উপকূলে সুপারি মন্দা

:: দেবদাস মজুমদার, বিশেষ প্রতিনিধি, উপকূল অঞ্চল

devdas-pic-1সুপারি আপদকালীন মৌসুমী ফসল। ধান, পান, সুপারি নিয়ে বিখ্যাত উপকূলীয় পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া, কাউখালী ও ভান্ডারিয়া জনপদ। স্থানীয় কৃষিপণ্যের বাণিজ্যিক প্রসারতায় মঠবাড়িয়া, কাউখালী ও ভান্ডারিয়ার সুপারি দক্ষিণ উপকূলে অন্যতম। এখানে সুপারি আবাদের ঐতিহ্য ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছে এলাকার সুপারি চাষীরা। ফলে অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ এখানকার সুপারি। ফলে এখানে সুপারি বাজারজাত ব্যবস্থাপনার সাথে গড়ে উঠছে বাণিজ্যিক বাজার। উপকূলের সমৃদ্ধ জনজীবনে বিশেষ গুরুত্ব পাচ্ছে সুপারি। পরিকল্পিত আবাদে সুপারি এখন একটি লাভজনক পণ্য হিসেবেই অর্থনৈতিক সমৃদ্ধ ফসল। তবে এবার সুপারির মৌসুমে বাম্পার ফলন হলেও চাষীরা ন্যায্য দাম পাচ্ছেন না। বিদেশি সুপারির আমদানিতে স্থানীয় বাজার দখল করায় দেশী সুপারির দাম ক্রমশঃ নিম্নমুখী। সুপারির ন্যায্য মূল্য না পাওয়ায় চাষীরা আর্থিক ক্ষতিতে হতাশ হয়ে পড়েছেন। মঠবাড়িয়া, কাউখালী ও ভান্ডারিয়ার প্রত্যন্ত অঞ্চলে কৃষকরা বাণিজ্যিকভাবে সুপারির আবাদ করে আসছেন। এবার আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় ফলন ভালো হলেও স্থানীয় সুপারির বাজারে চলছে মন্দা।

কৃষকরা জানান, কালের বিবর্তনে দেশী জাতের অনেক ধান, পান হারিয়ে গেলেও লাভজনক কৃষিপণ্য হিসেবে স্থান পেয়েছে সুপারি। পিরোজপুরের কাউখালী উপজেলায় ব্যাপক হারে সুপারির চাষ হচ্ছে। শুধু কাউখালী নয় উপকূলজুড়েই এবার সুপারির আশানুরূপ ফলন হয়েছে। ফলন ভালো হলেও এবার সুপারির দাম বেশ চড়া। সুপারি বিক্রি করে এবার ভালো দাম পাচ্ছেন উপকূলের চাষীরা। আপদকালীন সময়ে সুপারি বিক্রি করে সংসারের চাহিদা মিটছে অনেক কৃষকের। সুপারির চাষ লাাভজনক হওয়ায় অনেকেই এখন সুপারির পরিকল্পিত আবাদে আগ্রহী হয়ে উঠেছে।

উপকূলে প্রতি সপ্তাহে কোটি কোটি টাকার পাকা ও শুকনো সুপারি কেনাবেচা হয়। দেশী সুপারির অন্যতম উৎপাদনকারী এলাকা হিসেবে দক্ষিণাঞ্চলের মঠবাড়িয়া,ভান্ডারিয়া ও কাউখালী জনপদ সুপরিচিত। বর্তমানে দেশে উৎপাদিত সুপারির বড় অংশ এখানে উৎপাদিত হয়। ফলে এখানে গড়ে উঠছে সুপারির বাণিজ্যিক বাজার। পাইকারী ক্রেতারা এখান হতেই সুপারি কিনে অন্যত্র চালান করে থাকেন।

devdas-pic-2মঠবাড়িয়ার বড় মাছুয়া ইউনিয়নের খেঁজুর বাড়িয়া গ্রামের সুপারি চাষী বিরেন সিকদার জানান, বিদেশী সুপারির আমদানীর কারণেই দেশী সুপারিতে ধস নামছে। স্থানীয় বাজারে সুপারির দাম কমে যাওয়ায় সুপারি চাষীরা হতাশ। কাউখালী উপজেলা উপ-সহকারী কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা অপূর্ব লাল সরকার বলেন, “এবার আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় সুপারির ফলন ভালো হয়েছে। চাষীদের পরিশ্রম, কৃষি বিভাগের পরামর্শ ও অনুকূল আবহাওয়ার কারণে এবার বেড়েছে ফলন।” কাউখালির সুপারি ব্যবসায়ী মো. সেলিম মিয়া জানান, শুকনো সুপারি সাধারণত ফাল্গুন মাস থেকে বিক্রি শুরু হয় তা আষাঢ় মাস পর্যন্ত চলে এবং শ্রাবণ মাস থেকে কাঁচা সুপারি অগ্রহায়ণ মাস পর্যন্ত চলে। এ সময়ে কৃষকদের হাতে কোন টাকা-পয়সা থাকে না। তাছাড়া এ সময় কৃষকরা বোরো, গমসহ রবিশস্য চাষে ব্যস্ত থাকে। গাছের সুপারি বিক্রি করে পরিবারের দৈনন্দিন চাহিদা মিটিয়ে কৃষিকাজে লাগাতে পারেন সুপারি বিক্রির টাকা।

দক্ষিণাঞ্চলের প্রত্যন্ত উপজেলা থেকে ব্যবসায়ীরা সুপারী নিয়ে বিক্রির জন্য কাউখালী শহরে গড়ে উঠা বিরাট সুপারির হাটে সোমবার ও শুক্রবার আসেন । এছাড়া কাউখালীর গাজিরহুলা, চৌরাস্তা, তালুকদারহাট, মিয়ারহাট, ধাবড়ী, নতুনবাজার, কেউন্দিয়াসহ ১০/১২টি ছোট বড় হাটে সুপারি কেনা-বেচা হয়। এসব হাটে সারাবছরই সুপারি কেনাবেচা চলে।

কাউখালীর সুপারির আড়ৎদার মো. আলমগীর হোসেন বলেন, প্রতিবছর এই মৌসুমে বিভিন্ন হাট থেকে সুপারি কিনে মজুদ করে থাকি। শুকিয়ে ও পানিতে ভিজিয়ে সুপারি সংরক্ষণ করা হয়। পরে তা দেশের বিভিন্ন স্থানের পাইকারি ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করা হয়। এবার অনেকটাই পানির দরে সুপারি ক্রয় বিক্রয় হচ্ছে।”

মঠবাড়িয়ার সুপারি আড়ৎদার মো. ফারুক মৃধা জানান, বিদেশী সুপারির আমদানি বন্ধ না হলে দেশী সুপারির বাজারে ধ্বস নামবে। তিনি আরও জানান, দেশী সুপারি প্রতি কুড়ি ১৬০ ধেকে ১৭০ টাকা দরে বিক্রয় হচ্ছে। গত মৌসুমের তুলনায় সুপারির বর্তমান বাজার দর অর্ধেকের কম। এতে উপকূলের চাষীরা আর্থিকভাবে মারাত্মক ক্ষতির মুখে পড়েছেন। বিদেশী সুপারির আমদানি কমিয়ে না দিলে দেশী সুপারি নিয়ে কৃষকরা বিপাকে পড়বেন।

মঠবাড়িয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সুব্রত কান্তি দত্ত জানান, এবার উপকূলে আশানুরূপ সুপারির ফলন হলেও বিদেশী সুপারির আমদানিতে দেশী সুপারির বাজারে মন্দার প্রভাব পড়েছে। স্থানীয় সুপারির দাম কমতির দিকে। ফলে চাষীরা সুপারির ন্যায্যমূল্য পাচ্ছে না।

happy wheels 2

Comments