আহত মেছো বাঘটিকে বাঁচিয়ে রাখার উদ্যোগ নিন
দেবদাস মজুমদার, বিশেষ প্রতিনিধি, উপকূল অঞ্চল
এক জোড়া মেছো বাঘ গ্রামের বনে বাঁদারে ঘুরতে দেখেছে গ্রামবাসী। প্রাণি দুটি এক সঙ্গেই চলা ফেরা আর শিকার করত। এ নিয়ে কারও কারও মনে বাঘ আতংকও ছিল। মেছোবাঘ দুটি লোকালয়ে এসে খাদ্য সংকটে পড়ে। গত দুই মাস আগে এক গৃহস্থের ছাগল শিকার করেতে এসে গ্রামবাসীর পিটুনিতে মারা পড়ে একটি মেছোবাঘ । এরপর থেকে অপর মেছোবাঘটি নিঃসঙ্গ হয়ে পড়ে। ক্ষুধাকাতর নিঃসঙ্গ মেছো বাঘটিও গ্রামবাসীর হাতে আটক হয়। এক কৃষকের খোয়ারের হাঁস শিকার করার সময় গ্রামবাসী মেছো বাঘটিকে আটক করে। পিরোজপুরের ভান্ডারিয়ার ধাওয়া ইউনিয়নের পশারীবুনীয়া গ্রামে স্থানীয় জনতার হাতে আটক ওই মেছোবাঘটি খুলনা সেনা ক্যাম্পের সদস্যরা আহত অবস্থায় উদ্ধার করেছে।
গত বৃহস্পতিবার (২১ জানুয়ারি) দুপুরে খুলনার জাহানাবাদ সেনা ক্যাম্পের ওয়ারেন্ট কর্মকর্তা আবদুস শরীফের নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি সেনা দল ভান্ডারিয়া উপজেলার পশারীবুনীয়া গ্রামের কৃষক দেলোয়ার হোসেন নান্নার বাড়ি থেকে আহত মেছো বাঘটিকে উদ্ধার করা হয়। খবর পেয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ রুহুল কুদ্দুস ও সেনা সদস্যরা মিলে আশংকাজনক অবস্থায় মেছো বাঘটিকে উদ্ধার করে ভান্ডারিয়া প্রাণি সম্পদ কার্যালয় হাসপাতালে ভর্তি করেছে।
স্থানীয়দের সূত্রে জানা গেছে, গত ২০ জানুয়ারি দুপরে উপজেলার পশারীবুনীয় গ্রামের কৃষক দেলোয়ার হোসেনের গৃহপালিত হাঁস শিকারের চেষ্টা করছিল মেছোবাঘটি। গৃহস্থ বিষয়টি নজরে আসলে তিনি প্রতিবেশীদের ডাক-চিৎকার দেয়। এরপর স্থানীয় একদল জনতা মিলে মেছোবাঘটিকে তাড়া করে। একপর্যায়ে ক্ষুধাকাতর বাঘটিকে জনতা আটক করে। এসময় মেছোবাঘটি কিছুটা পিটুনির শিকার হলে বাঘটি নেতিয়ে পড়ে। তবে সে প্রাণে বেঁচে যায়। ওই কৃষক বাঘটিকে শিকলে বেঁধে রাখে। স্থানীয় এক স্কুলের শিক্ষক জাহিদ হোসেন মেছোবাঘটিকে বাঁচানোর উদ্যোগ নেন। তিনি খুলনা সেনা ক্যাম্পে কর্মরত তার এক নিকট আত্মীয়কে মেছোবাঘ আটকের বিষয়টি জানান। গত ২১ জানুয়ারি দুপুরে তিন সদস্যবিশিষ্ট সেনা দল ভান্ডারিয়া এসে বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে অবহিত করে তাকে সঙ্গে নিয়ে ঘটনাস্থল হতে শিকলে বাধা মেছোবাঘটি উদ্ধার করে উপজেলা প্রাণিসম্পদ হাসপাতালে ভর্তি করে।
পশারীবুনীয়া গ্রামের শিক্ষক মো. মজিবুর রহমান জানান, গত তিনমাস আগে গ্রামের এক জোড়া মেছো বাঘের আনা গোণা নজরে পড়ে গ্রামবাসীর। সাড়ে তিন ফিট লম্বা মেছো বাঘ দুটিকে নিয়ে কিছু মানুষের মনে ভিতিকর অবস্থা চলছিল। দুই মাস আগে এক গৃহস্থের ছাগল শিকার করতে এসে গ্রামবাসীর পিটুনিতে একটি মেছো বাঘ মারা পড়ে। বুধবার দুপুরে হাঁস শিকার করতে এসে অপর মেছে বাঘটিকে জনতা আটক করে। ভান্ডারিয়া উপজেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, পিরোজপুর জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. আব্দুল আলীম অসুস্থ মেছোবাঘটিকে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রেখে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সেবা দিচ্ছেন। কর্তব্যরত চিকিৎসক জানান, মেছো বাঘটি অসচেতন মানুষের তাড়া ও লাঠিপেটা খেয়ে আহত হয়েছে। এছাড়া সে অনেকটাই খাদ্যহীন। ক্ষুধাকাতর মেছোবাঘটিকে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা ও খাবার দিয়ে সুস্থ করার চেষ্টা চলছে।
এ বিষয়ে খুলনা সেনা ক্যাম্পের ওয়ারেন্ট অফিসার মো. আব্দুস শরীফ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, তারা খবর পেয়ে মেছো বাঘটিকে উদ্ধার করতে আসেন। বাঘটি বাঁচানো গেলে এটি খুলনা সেনা ক্যাম্পের নিজস্ব চিড়িয়াখানায় সুরক্ষার উদ্যোগ নেওয়া হবে। তবে এজন্য বন বিভাগের অনুমতির প্রয়োজন। বিষয়টি খুলনা বন বিভাগকে অবহিত করা হয়েছে। তবে বন বিভাগ চাইলে এটিকে সুস্থ করে গহীন বনে অবমুক্তও করতে পারেন। এ বিষয়ে ভান্ডারিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ রুহুল কুদ্দুস মেছো বাঘ উদ্ধারের সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, “গ্রামবাসীর হাতে আটক বাঘটিকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। মেছো বাঘটি আমাদের জীব বৈচিত্র্যের অংশ। অসুস্থ মেছোবাঘটি সুস্থ হয়ে উঠলে বন বিভাগের উদ্যোগে এটি সেনা চিড়িয়াখানায় সুরক্ষা অথবা অভয়ারণ্যে অবমুক্ত করা হবে।”