জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় আঞ্চলভিত্তিক পরিকল্পনা নিতে হবে

বরেন্দ্র অঞ্চল থেকে শহিদুল ইসলাম

আমার জীবনের প্রতিটি পরতে পরতে প্রকৃতি। ছোটকাল থেকেই আমি প্রকৃতির সাথে বেড়ে উঠেছি। ঘুম থেকে জেগে উঠা, জেগে উঠে প্রকৃতির সাথেই আমার পথচলা শুরু হয়। আবার প্রকৃতির মাঝেই আমি ঘুমিয়ে পড়ি। এভাবেই আমার জীবন চলেছে। প্রকৃতির কাছে আমি ঋণী।” কথাগুলো বলছিলেন রাজশাহীর পবা উপজেলার বড়গাছি ইউনিয়নের প্রবীণ কৃষক মো. আব্দুল হক।
IMG_1100
বিশ্ব পরিবেশ দিবস ২০১৭ উপলক্ষে গতকাল বড়গাছি বিএডিসি সাব সেন্টার হল রুমে “প্রাণ ও প্রকৃতির রক্ষায় গ্রামীণ জনগণ” শীর্ষক আলোচনা সভায় উপরোক্ত বক্তব্য দেন তিনি। “প্রাণ ও প্রকৃতির সাথে আমাদের বসবাস” স্লোগানে উক্ত আলোচনা সভায় বড়গাছি ইউনিয়ন ও পবা উপজেলা থেকে কৃষক, জেলে, তাঁতী, কামার, কুমাড়, ব্যবসায়ী, শিল্পী, নাট্যকার, বাউল, সাধক, নাট্যকার, সূত্রধর, সাংবাদিক, মাঝি, জেলে, কবিরাজসহ সকল পোশার মানুষ অংশগ্রহণ করেন।

আলোচনায় বক্তারা বলেন, “জলবায়ু পরিবর্তনে বিকল্প ধারা কি তা আমাদের ভাবতে হবে। গ্রামের মানুষের সমস্যাগুলো আপাতঃ দৃষ্টিতে অনেক ছোট মনে হলেও তা আমাদের বৃহৎ উন্নয়নের অন্যতম অংশ। তাই জলবায়ু পরিবর্তনে শুধু বড় বড় পরিকল্পনা করলেই হবে না। গ্রামের মানুষের ছোট ছোট সমস্যার দিকগুলো অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে দেখতে হবে।” তারা আরও বলেন, “জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় অঞ্চলভেদে পরিকল্পনা এবং প্রয়োগও হতে হবে আলাদা। জলবায়ু পরিবর্তনে বাংলাদেশের সব এলাকাগুলোকে একভাবে দেখলে ফলাফল আশানুরূপ হবার সম্ভাবনা একেবারেই কম।” অংশগ্রহণকারীগণ বরেন্দ্র অঞ্চলের খরা, শীত ও গরমের তারতম্যের দিকগুলোসহ পানি সংকটের দিকগুলো বিবেচনায় প্রকল্প এবং সকল কর্মসূচি নেবার দাবি করেন। এসডিজির গোল অর্জন করতে হলে অঞ্চলভিত্তিক সমস্যাগুলো অনেক বেশি গুরুত্ব দিতে হবে।
IMG_1103
এছাড়াও আলোচনা সভায় বিভিন্ন পেশার ও শ্রেণীর মানুষ জলবায়ু পরিবর্তনে তাদের সমস্যা ও গৃহীত উদ্যোগগুলো নিয়ে আলোচনা করেন। বড়গাছি কৃষক ঐক্যের সদস্য মো. জব্বার মিয়া বলেন, “সেই প্রাচীনকাল থেকে বীজ আমাদের মা, আমাদের দেশীয় বীজ আমাদের টিকিয়ে রেখেছে।” তিনি আরও বলেন, “কতো বীজ আসে (কোম্পানির), কতো বীজ যায়, আমাদের  বীজের মতো সহ্য (স্থানীয় আবহাওয়া ও পরিবেশ সহনশীল) করার মতো  বীজ আর পাইনা। আমরা এখন বীজ সংরক্ষণ করি। নিজেরা বীজ বিনিময় করি। প্রকৃতি সংরক্ষণ করি। প্রকৃতি ও বীজ আমার মা, তাকে রক্ষা করা আমাদের দায়িত্ব।”

নাট্য ব্যক্তিত্ব মো. মজিবুর রহমান বলেন, “প্রকৃতির সাথে সংস্কৃতির সম্পর্ক সৃষ্টি থেকেই। সংস্কৃতি আমদের মননশীলতা শেখায়। এই সংস্কৃতি চর্চা যতো প্রসার পাবে ততো প্রকৃতির প্রতি মানুষের মায়া বাড়বে। সংস্কৃতি চর্চা ব্যতীত স্থায়িত্বশীল উন্নয়ন কখনোই আশা করা যায় না। আমরা সংস্কৃতির ভেতর দিয়েই প্রকৃতি ও পরিবেশ রক্ষার লড়াই করে যাচ্ছি।” বড়গাছি লোক সাহিত্য পরিষদের আহবায়ক রায়হান জুয়েল বলেন, “আমরা প্রকৃতি ও পরিবেশ রক্ষায় এ পর্যন্ত চারবার গম্ভীরার আয়োজন করেছি। হাজার হাজার লোক প্রকৃতি ও পরিবেশ রক্ষায় সচেতনতা বাড়ছে।”
IMG_1120
বড়গাছি কৃষক ঐক্যেও সভাপতি ও চারবার রাষ্ট্রীয় কৃষি পদক প্রাপ্ত মো. রহিম উদ্দিন বলেন, “নানা ভাবেই আমাদের পরিবেশ ধ্বংস করা হচ্ছে। আমাদের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া ঐতিহ্যবাহী বারনাই নদী আজ মৃত প্রায়। হাজার হাজার মাঝি, জেলে আজ পেশাহীন হয়ে পড়েছে। শহরের দূষিত পানি ঢুকে যাবার ফলে নদী পানি দুষণ হয়ে যাচ্ছে। রোগবালাই বেড়ে গেছে।” বড়গাছি  কৃষক ঐক্যের নারী  সদস্য মোছা. রহিমা বেগম বলেন, “জলবায়ু পরিবর্তনে এবং প্রাকৃতিক পরিবেশ বিনষ্টের কারণে নারীদের সমস্যা আরো বেড়ে গেছে। অতিরিক্ত গরমের কারণে নারীদের বেশি রোগবালাই হচ্ছে। চর্মরোগ অনেক বেড়ে গেছে। মেয়েরা বন্ধ্যাত্ব হয়ে যাচ্ছে।”

আলোচনায় মাধবপুর আদর্শ নারী সংগঠনের সভাপতি মোছা. মনিরা বেগম বলেন, “আমরা থেমে নেই। পরিবর্তনের সাথে মোকাবেলা করে টিকিয়ে থাকার চেষ্টা করছি। কিন্তুৃ এই টিকিয়ে থাকাই সব কিছু নয়। জলবায়ু পরিবর্তনের জন্যে যারা বেশি দায়ি তাদের এই ক্ষতি পূরণ দিতে হবে।”

happy wheels 2

Comments