মঠবাড়িয়ার ১১টি ইউনিয়ন বীজাগার পরিত্যাক্ত!

দেবদাস মজুমদার, বিশেষ প্রতিনিধি,উপকূলীয় অঞ্চল :

পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ায় দুর্যোগ মৌসুমে কৃষি বীজ সংকট মোকাবেলায় উন্নত মানের বীজ সংরক্ষণ ও কৃষকের কৃষিতথ্য সরবরাহের লক্ষ্যে গড়ে তোলা হয়েছিল ইউনিয়ন বীজাগার। উপজেলার ১১ ইউনিয়নে গড়ে তোলা ১১টি বীজাগার দীর্ঘ তিন যুগেরও বেশি সময় ধরে পরিত্যাক্ত হয়ে পড়ে আছে। উপজেলার ১১টি বীজকেন্দ্রগুলোর বেহাল দশার দশার কারনে বীজাগার কৃষি ও কৃষকের উন্নয়নে কোন কাজে লাগছেনা। এসব বীজাগারের পাকা অবকাঠামোগুলোর এখন চরম ভগ্নদশাসহ বীজাগারের কার্যত কোন কার্যক্রমই নেই। ফলে কৃষি পরিসেবার এমন একটি জন গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রমের বেহাল দশায় কৃষকরাও হতাশ।

devdas-pic-seed-1
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, স্বাধীনতা আগে ও স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে ইউনিয়ন পর্যায় কৃষি সম্প্রসারণে এসব বীজাগার গড়ে তোলা হয়। ওই কেন্দ্রে বীজ সুরক্ষা,কৃষি তথ্য সেবার পাশাপাশি প্রতিটি ইউনিয়নে একজন উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তার অফিস ও আবাসনের লক্ষ্য নিয়ে এটি গড়ে উঠেছিল। যাতে কৃষক কৃষি পরিসেবা সুবিধা তাঁর দোরগোড়ায় পান।

কিন্তু নানা সংকটে এগুলো এখন পুরোপুরি অকার্যকর হয়ে পড়েছে। মঠবাড়িয়ার ১১টি বীজ কেন্দ্রগুলো কার্যত দুই যুগেরও বেশি সময় ধরে অচল। প্রধান সমস্যা স্থাপনাগুলো অতি পূরাতন হয়ে ধসে পড়ার উপক্রম। সেখানে বীজ সংরক্ষণ, কৃষি প্রযুক্তি সুরক্ষা ও কৃষি বিভাগের কোন দাপ্তরিক কার্যক্রম একদমই চলছেনা।

মঠবাড়িয়ার ১১টি বীজকেন্দ্রের মধ্যে মঠবাড়িয়া সদর,তুষখালী ইউনিয়নের বীজাগার বেহাল দশা,বড়মাছুয়া ইউনিয়ন বীজাগারটি মাছুয়া বাজার সংলগ্ন খালের পাড়ে গড়ে তোলায় সেটি পাশ্ববর্তী খালের ভাঙনে বিপন্ন। সেখানেও কোন কার্যক্রম চলছেনা। বেতমোর বাজার, আমড়াগাছিয়া ইউনিয়ন পরিষদ সংলগ্ন বীজাগরটি ঘিরে আছে জঙ্গলে। এছাড়া সাপলেজা, টিকিকাটা, দাউদখালী ও গুলিসাখালী ইউনিয়ন পরিষদ সংলগ্ন বীজাগারগুলোর বেহাল দশা। এ্গুলো দুইযুগ ধরে পরিত্যাক্ত। দীর্ঘদিনেও সংস্কার কিংবা বীজ কেন্দ্রগুলোর কোন কার্যক্রম নেই।
মঠবাড়িয়ার উত্তর সোনালী গ্রামের সফল কৃষক মো. জয়নাল আবেদীন বলেন, এক সময় ইউনিয়ন বীজাগার হতে কৃষকরা আপদকালীন সময়ে মানসম্মত বীজ সংগ্রহ করতেন। এছাড়া এসব বীজকেন্দ্র হতে কৃষকরা কৃষি বিষয়ে নানা পরামর্শ সুবিধাও পেতেন।” তিনি আরও বলেন, “বর্তমানে বীজ কেন্দ্রগুলোর কোন কার্যক্রম আর নেই। অথচ কৃষির উন্নয়নে বীজাগার খুব দরকারি। ইউনিয়ন বীজাগারগুলো চালু করলে কৃষি ও কৃষকের লাভ হবে।”

devdas-pic-seed-2

এ বিষয়ে উপজেলার মিরুখালী ও দাউদখালী কৃষি ব্লকের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. জামাল হোসেন বলেন, “সারাদেশে ইউনিয়ন পর্যায় বীজ সংরক্ষণ ও কৃষি তথ্য সেবার পাশাপাশি উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের আবাসনের জন্যই সীড হাউসগুলো গড়ে তোলা হয়েছিল। সংস্কার ও কার্যক্রম না থাকায় এগুলো পরিত্যাক্ত হয়ে পড়ে আছে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. মনিরুজ্জামান বলেন, “কৃষি ও কৃষকের স্বার্থে গড়ে তোলা এসব বীজাগারগুলোর অবকাঠামো কয়েকযুগ ধরে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে এখন পরিত্যাক্ত। জনগুরুত্বপূর্ণ এ অবকাঠামোসহ কার্যক্রমের বাস্তব অবস্থা উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাতে উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তাকে প্রধান করে তিন সদস্যের বীজাগার সংরক্ষণ কমিটি গঠন করা হয়েছে। ওই কমিটি বীজাগার গুলো পরিদর্শণ করে প্রতিবেদন দেওয়ার পর বীজাগারগুলো কার্যকর করতে সংশিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট সুপারীশমালা পাঠানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

happy wheels 2

Comments