নাগরিকদের নিরাপদ খাদ্য ও নিরাপত্তার জন্য রাজশাহীর তরুণদের উদ্যোগ

রাজশাহী থেকে শামীউল আলীম শাওন:

চলছে মুসলমান সম্প্রদায়ের ধর্মীয় উৎসবের মাস পবিত্র মাহে রমজান। আর সমানে আসন্ন পবিত্র ঈদুল ফিতর। অথচ এই দুই বড় উৎসবের সময় দেশের মধ্যে সড়ক, রেল, নৌ পথ দূর্ঘটনা, খাদ্যদ্রব্যে ভেজাল এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্যের দাম অসহনীয় মাত্রায় বৃদ্ধি পায়। সেই জন্য ‘পবিত্র মাহে রমজান ও ঈদুল ফিতরে সড়ক, রেল, নৌ পথ নিরাপদ এবং খাদ্যদ্রব্য ভেজালমুক্ত, নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্যের দাম সহনীয় পর্যায়ে রাখার’ দাবিতে রাজশাহীর বিভাগীয় কমিশনার নূর-উর-রহমানের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে স্মারকলিপি প্রদান করেছেন রাজশাহীর একদল তরুণ। সম্প্রতি রাজশাহীর সামাজিক সংগঠন ‘ইয়ুথ এ্যাকশন ফর সোস্যাল চেঞ্জ-ইয়্যাস’র প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক শামীউল আলীম শাওন রাজশাহীর বিভাগীয় কমিশনার নূর-উর-রহমানের হাতে এ স্মারকলিপি তুলে দেন।

সামাজিক সংগঠন ‘ইয়ুথ এ্যাকশন ফর সোস্যাল চেঞ্জ-ইয়্যাস’র প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক শামীউল আলীম শাওনের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল গত ২৮ মে রাজশাহীর বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে গিয়ে বিভাগীয় কমিশনার নূর-উর-রহমানের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। সাক্ষাৎকালে ‘পবিত্র মাহে রমজান ও ঈদুল ফিতরে সড়ক, রেল, নৌ পথ নিরাপদ এবং খাদ্যদ্রব্য ভেজালমুক্ত, নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্যের দাম সহনীয় পর্যায়ে রাখার’ দাবিতে ইস্যাসের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বরাবর লেখা স্মারকলিপিটি প্রধানমন্ত্রীর হাতে পৌঁছে দেবার জন্য বিভাগীয় কমিশনারের হাতে তুলে দেওয়া হয়। স্মারকলিপির কপি কমিশনারের হাতে তুলে দেন, ইয়্যাস’র প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক শামীউল আলীম শাওন। এসময় উপস্থিত ছিলেন, ইয়্যাস’র প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক শাহরুখ আহম্মেদ শুভ, নির্বাহী সদস্য সুমন হাওলাদার প্রমুখ।
01
স্মারকলিপির অনুলিপি সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী, রেলমন্ত্রী, নৌ পরিবহন মন্ত্রী, স্বাস্থ্যমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে ডাক যোগে পাঠনো হয়েছে। এছাড়াও রাজশাহীর জেলা প্রশাসক, রাজশাহী মহানগর পুলিশের পুলিশ কমিশনার, র‌্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব-৫), রাজশাহীর অধিনায়ক এবং রাজশাহী সিটি করপোরেশনের (রাসিক) মেয়রকেও স্মারকলিপির অনুুলিপি প্রদান করা হয়েছে।

স্মারকলিপিতে উল্লেখ করা হয়েছে যে, প্রতিবছর পবিত্র মাহে রমজান ও ঈদুল ফিতরকে কেন্দ্র করে এক শ্রেণীর অসাধু ব্যবাসায়ীরা সিন্ডিকেটের মাধ্যমে রাজশাহীসহ সমগ্র দেশব্যাপী নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোগ্যপন্যের দাম বৃদ্ধি করে। শুধু তাই নই; তারা মেয়াদ উত্তির্ণ, বাসি-পচা, ফরমালিনযুক্ত খাদ্যদ্রব্যও সুযোগ বুঝে ক্রেতা-ভোক্তাদের কাছে বিক্রি করে। এতে করে বিপাকে পতিত হন সাধারণ জনগণ (ক্রেতা-ভোক্তা)। এমনকি ভেজালযুক্ত খাদ্যদ্রব্য খেয়ে তারা রোগাক্রান্ত হয়।

আরো বলা হয়েছে যে, রমজান মাসে রাজশাহীসহ দেশের বিভিন্ন বাজারের বিপণী বিতানগুলোতে ইফতার সমগ্রী ও ঈদের কেনাকাটা করতে ভিড় করে নানা বয়সীর মানুষ। এটাকে কেন্দ্র করে বাজারের বিপণী বিতানগুলোর সামনে ও আশেপাশের এলাকার ফুটপাত, রাস্তা অবৈধভাবে দখল করে অনেকেই বসায় দোকানপাট। সবমিলিয়ে বাজারসহ আসেপাশের এলাকাগুলোর রাস্তায় সৃষ্টি হয় বাড়তি যানজট। এছাড়াও ঈদের আনন্দ প্রিয়জনদের সঙ্গে ভাগাভাগি করে নিতে নাড়ীর টানে বাড়ি ফিরে প্রচুর মানুষ। তাদের কেউ 02সড়ক, কেউ রেল, আবার কেউবা নৌপথে বাড়ি ফিরে। এতে সড়ক, রেল ও নৌ পথের যানবহনগুলোতে সৃষ্টি হয় বাড়তি চাপ। আর এ বাড়তি চাপ সামলাতে সড়ক, রেল ও নৌ পথে সংযোজন করা হয় অতিরিক্ত যানবাহন। তার পরেও যানবহনগুলোতে বহন করা হয় ধারণ ক্ষমতার অতিরিক্ত যাত্রী। এর ফলে যাত্রা পথে ঘটে অনাকাঙ্খিত দূর্ঘটনা। দূর্ঘটনায় যাত্রীসহ সড়কের সাধারণ পথচারীরা গুর”ত্বর আহত হয়। এমনকি তাদের অনেকেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। এতে ঈদের খুশি মুহুর্তের মধ্যেই পরিণত হয় দুর্ঘটনার বিষাদে।

ফিটনেসবিহীন ঝুকিঁপূর্ণ যানবহন, অদক্ষ চালকদের অবৈধ প্রতিযোগিতামূলক দ্রুতগতিতে যানবাহন পরিচালনা, ধারণ ক্ষমতার চেয়ে অধিক যাত্রী বা পণ্য পরিবহণ, ট্রাফিক আইন অমান্য করে যত্রতত্র যানবহন পার্কিং ও ওভারটেকিং, বিশ্রামবিহীন দীর্ঘপথ যানবাহন পরিচালানা, হেলপারকে দিয়ে যানবাহন পরিচালনা, ফুটপাত ও ফুটওভারব্রিজ অবৈধ দখল হওয়া এবং রাস্তায় চলাচল করার সময় পথচারীদের নিয়মতান্ত্রিকভাবে ফুটপাত, ফুটওভারব্রিজ বা জেব্রাক্রসিং ব্যাবহার না করা, নেশাগ্রস্ত অবস্থায় চালকদের যানবহন চালানো, যানবাহন চালানো অবস্থায় মোবাইল ফোন ব্যবহার প্রমুখকে সড়ক দূর্ঘটনা ঘটার কারণ হিসেবে উল্লেখ করে স্মারকলিপিতে বলা হয়েছে যে, যদিও প্রশাসন বিষয়গুলো নিয়ন্ত্রণ করার জন্য বিভিন্ন সময় নানান ধরণের পদক্ষেপ গ্রহণ করছেন। তবুও তা থেমে নেই। প্রশাসন পদক্ষেপ গ্রহণ করলে তা কিছুটা কমে, তবে তা হয় সাময়িক সময়ের জন্য। কিন্তু বিষয়গুলো নিয়ে উচ্চ পর্যায় থেকে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করার সিদ্ধান্ত নিয়ে তা যথাযথভাবে পালন করার জন্য প্রশাসনকে নির্দেশ প্রদান ও নিয়মিত মনিটরিং করলে এবং এ বিষয়গুলো নিয়ে গণসচেতনতা সৃষ্টি করতে পারলে উপরোক্ত সমস্যাগুলোর স্থায়ীভাবে সমাধান করা সম্ভব হতে পারে।

এ জন্য পবিত্র মাহে রমজান ও ঈদুল ফিতরে সড়ক, রেল, নৌ পথ নিরাপদ এবং খাদ্যদ্রব্য ভেজালমুক্ত, নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্যের দাম সহনীয় পর্যায়ে রাখাতে প্রয়োজনীয় কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করার জন্য স্মারকলিপিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে ইয়্যাসের পক্ষ থেকে দাবি জানানো হয়েছে।

happy wheels 2

Comments