকা কঠিন। আগে যদিওবা বসতভিটায় কিছু সবজী চাষাবাদ করতাম তা দিয়ে মাসের অধ্যেকের বেশি দিন চলে যেতো। আর এখন সারা মাস তরকারী কিনতে হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, দীর্ঘদিন ধরে ভিটায় লবণ পানি থাকায় সবজি চাষাবাদ করেও গাছ বাঁচাতে পারছিনা। কারণ লবণের মাত্রা বেশি। বর্ষা মৌসুমে যেখানে ঘের ও পুকুরের পানি মিষ্টি থাকার কথা তখন যখন কিছু হলো না তখন সামনের মৌসুমে যে কি হবে তা বলা যাচ্ছে না। আম্পান হয়ে যাওয়ার চার মাস পার হলেও এখনো আমারা কৃষি পরিবশে তৈরি করতে পারিনি।

উপকুলীয় এলাকায় বর্তমান সময়েরে এই মহামারী করোনা ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ জনজীবনে চরম দুর্ভোগের কারণ হয়ে দাড়িয়েছে।আর এ থেকে বের হওয়ার জন্য তাদের চেষ্টার শেষ নেই। প্রতিনিয়ত যেনো তারা যুদ্ধের স্বীকার।কতো দিন আর এ যুদ্ধ করে টিকে থাকতে পারবে তা নিয়ে এক ধরনের সংশয় তৈরি হচ্ছে।

happy wheels 2

Comments