সাম্প্রতিক পোস্ট

আমাদের ধান ভালো আছে

রাজশাহী থেকে অমৃত সরকার

DSC01116বরেন্দ্র অঞ্চলের কৃষকদের কাছে ধান মৌসুম হিসেবে আমন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এ মৌসুমে ফলন ভালো হয় পাশাপাশি সেচ হিসেবে বৃষ্টির পানিই ব্যবহৃত হয়। সেক্ষেত্রে ধানের উৎপাৎন খরচ কমে আসে। তাই কৃষকদের চিন্তায় থাকে আমন ধান ভালোভাবে ঘরে তোলার বিষয়ে।
তবে বিগত কিছু বছরে দেখা যাচ্ছে যে, আমন মৌসুমের ধানে থোর হওয়ার আগের পর্যায়ে ব্যাপক আকারে পচন,মাজরা পোকা ও কারেন্ট পোকার আক্রমণ। এই আক্রমণে কৃষকরা হয়ে পরে দিশেহারা। ধান রক্ষা করতে কীটনাশকের দোকানে যোগাযোগ করতে হয় নিয়মিত। কৃষকের বাকির খাতাও হয় লম্বা। ধানের উৎপাদন খরচ বেড়ে যায়। চলতি বছরেও এই পোকার আক্রমণ লক্ষ করা যাচ্ছে ব্যাপক আকারে। এই নিয়ে স্থানীয় পত্রিকায় ছাপা হয় কৃষকের দূরবস্থার খবর ও ছবি। কৃষি অফিস এ সময় ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকে রক্ষা করতে বিভিন্ন সচেতনতামূলক কার্যক্রম বাস্তবায়নে।

DSC01087
চলতি আমন মৌসুমে রাজশাহী জেলার তানোর উপজেলার দুবইল গ্রামে বারসিক ও বরেন্দ্র কৃষক বীজ বিনিময় ব্যাংকের যৌথ উদ্যোগে মোট ৫২ শতাংশ জমিতে ৪৮টি স্থানীয় জাতের চাষ করেন কৃষকরা। কৃষকরা মিলিত হয়ে দেখছেন কোন জাত নিজেদের এলাকায় ভালো ফলাফল দেয়। আমন চাষের শুরুতে জমি নির্বাচন ও জাত সংগ্রহের পর সংগঠনের সদস্যরা মিলে সিদ্ধান্ত নেন যেহেতু এটা একটি পরীক্ষা তাই এখানে কোন প্রকার রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ব্যবহার করা হবে না। এ বিষয়ে দুবইল গ্রামের কৃসক মো. মূজাহারুল ইসলাম(৫২) বলেন, “আমরা নিজেদের মধ্য আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিই যে, আমরা পরীক্ষাধীন জমিতে শতাংশে কেজি হারে ভার্মি কম্পোষ্ট সার ব্যবহার করব। সে মোতাবেক প্রথম চাষের সময় ১০৪ কেজি ভামি কম্পোষ্ট সার প্রয়োগ করে জমি প্রস্তুত করি।”
বর্তমানে ধানের অবস্থা সম্পর্কে গ্রামের অপর এক কৃষক ও সাবেক মেম্বার মো. জাহিদুল ইসলাম(৪৮) বলেন, “বর্তমানে ধান দেখে আমাদের খুবই ভালো লাগছে কারণ এ পর্যন্তও কোন সার, বিষ ব্যবহার না করেও ধান অনেক ভালো আছে। আগামীতেও আমরা এই জমিতে কোন সার, বিষ ব্যবহার করব না।” তিনি আরো বলেন, “এই ধানের জমি এবং ধান নিয়ে আমাদের গ্রামের পাশাপাশি অন্য গ্রামের কৃষকরাও আলোচনা করছে যে এখানে কোন পদ্ধতিতে চাষ হয়েছে যে কোন ধরনের পোকার আক্রমণ হয়নি।”

DSC01113
জমিতে পুরো চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে কার্যক্রমের সাথে প্রত্যক্ষভাবে সম্পৃক্ত কৃষক মো. লিয়াকত আলী (৩৬) বলেন, “আমরা প্রথম চাষের সময় ১০৪ কেজি ভার্মি কম্পোস্ট সার প্রয়োগ করে জমি প্রস্তুত করি। এরপর চারা লাগানোর সময় খেয়াল রাখি যেন প্রতিটি জাতের মাঝে একটু ফাঁকা জায়গা রাখতে। কারণ সেখান দিয়ে বাতাস চলাচল করবে এবং আমাদের পরিচর্যাও করতে সুবিধা হবে।” তিনি আরও বলেন, “এরপর চারা লাগানোর ১৯দিনের মাথায় জমি পানি শূন্য করে ৭দিন রেখে দিই। এরপর পুনরায় বৃষ্টির পানিতে জমি পূর্ণ হয়ে যায়। এভাবে আবারো ১১ দিনের মাথায় জমি পানিশূন্য করে দিই। এবার ৪দিন পানি শূণ্য অবস্থায় রেখে পুনরায় জমিতে বৃষ্টির পানি ধরে রাখি।”

দুবইল গ্রামের কৃষকদের বর্তমান কার্যক্রম ও ধানের বর্তমান অবস্থা বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, “একসাথে অনেক জাত ও ধানগুলো লাইনে রোপণ করার জন্যই এখানে কোন পোকার আক্রমণ হয়নি। পাশাপাশি জাতগুলোর সতন্ত্র বৈশিষ্ট্যের কারণেও এখানে রোগ পোকা তেমন হচ্ছে না। আবার কীটনাশক না প্রয়োগ করার কারণে আমাদের জমিতে অনেক ব্যাঙ আসে সেগুলোও অনেক পোকা খেয়ে ফেলছে।”

এক জমিতে বারবার একই জাতের ধান চাষ করার জন্য নিয়মিতভাবে রোগ পোকার আক্রমণে কৃষকরা বারংবার ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। আবার কোন কোন কৃষকরে নিজস্ব কার্যক্রমের মাধ্যমে নিজেরাই খুঁজে নিচ্ছেন সমাধানের পথ। দুবইল গ্রামের কৃষকদের এই উদ্যোগ আগামীতে সফল হবে এ বিশ্বাসই আশা দেখাচ্ছে গ্রামের সকল কৃষকদের ।

happy wheels 2

Comments