ফসল উৎপাদনে জৈব বালাইনাশক ব্যবহার করি

সাতক্ষীরা থেকে মননজয় মন্ডল

কৃষিতে ব্যাপক রাসায়নিক কীটনাশকের ব্যবহারের ফলে পরিবেশ ও স্বাস্থ্য চরম হুমকির মধ্যে রয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের এ বিশ্বে পরিবেশ যখন বিপর্যস্ত হতে চলেছে, প্রয়োজনীয় খাবারের জন্য তখন বিশ্বব্যাপী এক পরিবেশবান্ধব কৃষির দিকে অগ্রসর হয়েছে। জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর এবং প্রাণবৈচিত্র্যের হুমকি থেকে রক্ষার জন্য রাসায়নিক কীটনাশকের পরিবর্তে জৈব কীটনাশকের ব্যবহারের মাত্রা দিনকে দিন বেড়ে চলেছে। উপকূলীয় সাতক্ষীরার অনেক কৃষক কৃষাণী রাসায়নিক কীটনাশকের পরিবর্তে জৈব কীটনাশকের দিকে অগ্রসর হয়েছেন।

Exif_JPEG_420

সাতক্ষীরার শ্যামনগরের কৃষক নজরুল ইসলাম, সিরাজুল ইসলাম, দিলীপ তরফদার, ফরিদা পারভীন ও অল্পনা রানীসহ অনেক কৃষিজীবী পরিবার জৈব কীটনাশকের মাধ্যমে কৃষি কাজ অব্যাহত রেখেছেন। কৃষিতে সফলতা অর্জনকারী কৃষাণী অল্পনা রানী জৈব কীটনাশক ব্যবহার করে তাঁর সমন্বিত কৃষি খামার টিকিয়ে রেখেছেন। অল্পনা রানীর কৃষিবাড়িতে ২০ রকমের কুড়িয়ে পাওয়া সবজি, প্রায় শতাধিক প্রজাতির ঔষধি উদ্ভিদবৈচিত্র্য, ৫২ প্রজাতির ফলজ বৃক্ষ, শোভাবর্ধনকারী ১৩ প্রজাতি এবং ২৯ প্রজাতির দেশীয় বিলুপ্তপ্রায় এবং ১০ প্রজাতির মসলা জাতীয় উদ্ভিদবৈচিত্র্য সংরক্ষণ করে রেখেছেন।

এসকল বৈচিত্র্য সম্ভার সংরক্ষণে রাসায়নিকের পরিবর্তে নিজ হাতে তৈরি কীটনাশক ব্যবহার করেন। বছরব্যাপী বৈচিত্র্যময় ফসল চাষাবাদেও তিনি জৈব বালাইনাশক ব্যবহার করেন। নিমপাতা সেদ্ধ পানি, মেহগনি ফলের রস, তামাক ভিজানো পানি, গুল, ছাই, সাবান পানি প্রভৃতি লোকায়ত পদ্ধতির আলোকে কীটনাশক তৈরি করে ব্যবহার করেন। জৈব কীটনাশকের পরিবর্তে রাসায়নিক ব্যবহারের সুবিধা বা উপকার অনেক বেশি বলে জানালেন অল্পনা রানী। জৈব কীটনাশক তৈরি বা ব্যবহারে খরচ খুবই সামান্য এবং এটা স্বাস্থ্যসম্মত ও পরিবেশবান্ধব। অপরদিকে রাসায়নিক বালাইনাশক ব্যবহারে খরচ বেশি জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। এক এক ধরনের ক্ষতিকর পোকা দমনের জন্য ভিন্ন রকমের পদ্ধতি ব্যবহার করে থাকেন। একই সাথে সেক্স ফেরামন ফাঁদ ব্যবহারের মাধ্যমে বেগুন চাষ করেন। জৈব বালাইনাশক তৈরীর নিয়ম ও ব্যবহার বিধি বিষয়ে স্থানীয়দের মাঝে প্রশিক্ষণ প্রদানসহ উদ্বুদ্ধকরণে ভূমিকা রেখে চলেছেন অল্পনা রানী।

Exif_JPEG_420

Exif_JPEG_420

জৈব বালাইনাশক ব্যবহার বিষয় সম্পর্কে বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পদক প্রাপ্ত কৃষাণী অল্পনা রানী মিস্ত্রী বলেন, “আমি এখন কৃষি কাজে জৈব বালাইনাশক ব্যবহার করি। নিজে বিষ খেতে চাই না অন্যকেও বিষ খাওয়াইতে চাই না। নানা ধরনের জৈব বালাইনাশকের ব্যবহার করি এবং অন্যদের প্রশিক্ষণ প্রদান করি।”

জৈব কীটনাশকের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে মুক্তি পেতে বর্তমান সময়ের অনেক কৃষিজীবী পরিবার কৃষি কাজে নিজস্ব লোকায়ত পদ্ধতির আলোকে জৈব বালাইনাশক ব্যবহার করে থাকেন। জৈব বালাইনাশক ব্যবহারের মাধ্যমে একদিকে যেমন কৃষি ও কৃষকের উন্নয়ন সাধিত হয় অপরদিকে তেমনি পরিবেশ সুরিক্ষত থাকে।

happy wheels 2

Comments