সাম্প্রতিক পোস্ট

আমাদের আজাহার ভাই

মানিকগঞ্জ থেকে এ্যাডভোকেট দীপক কুমার ঘোষ

নাম তাঁর মো: আজাহার আলী। একজন রিক্সা চালক। বয়স ৮০, বয়সের ভারে ক্লান্ত হলেও তাঁর জীবন সংগ্রাম থামেনি। পশ্চিম সেওতার বাসিন্দা। কোর্ট থেকে বাসায় ফেরার পথে রিক্সায় তাঁর সাথে কথা। আজ ৫০ বছর ধরে পৌরসভায় রিক্সা চালিয়ে জীবন সংসার চালাচ্ছেন। দুই ছেলে,এক স্ত্রী নিয়ে ছিলো তাঁর সংসার। ছেলেরা বড় হয়েছে, তাদের বিয়েও দিয়েছেন। কিন্ত দুর্ভাগ্য আজাহার ভাইয়ের ছেলেরা বিয়ের পরেই আলাদা হয়ে যায় । তাই জীবন সংগ্রাম থেকে ৮০ বছর হলেও রেহাই পেলনা, মুক্তি পেলনা, একটু বিশ্রাম পেলনা আজাহার ভাই।

নিয়তী নিষ্ঠুর কথাটা বোধহয় আজাহার ভাই’র জীবনে চরম সত্য হয়ে দেখা দিলো । যখন ৮০ বছর বয়সে নাতী-নাতনীদের নিয়ে আরাম-আয়েশে সময় কাটবে ঠিক সেই সময়ে আজাহার ভাই’র স্ত্রী রওশন আরা না ফেরার দেশে পাড়ি জমালেন। ছেলেরা তো আগেই গেছে। ছেলের বৌর হাতে রান্না করা খাবার শখ পূরণতো হয়ইনি। উপরন্তু সুখে-দুখে জড়িয়ে থাকা স্ত্রীও তাঁকে এ নিঠুর জগতে একা ফেলে চলে গেলো।

azhar-vai

আজাহার ভাই যখন রিক্সা প্রথম চালায় শহরে তখন লালন বাবু ডাকসাইটে উকিল। তখন শহরে ভাড়া লাগতো মাত্র ২ আনা। কিন্ত লালন বাবুকে কোর্ট থেকে বাসায় নিয়ে গেলে লালন বাবু দিতেন ৫ আনা। অন্য ক্ষ্যাপ বাদ দিয়ে প্রয়াত লালন বাবুর ৫ আনার জন্য বসে থাকতেন তাঁর চেম্বারের সামনে। লালন বাবুও আজাহার ভাইকে ছাড়া অন্য রিক্সায় চড়তেন না।
আজাহার ভাই মানিকগঞ্জ রিক্সা সমিতির সহ-সভাপতি ছিলেন। কখনো যাত্রীর সাথে কিম্বা পুলিশের সাথে সমস্যা হলে থানা-পুলিশ, দৌড়া-দৌড়ী আজাহার ভাই করতেন। সেই আজাহার ভাই ৮০ বছর বয়সে এখনও রিক্সার প্যাডেলে বেধেছে তার জীবন-জীবিকা। বছর পাঁচেক হলো একটি পুরনো রিক্সা কিনেছেন। সেটা চালিয়েই একাকী জীবন তরী বয়ে চলেছেন। সেওতায় বাসা ভাড়া নিয়ে থাকেন। নিজেই রান্না করে পেটের খুদা মিটিয়ে আবার জীবনের ঘানি বাইতে হয়।

জিজ্ঞাসা করেছিলাম জীবনে কোনো স্বপ্ন দেখেন কিনা? আকাশের দিকে তাকিয়ে উত্তর দিলেন মাঝরাতে মাঝে মাঝেই স্ত্রীকে স্বপ্ন দেখেন। আর ছেলেদের স্বপ্ন দেখে ঘুম ভেঙ্গে যায়। পরে আর ঘুম আসেনা। বললাম সমস্য কি? বললেন, “সমস্যা; হ্যালো বাইক আসাতে ইনকাম কমে গেছে। বাসাভাড়া দিয়ে খেয়ে পড়ে বেঁচে থাকা এখন খুব কষ্ট হয়। আগের মত পরিশ্রম করতে পারিনা।”

আজাহার ভাইদের হাতে ক্ষমতা নেই, গাড়ী-বাড়ি নেই। নেই দূর্নীতি-সন্ত্রাস কিম্বা চাটুকারিতা করে অর্থ উপার্জনের কোনো ইচ্ছে বা আগ্রহ। গতরটাকে খাটিয়ে মাথার ঘাম পায়ে ফেলে উপার্জন করে জীবন নামক বোঝাটাকে বহন করে শেষদিন পর্যন্ত এগিয়ে চলাই ইচ্ছে।

কারো দয়ায় বা দানে আজাহারদের জীবন চলেন না। শ্রম-ঘামে গড়া যে জীবন তাতে যতটুকু সুখ তাই স্বর্গসম। আজাহার ভাইকে অভিনন্দন ও সালাম। বেঁচে থাকুন আরো আরো অনেক বছর।

happy wheels 2