খলিশা ফুল সুন্দরবনের আশীর্বাদ

খলিশা ফুল সুন্দরবনের আশীর্বাদ

সাতক্ষীরা থেকে নুরুল হুদা

খলিশা ফুল। বিশ্বের সর্ববৃহৎ ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবন মধুর স্বর্গরাজ্য। সুন্দরবনে যেসব গাছ হয় তার মধ্যে, খলিশা, গড়ান, কেওড়া, বাইন গাছে ফুল ধরে। এর মধ্যে সবচেয়ে দামী ফুল খলিশা ফুল। এ ফুলের মধুর দাম ও সব থেকে বেশি।

হানিপ্লান্ট হিসেবে খলিশা গাছের বেশ কদর সুন্দরবনে। গুল্ম জাতীয় এই বৃক্ষ মার্চ-এপ্রিলে যখন ফুলে ফুলে ভরে ওঠে। মৌমাছিরা তখন সেই ফুল থেকে মধু সংগ্রহ করে গাছে গাছে চাক বাঁধে। সুন্দরবনের খলিশা মধু বিখ্যাত ও উন্নত মানের। জ্বালানিসহ বিভিন্ন কাজে খলিশা গাছ ব্যবহৃত হয়। খলিশা গাছ সুন্দরবনের পশ্চিম বন বিভাগের সাতক্ষীরা রেঞ্জে বেশি পাওয়া যায়। খলিশা ফুলের মধু একমাত্র সুন্দরবনেই হয়। দেশের সেরা এ ফুলের মধু এখন দুর্লভ।

20180427_095611

খলিশা ফুলের মধু সুন্দরবনের আশীর্বাদ। এই ফুলের নির্জাস সংগ্রহ করে মৌমাছি। লতা জাতীয় এক প্রকার গাছের ফুল দিয়ে শুরু হয় সুন্দরবনের ফুল ফোটা। এরপর খলিশা ফুলে ছেয়ে যায় সুন্দরবন। ঠিক ওই সময়ে যে মধু সংগ্রহ হয় তাই খলিশার মধু।

একটা নির্দিষ্ট সময়ে ফুল ফোটা, মৌচাক তৈরি ও মধু সংগ্রহ সব এক সাথে চলতে থাকে সুন্দরবনে। সুন্দরবনে ফুল ফোটার নির্দিষ্ট সময়ের বিভিন্ন পর্যায়ে ফোটে লতা, খলিশা ও গরানের ফুল। কখনো লতা ও খলিশা, আবার কখনো শুধু খলিশা ফুলে ছেয়ে যায় গোটা সুন্দরবন। এই ফুলগুলোর শেষের দিকে গরানের শেষ সময়ে আসে কেওরা, বাইনসহ আরো কিছু ফুল। এই ভাবে ফুলের আসা যাওয়ার প্রাকৃতিক নিয়ম অনুসারে সুন্দরবন থেকে প্রায় পাচ রকম মধু পাওয়া যায়। এর মধ্যে খলিশা ফুল স্বল্প স্থায়ী হওয়ায় এর দাম তুলনামূলক বেশি।

20180427_095619

এই ফুল ফোটাফুটির মধ্যকার কয়েকটা দিনই কেবলমাত্র খলিশার দিন। মোহনীয় এই দিনগুলোতে শুধু খলিশায় ছেয়ে থাকে চারদিক, অন্যকোন গাছে অন্য কোন ফুল থাকেনা তখন। আর সেই ফুলের নির্জাস জমে যে মধু হয় সেটাই খলিশা ফুলের অরিজিনাল মধু। এই মধু সংগ্রহ করা হয় বিভিন্ন হিসাব মিলিয়ে, প্রকৃতির বৈশিষ্ট্যকে মাথায় রেখে। দিনের হিসাব কাজে লাগিয়ে দক্ষ মৌয়ালরা এক চাক থেকে মধু সংগ্রহ করে এক পাত্রে রাখেন।

কিন্তু বাণিজ্যের প্রয়োজন আর অতি চাহিদার কারণে এগুলোকে আলাদা করে বিক্রি বা সংরক্ষণ কোনটাই সম্ভব হয়না মৌয়ালদের পক্ষে। স্থানীয় ভোক্তা আর নির্দিষ্ট ক্রেতার কাছেই মধু দিতে বাধ্য থাকেন তারা।

20180427_095648

গবেষক পাভেল পার্থ তার ‘সুন্দরবনের মধু আহরণ ও প্রাণ বৈচিত্র্য সংরক্ষণ’ লেখায় লিখেছেন, “সুন্দরবনের সরগরম মধু মৌসুম চলে চৈত্র থেকে বৈশাখ পর্যন্ত। এসময় খলিশার মধু বেশি পাওয়া যায়। তারপর গেওয়ার মধু এবং পরবর্তীতে বাইন, কেওড়ার মধু পাওয়া যায়। আগে মহাজন থেকে লালগেতি ধান নিয়ে এক একটি মৌয়াল দল মধু কাটতে যেত তারপর সব মধু এনে মহাজনের জিম্মায় দিয়ে দিতে হত। মহাজন তাদের নৌকা, বাড়ির খরচ এবং মধুর কিছু দাম দিয়ে দিতেন। ১৯৭৫ সনে এক কেজি মধুর দাম ছিল ৩৯ টাকা, ১৯৮৫ সনে ৭০ টাকা, বর্তমানে মৌয়ালরা প্রতি কেজি খলিশার মধু ১২০-১৫০ টাকা করে বিক্রয় করলেও স্থানীয় ব্যবসায়ীরা এক কেজি মধু ৩০০ টাকা করে বিক্রয় করেন”।

খলিশা ফুলের মধু পেটের অসুখের জন্যে অত্যন্ত ভালো কাজ করে। বিশেষ করে বাচ্চাদের পেটের অসুখের জন্যে। খুব তরল এবং অত্যন্ত সুস্বাদু আর দারুণ ঘ্রাণ খলিশা ফুলের মধুর। এক কথায় সুন্দর বনের আশীর্বাদ খলিশা ফুলের মধু।

happy wheels 2

Comments