দক্ষ সাইকেল মেকার কাশেম

দক্ষ সাইকেল মেকার কাশেম

ভাঙ্গুড়া, পাবনা থেকে মো. মনিরুজ্জামান ফারুক

সেই ১৯৬৮ সালের কথা। পিতার স্বপ্ন ছিল আদরের সন্তান বড় হয়ে একজন আলেম হবেন। মানুষকে ইসলামের পথে আহবান করবেন। তাই পড়ালেখার জন্য ছেলেকে ভর্তি করে ছিলেন স্থানীয় এক মাদরাসায়। কিন্তু না। দারিদ্রতার কারণে পিতার সে স্বপ্ন পূরণ হয়নি। স্কুলের গন্ডি না পেরুতেই শুরু হয় জীবন-জীবিকার যুদ্ধ। সংসারে অভাব-অনটনের কারণে অষ্টম শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় সাইকেল মেরামতের কাজে লেগে পড়তে হয় ছেলেকে। তারপর থেকে আর স্কুলে যাওয়া হয়নি।

Photo Bhangoora Pabna-13-5-2018(1)

নাম তাঁর তারিকুল ইসলাম কাশেম । বয়স ৬২ বছর। তিনি পাবনার ভাঙ্গুড়া পৌরসভার চৌবাড়ীয়া মধ্যপাড়ার মৃত লইমুদ্দিন খানের ছেলে। এলাকার সবাই তাকে এখন ‘কাশেম মেকার’ হিসেবে চিনেন। জীবন-জীবিকার তাগিদে যিনি দীর্ঘ ৪৫ বছর ধরে সাইকেল মেরামতের পেশা আঁকড়ে ধরে রেখেছেন। ভাঙ্গুড়া পৌর শহরের শরৎনগর বাজার জিগাতলায় একটি ভাড়া করা দোকানে ভ্যান, রিক্সা, বাইসাইকেল মেরামতের কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছেন তিনি।

তাঁর সাথে কথা এ প্রতিবেদকের। তিনি জানান, তার জীবন যুদ্ধের গল্প। তিনি বলেন, “সাইকেল মেকার হওয়ার কথা ছিল না আমার। পড়া-লেখা শিখে পিতার লালিত স্বপ্ন পূরণ করতে চেয়ে ছিলাম। কিন্তু জীবন যুদ্ধে পরাজিত হয়ে আমি এখন সাইকেল মেকার ! অবশ্য এ জন্য আমার কোন দুঃখ নেই।” তিনি আরও বলেন, “আল্লাহ আমাকে অনেক ভালো রেখেছেন। এ বয়সেও শরীরে বড় ধরণের কোন অসুখ নাই। চোখে দেখতেও কোন সমস্যা হয় না। প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বাইসাইকেল ও ভ্যান গাড়ি মেরামত করে যা আয় হয় তা দিয়ে তার সংসার চলে কোন মতো।” তার ২ ছেলে ও ১ মেয়ে। একমাত্র মেয়েটিকে বিয়ে দিয়ে দিয়েছেন।

Photo Bhangoora Pabna-13-5-2018(3)

তিনি জানান, সে সময়কার নামকরা মেকার শ্রী হরেন্দ্রনাথ তার উস্তাদ। তার কাছেই তিনি এ কাজ শেখেন। এরপর একটি ঘর ভাড়া করে নিজেই কাজ শুরু করে দেন। দেখতে দেখতে পেরিয়ে গেছে দীর্ঘ ৪৫ বছর। এক সাথে কাজ শিখেছেন এমন কেউই আর দুনিয়াতে বেঁচে নেই। তিনিই এলাকার প্রবীণ সাইকেল মেকার । তার কাছ থেকে অনেকেই এ কাজ শিখেছেন। তার অনেক শিষ্যই আজ এ কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে চলেছেন।

উপজেলার ভবানীপুর গ্রামের স্কুল ছাত্র রুহুল আমিন জানান, কাশেম মেকারের কাছে তার বাইসাইকেল মেরামত করিয়ে থাকেন । তিনি একজন দক্ষ সাইকেল মেকার। সাইকেল মেরামতকারী কাশেম’র বক্তব্য, তিন পুরুষের সাইকেল মেরামত করে আসছেন তিনি । শরীর ভালো থাকলে এ পেশাই আঁকড়ে ধরে থাকবেন তিনি।

happy wheels 2

Comments