পাখা মেলেছে তালবীজগুলো

রাজশাহী থেকে জাহিদ আলী:
ভোগৗলিক কারণেই বরেন্দ্রভুমি রুক্ষ ও শুষ্ক। এই রুক্ষ এবং শুষ্কতার জন্য এই এলাকার গাছেরও রয়েছে সুনির্দিষ্ট ধরণ। যে গাছগুলো কম পানি শোষণ করে এবং এই এলাকার পরিবেশ উপযোগি সেই গাছই বেশি ছিল। এই গাছগুলোর মধ্যে তালগাছ ছিলো অন্যতম। এর ফল, রস, পাতা কিংবা গাছ কোন অংশই ফেলনা নয়। তাইতো এই এলাকার কৃষি এবং জীবনাচারণে বিভিন্নভাবে তালগাছ সম্পৃক্ত। কিন্তু আমাদের বাণিজ্যিক কৃষি এবং নগদ অর্থের লোভে এই তালগাছগুলো প্রতিস্থাপিত হয় বিভিন্ন পরিবেশ বিধ্বংসী এবং পানি শোষণকারী গাছে। ফলে ধীরে ধীরে কমে গেছে এই এলাকার প্রতিবেশ এবং মানুষের অন্যতম বন্ধু তালগাছ। এর প্রভাব দুইভাবে পড়েছে এই এলাকা প্রতিবেশে একদিকে ভূগর্ভস্থ পানি কমে গেছে। অন্যদিকে বর্ষা ঋতুতে বজ্রপাতের পরিমাণ বেড়েছে। বেড়েছে বজ্রপাতে ক্ষয়ক্ষতি এবং মানুষের মৃত্যুর সংখ্যাও। তাই পরিবেশের ভারসাম্যের জন্য এলাকা উপযোগী তালগাছ পূনরায় প্রতিস্থানের প্রয়োজন।

ইউপি চেয়ারম্যান ও স্ট_্যান্ডিং কমিটির সদস্য_ারা তালবীঝ রোপন করছেন 20_16এই সংকটের গুরুত্ব অনুধাবন করে গত বছর তিলিবাড়ী ওয়ার্ড ওয়াচ গ্রুপের সদস্যরা তাদের এলাকায় তালবীজ রোপণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। গ্রুপটি তাদের কাজের সাথে ইউনিয়ন পরিষদ ও পরিবেশ উন্নয়ন পরিবেশ সংরক্ষণ ও বৃক্ষ রোপণ বিষয়ক স্ট্যান্ডিং কমিটিকে যুক্ত করে। পরবর্তীতে তিলিবাড়ী থেকে শিয়ালাগ্রাম পর্যন্ত এক কিলোমিটারব্যাপী তাল গাছ রোপণের জন্য এক হাজার তালবীজ সংগ্রহ করার চেষ্টা করে সংগঠনের সদস্য এবং এলাকার শিক্ষার্থীরা বিপুল উৎসাহে আট শ’টি তালবীজ সংগ্রহ করেন। তালবীজ সংগ্রহের পর গোগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও পরিবেশ সম্পর্কিত স্ট্যান্ডিং কমিটির সদস্যদের উপস্থিতিতে ৬ সেপ্টেম্বর ২০১৬ তিলিবাড়ী গ্রামের রাস্তায় তালবীজ রোপণ এর উদ্ভোধন করা হয়। ওয়ার্ড ওয়াচ গ্রুপের সদস্যরা তিলিবাড়ী হতে শিয়ালা পর্যন্ত এক কিলোমিটার ব্যাপী ৮০০ তালবীজের রোপণ করেন।

তাল বীজের বর্তমান অবস_্থা 2017এক বছরের ব্যবধানে রোপণকৃত তালবীজগুলো অঙ্কুরিত হয়ে প্রায় দেড় থেকে দুই ফুট চারা গাছে পরিণত হয়েছে। ওয়ার্ড ওয়াচ গ্রুপের সদস্যার নিয়মিত এই গাছগুলো পর্যবেক্ষণ করেন। ওয়াচ গ্রুপের সম্পাদক গোলাম কিবরিয়া নয়ন জানান “আমাদের রোপণকৃত তালবীজগুলো পাখা মেলেছে।” তিনি আরো জানান, “তিলিবাড়ী গ্রাম থেকে শিবপুর গ্রাম পর্যন্ত রোপণকৃত গাছের প্রায় আশি ভাগ গাছ এখন মাথাতুলে দাঁড়িয়ে আছে”। গোগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের পরিবেশ উন্নয়ন পরিবেশ সংরক্ষণ ও বৃক্ষ রোপণ বিষয়ক স্ট্যান্ডিং কমিটির সদস্য সুধীর চন্দ্র ওঁরাও জানান, “গত বছর এই রাস্তায় যে গাছগুলো লাগানো হয়েছে সেগুলো এখন মডেল হিসাবে কাজ করছে। এই বছরও আমাদের অন্য রাস্তায় এই গাছ লাগানো হচ্ছে”। গোগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মুজিবর রহমান বলেন, “তালগাছ বড় হতে একটু সময় লাগে, তবে সঠিক পরিচর্যা করে গাছগুলো বড় করতে পারলে এই এলাকায় মানুষ বজ্রপাত থেকে রক্ষা পাবে”।

আমাদের দেশে যে সব প্রাকৃতিক দুর্যোগ দেখা দেয় তার মধ্যে কিছুর আগাম পূর্বাভাস পাওয়া যায়। কিন্তু এমন কিছু দূর্যোগ আছে- যা সম্পর্কে আগে থেকে পূর্বাভাস পাওয়া যায় না। এই ধরনের দূর্যোগের মধ্যে বজ্রপাত অন্যতম। বজ্রপাতের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে সবচেয়ে উঁচু যে বস্তুটি পায় তাকে আকর্ষণ করা। সেই হিসাবে তাল গাছ উঁচু হওয়ায় তালগাছ এই বজ্রপাত নিরোধে বড় ভুমিকা পালন করে থাকে। তাল গাছের সংখ্যা বৃদ্ধি ও এর সুষ্ঠু রক্ষনাবেক্ষণই পারে বজ্রপাতের মত আকষ্মিক দূর্যোগের হাত থেকে আমাদের রক্ষা করতে।

happy wheels 2

Comments