উড়ালমন ম্যানগ্রোভ ভিলেজ

:: বারসিক শ্যামনগর, সাতক্ষীরা থেকে মননজয় মন্ডল

Untনুনিনুনিুitledগত কয়েকবছর ধরেই “Beautiful Bangladesh” শ্লোগানকে উপস্থাপন করে বিভিন্ন প্রামাণ্য চলচ্চিত্র নির্মাণের এবং প্রচারের উদ্দেশ্য বাংলাদেশে পর্যটন শিল্পের বিকাশ ঘটানো। এরই ধারাবাহিকতায় ২০১৬ সালকে পর্যটন বর্ষ হিসেবে ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ সরকার। কেবলমাত্র পর্যটন শিল্পকে বাণিজ্যিকভাবে প্রাধান্য দিয়ে উন্নতি করেছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ। সেই পথকে অনুসরণ করেই বাংলাদেশও পর্যটন শিল্পকে এবং বাংলাদেশে পর্যটন শিল্পের সম্ভাবনাকে বিশ্ববাসীর সামনে তুলে ধরতে উদ্যোগী হয়েছে।

ঠিক সেইসময়ই দাঁতিনাখালী গ্রামের মুন্ডা পাড়ায় স্থানীয় আদিবাসী মুন্ডা যুবকেরা গড়ে তুলেছেন ইকো-ট্যুরিজম সেন্টার। ‘দাঁতিনাখালী উড়ালমন ম্যানগ্রোভ ভিলেজ’ নাম দিয়ে পথ চলতে শুরু করে এই উদ্যোগ। দাঁতিনাখালী গ্রামটি সাতক্ষীরা জেলার শ্যামনগর উপজেলার বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়ন এর অন্তর্ভূক্ত।

ঘটনার শুরু এ বছরই। একই উপজেলার পার্শবর্তী গ্রাম কালিঞ্চিতে একটি এনজিওর সহযোগিতায় তৈরি ইকো ট্যুরিজম সেন্টার এ বছরই দেখতে যান দাঁতিনাখালি গ্রামের মুন্ডা পাড়ার স্থানীয় আদিবাসী মুন্ডা যুবকেরা। কালিঞ্চি গ্রামের ইকো ট্যুরিজম সেন্টার তাঁদেরকে অনুপ্রাণিত করে। এই অনুপ্রেরণা স্বপ্নীল এই যুবকদের স্বপ্নের পালে হাওয়া দেয়। তবে স্বপ্ন শুধু স্বপ্ন হয়েই থাকেনি, বাস্তবে এসে ধরা দিয়েছে নিজেরা একটি ইকো ট্যুরিজম সেন্টার করার উদ্যোগ গ্রহণ করার মধ্য দিয়ে। আর সেই স্বপ্নের গাঁথুনী শক্ত করতে নিজেরা বিভিন্ন সময়ে আলোচনা ও পরামর্শ করেছেন বিভিন্ন সমস্যা ও করণীয় বিষয়ে। অবশেষে তৈরি হয় তাঁদের ইকো ট্যুরিজম সেন্টার।

পৃথিবীর একক বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবনের কোলঘেঁষা মুন্ডা পল্লীর সামনে চুনা নদীর চরে ম্যানগ্রোভ ভিলেজটি তৈরি করা হয়। নদীর ওপারে সুন্দরবন আর এপারে নদীর চরে মাটি ভরাট করে তৈরি করা হয় ম্যানগ্রোভ ভিলেজ। নদীর চরে আদিবাসী জনগোষ্ঠীর সন্তানদের পড়ালেখার জন্য একটি প্রাক-প্রাথমিক বিদ্যালয়ও স্থাপন করা হয়েছে। এ স্কুল মাঠের সামনে গোলপাতার তৈরি বসার ঘর। মাটি ভরাট করে চার পাশ গরানের বেড়া, দর্শনীয় গেট নির্মাণ, গোলঘর, নদীতে নামার সিঁড়ি, বাঁশের টোং ঘর, মাটির রাস্তা নির্মাণ, ভ্রমণ ও রাত্রিযাপনের নৌকা, পরিছন্ন মাটির ঘর, সুসজ্জিত ফুলের বাগান, চরে সবুজ বন, বড় উঠান, পুকুর এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান কেন্দ্র প্রভৃতি রয়েছে এই উড়ালমন ম্যানগ্রোভ গ্রামে।

আদিবাসী প্রদীপ মুন্ডা, নারায়ন মুন্ডা, খগেন মুন্ডা, আব্দুল গনি সানা, মফিদুল মোড়ল এর অক্লান্ত পরিশ্রমে এগিয়ে চলেছে নিজেদের ম্যানগ্রোভ ভিলেজ। ইকো কটেজটি তৈরি হলে এখানে দেশী বিদেশী পর্যটকদের সমাগম ঘটবে বলে তাঁদের বিশ্বাস। আর তাহলে সেখান থেকে স্থানীয়দের নতুন কিছু আর্থিক আয়ের পথও তৈরি হবে নিশ্চিতভাবেই। কর্মসংস্থান হবে অনেক মানুষের। স্বপ্নবাজ তরুণ মন তাই স্বপ্ন দেখে একদিন দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক উন্নয়নে দাঁতিনাখালী উড়ালমন ম্যানগ্রোভ ভিলেজ’ গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে।

Untনুনিনুনিুitৃুরledম্যনগ্রোভ ভিলেজ তৈরির একজন উদ্যোক্তা উপজেলা সামাজিক বনায়নের ফরেষ্টার পিরামিন ইসহাক বলেন,“আমাদের দাঁতিনাখালী মুন্ডা পাড়ার একদল উদ্যোগী মানুষের আপ্রান প্রচেষ্টায় আমরা এই পরিবেশ তৈরি করেছি। নিজেদের মধ্য থেকে অর্থ সংগ্রহ করে চরের মাটি ভরাট করে গোলপাতার ঘর, বসার জায়গা, ফুলের বাগান, পুকুর, চার পাশে ম্যানগ্রোভ বনায়ন প্রভৃতি মনোরম দৃশ্য ও প্রাকৃতিক পরিবেশ তৈরি করেছি।”

তিনি আরও বলেন, “ম্যানগ্রোভ ভিলেজ তৈরির পাশাপাশি স্থানীয় আদিবাসী মুন্ডা সম্প্রদায়ের নিজস্ব ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিকে টিকিয়ে রাখার জন্য গড়ে তুলেছেন একটি সাংস্কৃতিক দল। নিজেদের ছেলেমেয়েদের নিয়ে গড়ে তোলা সাংস্কৃতিক টিম সামাজিক সমস্যা ও সমাধানের বিভিন্ন পথ নাটক ও গান পরিবেশন করে দর্শকদের মনোরঞ্জন করেন। দাঁতিনাখালী উড়ালমন ম্যানগ্রোভ ভিলেজে আসা অতিথি ও দর্শনার্থীবৃন্দ আদিবাসীদের লোকজ সংস্কৃতির জনপ্রিয় ঝুমের গান, খ্যামটা গান, শোরের গান, পুজোর গান এবং দলীয় নৃত্যের মাধ্যমে মুন্ডা সম্প্রদায়ের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিকে দেখতে পাবে”।

ম্যানগ্রোভ ভিলেজের সভাপতি প্রদীপ মুন্ডা বলেন,“আমাদের দেশে বিশেষ করে শীতকালে প্রচুর পরিমাণে দেশী বিদেশী পর্যটক সুন্দরবন ভ্রমণে আসেন। তারা একবারে প্রকৃতির সাথে থাকার পাশাপাশি কম খরচে সুন্দরবন ভ্রমণ করার সুযোগও পাবে আমাদের এখান থেকে।” তিনি আরও বলেন, “সুন্দরবন তথা প্রকৃতির নির্মল ও স্নিগ্ধ পরিবেশের সাথে থেকে সুন্দরবন দর্শনের সুযোগ পাবে অতিথিবৃন্দ। পরিচ্ছন্ন ইকো কটেজে রাত্রি যাপন, স্থানীয় খাবার ব্যবস্থ্য ও ভ্রমণের জন্য নৌকার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। তিনি বলেন আমাদের “দাঁতিনাখালী উড়ালমন ম্যানগ্রোভ ভিলেজ’ তৈরির কার্যক্রমকে সহজতর করার জন্য সরকারি/বেসরকারী সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি পেয়েছি।”

বাংলাদেশের পৃথিবী বিখ্যাত সুন্দরবন ভ্রমণের জন্য স্থানীয় আদিবাসীদের তৈরি ম্যানগ্রোভ ভিলেজ একটি যুগান্তকারী উদ্যোগ। সুন্দরবনের তীরে বসে নির্মল পরিবেশে অনাবিল মন্ত্র-মুগ্ধতায় আচ্ছন্ন হয়ে থাকার পাশাপাশি স্বাছন্দে সুন্দরবন ভ্রমণ করতে পারেবে দর্শনার্থীবৃন্দ। সুন্দরবন প্রতিবেশবান্ধব এই উদ্যোগ সরকারি ও বেসরকারি সহযোগিতা পেলে প্রকৃতিনির্ভর মুন্ডাদের জীবনযাত্রায় ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে বলে এলাকাবাসী অভিমত ব্যক্ত করেন।

happy wheels 2

Comments