সাম্প্রতিক পোস্ট

দেলোয়ারা বেগমের বিভাগীয় জয়িতা অর্জন

সাতক্ষীরা থেকে মননজয় মন্ডল

সামাজিক কুসংস্কার ও বৈষম্যের বেড়াজাল থেকে মুক্ত হয়ে নারীরা সমাজ সংস্কারে নানা ধরনের উন্নয়ন কর্মকান্ডে অবদান রেখে চলেছেন। পুরুষের পাশাপাশি নারীরা সমাজের সকল ক্ষেত্রে যে বিশেষ ভূমিকা রেখে চলেছে তার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত শ্যামনগরের দেলোয়ারা বেগম। সমাজ সেবায় বিশেষ অবদান রাখায় তার কাজের সম্মাননাস্বরূপ পেয়েছেন বিভাগীয় জয়িতা পুরস্কার।

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর কর্তৃক ‘জয়িতা অন্বেষনে বাংলাদেশ’ এর আওতায় ৫টি ক্যাটাগরিতে সমাজ উন্নয়নে যেসকল নারীরা বিশেষ অবদান রেখে চলেছেন তাদেরকে জয়িতা সম্মাননা প্রদান করে সমগ্র নারী সমাজকে উদ্বুদ্ধ ও সচেতন করার উদ্যোগ বাস্তবায়ন করে চলেছে। সরকারি নির্ধারিত পুরস্কারের ৫টি ক্যাটাগরি/বিভাগে (অর্থনৈতিকভাবে সাফল্য অর্জনকারী নারী, শিক্ষা ক্ষেত্রে অবদান রাখার জন্য, সফল জননী, নারী নির্যাতনে অবদান ও সমাজ উন্নয়নে অবদান) আবেদন জমা নেওয়া হয় ইউনিয়ন পর্যায়ে। ইউনিয়ন বাছাই কমিটি প্রতিটি ক্যাটাগরি থেকে শ্রেষ্ঠ একজন নির্বাচন করে উপজেলা মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরে জমা দেন। এভাবে ইউনিয়ন, উপজেলা, জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ে বাছাইয়ের পর সর্বশেষ সেগুলো রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতির জন্য কেন্দ্রীয় পর্যায়ে জমা হয়। দেলোয়ারা বেগম শ্যামনগর উপজেলার সদর ইউনিয়ন থেকে সমাজ উন্নয়নে অবদান ক্যাটাগরিতে আবেদন জমা দেন। উপজেলা ও জেলা বাছাই কমিটির মাধ্যমে শ্রেষ্ঠ জয়িতা হিসেবে নির্বাচিত হন তিনি।
দেলোয়ারা বেগমের বিভাগীয় জয়িতা অর্জন। (1)
সাতক্ষীরার শ্যামনগরের গোপালপুর গ্রামের দেলোয়ারা বেগম (৪৪) সংসারের সকল কাজের পাশাপাশি নিজ গ্রাম তথা এলাকার মানুষের উন্নয়নের জন্য নিবেদিতপ্রাণ হিসেবে এলাকায় ব্যাপক পরিচিত লাভ করেছেন। মানুষের বিপদে, অসহায়ের পাশে দাঁড়ানো, অন্যায়ের প্রতিবাদসহ সমাজের সকল কুসংস্কারের বিরুদ্ধে অবস্থানের এক অতি পরিচিত নাম দেলোয়ারা বেগম। বিগত ২২ মার্চ ২০১৬ তারিখের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে শ্যামনগর সদর ইউনিয়নের ১২৩নং ওয়ার্ডের মহিলা ইউপি সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হলে সমাজ উন্নয়নে ভূমিকা বেড়ে যায় অনেকগুন। তার চার পাশের সমাজের বিধবা, স্বামী পরিত্যাক্তা, প্রবীণ, বিশেষভাবে সক্ষম ব্যক্তি, অসহায় ও দরিদ্র মানুষের পাশে থাকা ও সহযোগিতা করা তাঁর জীবনের মূলমন্ত্র হয়ে দাঁড়ায়। মূলত এই কারণে সমাজসেবায় তাঁর বিশেষ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ মিলেছে বিভাগীয় জয়িতা পুরষ্কার।
দেলোয়ারা বেগমের বিভাগীয় জয়িতা অর্জন। (2)
বিগত ৯ ডিসেম্বর ২০১৬ তারিখ আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ পক্ষ ও বেগম রোকেয়া দিবস উপলক্ষে উপজেলা ও জেলা পর্যায়ে একই সাথে জয়িতাদের মাঝে আনুষ্ঠানিকভাবে পুরস্কার তুলে দেওয়া হয়। এদিন সকালে উপজেলা ও জেলা পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ জয়িতা বিজয়ী দেলোয়ারা বেগম সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে জেলা পর্যায়ে জয়িতা পুরস্কার (সার্টিফিকেট ও ক্রেষ্ট) লাভ করেন। বিগত ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ তারিখ সকালে খুলনা অফিসার্স ক্লাবের অডিটোরিয়ামে আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ পক্ষ ও বেগম রোকেয়া দিবস উপলক্ষে বিভাগীয় পর্যায়ে বিজয়ী জয়িতাদের নিয়ে এক জমকালো অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এ সময়খুলনা বিভাগীয় ৫০ জন জয়িতাকে সম্মাননা ক্রেষ্ট, সার্টিফিকেট এবং নগদ সম্মানী অর্থ প্রদান করা হয়। বিজ্ঞ বিচারক মন্ডলীর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত মোতাবেক ৫টি ক্যাটাগরির ৫ জন নারীকে রানার্স আপ ও ৫ জন নারীকে শ্রেষ্ঠ বিজয়ী জয়িতা নির্বাচিত করা হয়। এসময় শ্যামনগর সদর উপজেলার ইউপি সদস্য মিসেস দেলোয়ারা বেগমকে সমাজ সেবায় বিশেষ অবদান রাখায় খূলনা বিভাগীয় পর্যায়ে রানার্স আপ জয়িতা পুরষ্কার ২০১৭ অর্জন করলেন। খূলনা বিভাগীয় কমিশনার মো. আব্দুস সামাদ মহোদয়ের কাছ থেকে সম্মাননা ক্রেস্ট, সার্টিফিকেট এবং নগদ সম্মানী অর্থ গ্রহণ করেন। উক্ত জয়িতা প্রদান অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন খুলনা জেলা প্রশাসক নাজমুল আহসান, সরকারি বি এল কলেজের অধ্যক্ষসহ সরকারি ও বেসরকারি অতিথিবৃন্দ।
দেলোয়ারা বেগমের বিভাগীয় জয়িতা অর্জন। (3)
উপজেলা ও জেলা পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ জয়িতা  এবং বিভাগীয় রানার্স আপ জয়িতা বিজয়ী দেলোয়ারা বেগম বলেন, “বিভাগীয় কমিশনার আব্দুস সামাদ স্যারের হাত থেকে এ পুরস্কার পাওয়ার আনন্দ কোনদিন আমি ভুলতে পারবো না। আমি মনে করি আমাদের দেশকে উন্নত করতে হলে নারী পুরুষ সবাইকে একযোগে কাজ করতে হবে, একসাথে এগিয়ে যেতে হবে।”

উপকূলীয় নারী নেত্রী দেলোয়ারা বেগম সমাজসেবায় বিশেষ অবদান রাখার জন্য উপজেলা, জেলা পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ জয়িতার পুরস্কার লাভ করেন এবং বিভাগীয় পর্যায়ে রানার্স আপ জয়িতা নির্বাচিত হয়েছেন। তার সমাজসেবায় সফলতার গল্প নারী সমাজকে উদ্বুদ্ধ ও অনুপ্রাণিত করবে।

happy wheels 2

Comments