সাম্প্রতিক পোস্ট

সাহসী প্রাণ পান্না আক্তার এর পথচলা

আটপাড়া, নেত্রকোনা থেকে রোকসানা রুমি  

শামীমা আক্তার পান্না (৩৬) একজন সাধারণ গৃহবধু। ১৯৮০ সালে নেত্রকোণা জেলার অন্তরপুর গ্রামে পান্নার জন্ম। এইচএসসি পাশ করার পর বিয়ে হয় পান্নার। ছোটবেলা থেকেই পান্না ছিলেন খুব সাহসী। স্কুল জীবন থেকে মানুষের বিভিন্ন কাজে সহযোগিতা করতে পছন্দ করতেন তিনি। সমবয়সী মেয়েদের উৎসাহিত করতেন উন্নয়নমূলক কাজে অংশগ্রহণের জন্য। গ্রামের মানুষের বিপদে আপদে সব সময় ছিলেন অগ্রগামী। কিন্তু বিয়ের পর থেকে ইচ্ছা থাকা স্বত্ত্বেও সামাজিক কাজগুলো থেকে প্রায় ৬ বছর পর্যন্ত তাকে বিরত থাকতে হয়েছে। এসময় তিনি প্রায় গৃহবন্দী ছিলেন। তবে স্বামীর উৎসাহে তিনি নেমে পড়লেন সামাজিক কাজে। তিনি যুক্ত হলেন- মানবাধিকার সংরক্ষণ পরিষদ, নারী নির্যাতন প্রতিরোধ কমিটিতে, বাল্যবিবাহ, শিশুশ্রম, শারীরিক ও মানসিক শান্তি বিষয়ক কমিটি ও স্কুল ম্যানেজিং কমিটির সাথে।
20170116_123854-W600
এ বিষয়ে পান্না আক্তার বলেন, “আমার সবচেয়ে ভালো লাগে যখন কোন বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ করতে পারি, তালাকপ্রাপ্ত নারীদের দেনমোহর আদায় করতে পারি, তালাকপ্রাপ্ত নারীর ও সন্তানের ভরণ-পোষণ আদায় করে দিতে পারি, ন্যায়বিচার এবং দরিদ্রদের আইনি সহযোগিতা নিশ্চিত করতে পারি।” তিনি আরও বলেন, “বাল্যবিবাহ বন্ধ করার পর যখন পরিস্থিতির শিকার মেয়ে শিশুটি আমার গলা জড়িয়ে ধরে কান্না করে, তখন আমি তাকে সান্তনা দিই ও সাহস দিয়ে আশ্বস্ত করি। আমি অর্থনৈতিকভাবে কাউকে সাহায্য করতে পারি না কিন্তু আমি সমাজে যথেষ্ট সম্মান পাই। আমি আমার এলাকা ছাড়াও অন্য গ্রামের হত দরিদ্র প্রায় ৫০টি নারী প্রধান পরিবারকে স্যানিটেশন (ল্যাট্রিন ও টিউবওয়েল) ব্যবস্থা করে দিয়েছি”।

পান্না আক্তার বলেন, “মেয়েরাও মানুষ, মেয়েদের ইচ্ছা থাকলে অনেক কিছুই করতে পারে। আমি মনে করি সমাজের অন্য মেয়েদেরও বিভিন্ন সামাজিক ও পারিবারিক সমস্যায় এগিয়ে আসা দরকার”। পান্না আক্তারের দু’টি সন্তান এবং দু’টিই কন্যা সন্তান, তবে কন্যা সন্তান বলে তার মনে কোন দুঃখ নেই। তার স্বামী সরকারি প্রাইমারী স্কুলের একজন শিক্ষক আর পান্না আক্তার ঐ স্কুলেরই ম্যানেজিং কমিটির সদস্য।

পান্না আক্তার একজন উদ্যোগী ও পরিবেশপ্রেমী নারী। তিনি বাড়ির চারপাশে প্রায় ১০০ জাতের ফলের ও কাঠ জাতীয় গাছ রোপণ করেছেন। তিনি বাড়ির আঙ্গিনায় বিভিন্ন জাতের সবজি চাষ করেন। সারাবছর তিনি নিজের উৎপাদিত সবজি দিয়ে পরিবারের দৈনন্দিন চাহিদা মিটিয়ে থাকেন। তিনি যেখানেই যান সেখানেই অন্যদের সাথে সবজি বীজ বিনিময় করেন এবং এ বিষয়ে আলোচনা করে নারীদেরকে উদ্বুদ্ধ করার চেষ্টা করেন। কোন গ্রামে তিনি গেলে সে গ্রামের নারীরা তাকে দেখে এগিয়ে আসেন তার সাথে আলাপ-আলোচনা করে বুদ্ধি পরামর্শ নেওয়া জন্য। পান্না আক্তার দৃঢ় প্রতিজ্ঞ, যতদিন বেঁচে থাকবেন ততদিন সমাজের মানুষের উপকারের জন্য কাজ করে যাবেন।

পান্না আক্তারের ন্যায় গ্রামের সকল নারী যদি সমাজের উন্নয়নে, পরিবেশ ও কৃষির উন্নয়নে এগিয়ে আসেন তাহলে দরিদ্র, অসহায় ও নির্যাতিত নারীরা একদিন নিশ্চয়ই সুবিচার পাবেন এবং পরিবেশ ও কৃষির উন্নয়নের মাধ্যমে সমাজে প্রতিষ্ঠিত হয়ে সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠায় অবদান রাখতে সক্ষম হবেন এবং এভাবেই নিশ্চিত হবে নারীর ক্ষমতায়ন।

happy wheels 2

Comments