কৃষি প্রাণবৈচিত্র্য সুরক্ষায় জন উদ্যোগ

কৃষি প্রাণবৈচিত্র্য সুরক্ষায় জন উদ্যোগ

শ্যামনগর, সাতক্ষীরা থেকে মফিজুর রহমান

জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে সবচেয়ে ঝুঁকিতে রয়েছে বাংলাদেশের দক্ষিণ পশ্চিম উপকূলীয় অঞ্চল। লবণাক্ততা ও অপরিকল্পিতভাবে লবণ পানির চিংড়ি চাষে উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষকে প্রতিনিয়ত নানা সংগ্রাম করে টিকে থাকতে হচ্ছে। সর্বত্র লবণাক্ততার কারণে কাজ হারিয়ে বেকার হয়ে পড়ছে হাজার হাজার কৃষক। তারপরও টিকে থাকার জন্য অব্যাহত সংগ্রাম করছে সাতক্ষীরার শ্যামনগরের মুন্সীগঞ্জের স্থানীয় কৃষকরা। আর ঠিক এমনই একটি উদ্যোগ মুন্সীগঞ্জ ইউনিয়নের পূর্বধানখালী খাল খনন। লবণাক্ততার হাত থেকে কৃষি জমি বাঁচিয়ে পূর্বধানখালী খালের পানি সেচ দিয়ে ৩০ একরের অধিক কৃষি জমিতে বোরো ধান চাষের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে স্থানীয় কৃষকরা। যদিও খালটির দিকে লোলুপ দৃষ্টি পড়েছে প্রভাবশালীদের।

পূর্বধানখালী খালের দৈর্ঘ্য ১০৫০ ফুট। মুন্সীগঞ্জ মৌজার ১নং খতিয়ানের (জে এল নং ৮১) ১৮২৬ দাগে ১৯৯৮ সালের মে মাসে স্থানীয় কৃষকরা নিজস্ব উদ্যোগে খালটি পুনঃখনন করেন। এই এলাকার কৃষক প্রাণ কৃষ্ণ মন্ডল, ভূষণ মন্ডল, মৃত অভয়চরণ মন্ডলের নেতৃত্বে ৩২ জন কৃষক দিন রাত খেটে ৩ ফুট গভীর ও ৪০ ফুট চওড়া করে খালটি পুনঃখনন করে।

SAM_9421

কৃষক স্বপন কুমার হালদার বলেন, “২০০১ সালে এলাকায় খরা দেখা দেয়। তখন এই খালের পানি দিয়ে এলাকার কৃষকরা কিছু ফসল ঘরে তুলতে পেরেছিল। এছাড়া খালের পাড়ে সবজি ও পারিবারিক সবজি চাষ করে এলাকার কৃষকরা জীবিকা নির্বাহ করতো। ২০০৯ সালে ২৫ মে আইলা হওয়ার পর খালের পানি কৃষি কাজে ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়ে। অতিবৃষ্টি ও লবণাক্ততার কারণে ২ বছর এলাকার কৃষকরা কোন ফসল উৎপাদন করতে পারেনি। এতে আইলার পরবর্তী সময়ে কাজের অভাবে অনেকেই এলাকা ছেড়েছে, সুন্দরবনে বাঘের মুখে পড়েছে, শহরে ইট ভাটায় কাজ নিয়েছে, বাড়ি-ঘর ছেড়ে অন্যত্র রিকশা চালাচ্ছে।” তিনি আরও বলেন, “এলাকার কৃষিজমিতে ফসল উপাদন সম্ভব হলে, মানুষকে কাজের জন্য বাইরে যেতে হতো না। ঠিক সেই সময়ের মতো কৃষকরা আবার খালের পানি দিয়ে কৃষি কাজ শুরু করেছে। ২০১৬ সালে এই খালের পানি ব্যবহার করে আমন মৌসুমে শতাধিক কৃষক প্রায় ১০০ একর জমিতে লবণ সহনশীল বিভিন্ন জাতের ধান উৎপাদন করে।”

তিনি জানান, ২০ একর জমিতে রোরো মৌসুমে ধান, আলু, রসুন, পেঁয়াজ, সরিষা, ডাল প্রভৃতি ফসল উৎপাদন করেছে। ২০১৭ সালের আমন মৌসুমে খালের পাড়ে সবজী চাষ ও পানিতে মাছ চাষ করে অনেকেই স্বাবলম্বী হয়েছে। আর এখন প্রায় ৩০ একরের অধিক কৃষি জমিতে বোরো ধান চাষের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কিন্তু খালটির দিকে চোখ পড়েছে স্থানীয় প্রভাবশালী ভূমি দখলকারীদের। নানাভাবে খালটি দখলে নেওয়ার চেষ্টা করছে তারা। খালটি যাতে কেউ দখলে নিতে না পারে সেজন্য তিনি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।

শ্যামনগর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মো. কামারুজ্জামান বলেন, “যেসব এলাকায় কৃষি জমির সাথে জলাভূমি যুক্ত, সেই এলাকায় কৃষকের অধিকারের বিষয় গুরুত্ব দেওয়া হবে। ইতোমধ্যে সরকারিভাবে ৩০টি খাল দখল মুক্ত করে পুনঃখননের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।”

happy wheels 2

Comments