সাম্প্রতিক পোস্ট

স্থানীয় মাছ রক্ষার উদ্যোগের নাম জানমা

নেত্রকোনা থেকে মো. অহিদুর রহমান

মাছ আমাদের খাদ্য তালিকায় একটি অন্যতম উপাদান। বহুকাল ধরে আমাদের এই নদী বিধৌত অঞ্চলে স্থানীয় জাতের শত শত মাছ আমরা দেখে এসেছি। কিন্তু নদী-নালা, খাল বিল হাওর শুকিয়ে যাওয়া, অবৈধ বাধ, সেচ দিয়ে মাছ ধরা, জমিতে অতিরিক্ত বিষ, কীটনাশক, রাসায়নিক ব্যবহারের কারণে নেত্রকোনার জলাশয়ে স্থানীয় জাতের মাছ দিন দিন কমে যাচ্ছে। আগের মতো বাজারে গিয়ে দেখা যায় না স্থানীয় মাছ; অধিকাংশই দেখা যায় চাষকৃত মাছ। যার ফলে মানুষ চাষকৃত মাছের উপরই নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। এর ব্যতিক্রম দেখা যায় নেত্রকোনার আটপাড়া উপজেলার মগড়া পাড়ে। সেখানে জানমা নামে একটি জেলে সংগঠন রয়েছে। জানমার অর্থ হচ্ছে জাল নদী. ও মছ। এই সংগঠন স্থানীয় জাতের মাছ সংরক্ষণে নানা উদ্যোগ নিয়েছে। এই সংগঠনের উপজেলা কমিটি স্থানীয় জাতের মাছ বৃদ্ধির জন্য মগড়া নদী ও বিষনাই নদীতে মাছের অভয়াশ্রম তৈরি করে আসছে গত তিন বছর ধরে। সংগঠনের সদস্যরা অভয়াশ্রমের সমস্ত ডিমওয়ালা মাছ বৈশাখ ও জ্যৈষ্ঠ মাসে নদীতে উন্মুক্ত করে দেন। এর ফলে স্থানীয় বাজারগুলোতে বেড়ে যাচ্ছে বোয়াল, টেংরা, আইড়মাছসহ নানান স্থানীয় মাছ। এটি একটি বিরল দৃষ্টান্ত হিসেবে আমাদের সামনে হাজির হয়েছে; যা থেকে অনুপ্রাণিত হচ্ছে অনেক মানুষ।

dsc01110

স্থানীয় জেলেরা মনে করেন, নদী, খাল, বিল, হাওর লিজ নিলেই হবে না, জীবিকার প্রযোজনে ও প্রাণবৈচিত্র্য সংরক্ষণে স্থানীয় মাছ রক্ষা করা প্রয়োজন। কারণ মাছের উপরই তাদের জীবন ও জীবিকা নির্ভরশীল। জেলেদের এই ভাবনা থেকে বারসিক ও সরকারি সহযোগিতায় বানিয়াজান সংগঠন এ বছর কুড়ের মাঝে ১০ শতাংশ জলাশয় লিজ নিয়ে মগড়া নদীতে একটি মাছের অভয়াশ্রম তৈরি করে।

প্রশাসনের সাথে দেনদরবার ও আলোচনার মাধ্যমে জানমার জেলেরা প্রমাণ করেছে মাছ সংরক্ষণের সবচেয় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে একমাত্র জেলেরা। ফলস্বরুপ বিগত তিন বছর এলাকার জেলেদেরকে স্থানীয় প্রাকৃতিক মাছ সংরক্ষণের জন্য মাছের অভয়াশ্রম তৈরির দায়িত্ব প্রদান করা হয়। এছাড়া বিষনাই বিল, বাঘরা হাওর ও সুনই হাওরে তিনটি বিল নার্সারি করার সরকারি অনুদান ও রক্ষণাবেক্ষণ করার দায়িত্ব পালন করছে জেলেরা, যা জানমার একটি গুরুত্বপুর্ণ অর্জন।

স্থানীয় জাতের মাছ রক্ষা ছাড়াও জেলে-জেলে একে অপরের সাথে যোগাযোগ, মতবিনিময়, সহভাগিতার ফলে তাদের মাঝে সম্পর্কের উন্নয়ন হয়েছে, তাদের মাঝে আত্মবিশ্বাস গড়ে উঠেছে, তৈরি হয়েছে পারস্পরিক বিশ্বাস ও আস্থা। জানমা উপজেলা কমিটির সভাপতি যোগেশ দাস কলমাকান্দা, মধ্যনগর জেলেদের সাথে যোগাযোগ করে তাদের অধিকার আদায় ও সমস্যা সমাধানে কাজ করার জন্য সকলে ঐকবদ্ধভাবে কাজ করার জন্য পরামর্শ করে থাকেন। তারা সরকারের বিভিন্ন দপ্তর, কৃষি বিভাগ, কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়সহ নানান প্রতিষ্ঠানের সাথে পারস্পরিক আলাপ আলোচনার মাধ্যমে তাদের কার্যক্রমকে আরে বেগবান করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। এভাবে স্থানীয় মাছ চাষে জানমা একটি গুরুত্বপূর্ণ সংগঠন হিসেবে সকলের সামনে আত্মপ্রকাশ করছে। আর এর থেকে উদ্বুদ্ধ হচ্ছে অসংখ্য মানুষ। প্রাণ-প্রকৃতি-স্থানীয় মাছ বৈচিত্র্য সংরক্ষণে জানমা একটি আন্দোলনের নাম।

happy wheels 2