ধনে পাতায় ধনী মানিকগঞ্জের কৃষক করিম মিয়া

আব্দুর রাজ্জাক, মানিকগঞ্জ থেকে

মাত্র আড়াই মাসে ধনে পাতা চাষ করে খরচ বাদে দুই লাখ টাকা আয় করেছেন কৃষক আব্দুল করিম মিয়া। শুধু করিম মিয়া নন এমন প্রায় ২০-৩০ জন চাষী আগাম ধনে পাতা চাষ করে সাবলম্বী হচ্ছেন বলে জানিয়েছেন মানিকগঞ্জ জেলা কৃষি বিভাগ।
মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া উপজেলার সবচে’ বেশি সবজি চাষ হয়ে থাকে। উন্নত বীজ ও আধুনিক পদ্বতিতে এ স্বাধে গুণে ও পুষ্টিকর শীত মৌসুমী ধনে পাতা চাষকে কেন্দ্র করে বিশাল কর্মযজ্ঞ চলছে। এ ধনে পাতা মাঠ থেকে উঠিয়ে বাড়তি আয় করেছে সাটুরিয়ার অন্তত ৫ শতাধিক নারী শ্রমিক।
সরেজমিনে গিয়ে সাটুরিয়া উপজেলার ফুকুরহাটি ইউনিয়নের রাইল্লা গ্রামে দিয়ে দেখা যায়, প্রায় ২৫ পুরুষ ও নারী ক্ষেত থেকে ধনে পাতা উঠানোর কার্যক্রমে ভীষণ ব্যস্ত। এ সময় ক্ষেতের মালিক আব্দুল করিমও ব্যস্ত তাদের তদারকি করতে; যেন কথা বলার সময় নেই। তার পরও কাজ করতে করতে প্রতিবেদককে জানান, এ ধনে পাতা যা উঠাচ্ছেন এটি পরের কিস্তিতে ।

manikganj-2
চলতি মৌষুমেই আগাম ১০০ শতাংশ জমিতে ধনে পাতা চাষ করে দেড় লাখ টাকা বিক্রি করেছেন। এতে তার শতাংশ প্রতি খরচ হয়েছিল ৩০০ টাকা করে। হিসাব মতে প্রথমবার ৩০ হাজার টাকা খরচ করে ৭০ হাজার লাভ হয়েছে।
করিম মিয়া জানান, সঠিক পরিচর্যা করতে পারলে ধনে পাতার বীজ রোপণ করার ৪০-৪৫ দিন পর তা বিক্রি করার উপযোগী হয়। করিম মিয়া এখন ২য় কিস্তির ধনে পাতা ক্ষেত থেকে উঠিয়ে বিক্রি করছেন। এ কিস্তি থেকে প্রায় আরো এক লাখ টাকা বিক্রি করতে পারবেন। সব মিলিয়ে আড়াই মাস ধনে পাতা চাষ করে খরচ বাদ দিয়ে দুই লাখ টাকা আয় হবে।

এ ব্যাপারে সাটুরিয়া উপজেলা কৃষি অফিসার এমদাদুল হক জানান, সাটুরিয়ায় শুধু করিম মিয়া নন, তাঁর মত অনেক চাষীই আগাম ধনে পাতা চাষ করে লাভবান হচ্ছে। সাটুরিয়া উপজেলা কৃষি অফিসের সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. এমরাত হোসেন জানান, শুধুমাত্র সাটুরিয়া উপজেলার ফুকুরহাটি ইউনিয়নেই আগাম ধনে পাতা চাষ করছেন প্রায় ২০-৩০ জান চাষী। আর চাষীদের নিকট থেকে পাতা কিনে আড়তে বিক্রি করছেন এমন পাইকার আছে আরো ১৫-২০ জন। চাষী ও পাইকারদের ক্ষেত থেকে ধনে পাতা দৈনিক মুজুরির ভিত্তিতে উঠিয়ে বাড়তি আয় করছেন প্রায় পাচ শতাধিক নারী।

manikganj-3
এ ব্যাপারে ধনে পাতা উঠায় এমন নারী শ্রমিক আয়শা, জুলেখা বেগম বলেন, “আমরা সংসারের কাজের পাশাপাশি ধনে পাতা ক্ষেত থেকে উঠিয়ে দেই। সকাল ৭- বিকাল ৫ টা পর্যন্ত কাজ করে মুজুরি পাই ২০০ টাকা। যদিও আমার প্রাপ্য পারিশ্রমিক না পেলেও এটি আমাদের বাড়তি আয় হচ্ছে।” মানিকগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা গ্যানেশ চন্দ্র রায় বলেন, “জেলার ৭টি উপজেলায় চলতি মৌসুমে ৮৬৩ হেক্টর জমিতে ধনে পাতা চাষ হয়েছে। জেলার ৭টি উপজেলার মধ্যে মানিকগঞ্জ সদর, সিংগাইর এবং সাটুরিয়া উপজেলায় সবচে’ বেশি ধনে পাতা চাষ হয়ে থাকে।

এ ব্যাপারে মানিকগঞ্জ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. আলিমুজ্জামান মিঞা বলেন, আমাদের কর্মকর্তাদের পরামর্শের ক্রমেই জেলাতে ধনে পাতা চাষ করে কৃষকরা লাভবান হচ্ছে। জেলার বাণিজ্যিকভাবে ধনে পাতা চাষীরা নিজ ক্ষেত থেকে উঠিয়ে সরাসরি জেলার হাট-বাজার ছাড়াও ঢাকার কাওরান বাজারের আড়তে নিয়ে বিক্রি করছেন। এ ধনে পাতা কৃষকরা ছাড়াও পাইকাররা ক্ষেত থেকেও কিনে বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করছেন।

happy wheels 2