সম্প্রীতির জন্য সংস্কৃতি
নেত্রকোনা থেকে রোখসানা রুমি
গ্রামের নাম নগুয়া। নেত্রকোনা জেলার কেন্দুয়া উপজেলা অবস্থিত গ্রামটি। এই গ্রামেই শাপলা শালুক কৃষাণী নামে নারীদের একটি সংগঠন রয়েছে। ২০ সদস্যবিশিষ্ট এ সংগঠনটি গ্রামের সার্বিক উন্নয়নে নানান উদ্যোগ গ্রহণ করেছে স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে। অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য আয়বর্ধনমূলক কাজের পাশাপাশি সমাজে স্থিতিশীলতা, শান্তি এবং প্রগতি আনায়নে সংগঠনটির সদস্যরা নানান সামাজিক ও সাংস্কৃতিক উদ্যোগও নিয়েছেন। সংগঠনের কয়েকজন সদস্য জানান গ্রামীণ সংস্কৃতি ও খেলাধুলা বা উৎসবগুলো আজ হারিয়ে যাচ্ছে চর্চার অভাবে। এসব উৎসব ও অনুষ্ঠান হারিয়ে যাওয়ার ফলে মানুষের মধ্যে আদান-প্রদানও কমে গেছে। ফলে সমাজে সংঘাত, অশান্তি ও হানাহানি বেড়ে গেছে। সংগঠনের সদস্যরা গত তিন বছর ধরেই তাই গ্রামের মানুষের মধ্যে দ্বন্দ্ব ও হানাহানি কমিয়ে আনার লক্ষ্যে বিভিন্ন ধরনের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, গ্রামীণ ঐতিহ্যবাহী উৎসব ও খেলাধুলা আয়োজনের উদ্যোগ নিয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি নগুয়া গ্রামে আয়োজন করা হয়েছে দিনব্যাপী খেলাধুলা, পিঠা উৎসব, কুইজসহ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। দিনব্যাপী এ অনুষ্ঠানটি উদ্বোধন করেন গ্রামের প্রবীণ নারী রোকেয়া বেগম। গ্রামের কয়েকশত নারী, প্রবীণ, শিশু অনুষ্ঠানটিতে অংশগ্রহণ করেন।
এমন অভিনব উদ্যোগ গ্রহণ প্রসঙ্গে গ্রামের প্রবীণ কৃষাণী জাহানারা বলেন, “আমাদের মাঝে এভাবে অনুষ্ঠানগুলো চালু রাখলে নিজেদের মাঝে আদান প্রদান থাকে; আমাদের সম্পর্কও ভালো থাকবে।” দিনব্যাপী অনুষ্ঠানে পিঠা উৎসবে অংশ নেন সখিনা, জামেনা, রিদনা, জাহানারা, রোকেয়া ও দিলজোরা। তারা তৈরি করেন তেলের পিঠা, গুলিপিঠা, পুলিপিঠা, কেকপিঠা,ডানা পিঠা, চিতুই পিঠা, চ্যাপা পিঠা, করকরিয়া পিঠা, ঝিনুক পিঠা, চিরাভাজা, খেজুরী, পাপড়া পিঠা, পাপড়া পিঠা, কাটাপিঠা, ফুলপিঠা, ঝালিপিঠা, কলাপিঠা, ভাপা পিঠা, দুধচিতই। এসব পিঠাগুলোকে তারা প্রদর্শন করেন এবং মানুষের ভেতরে বিতরণ করেন। এছাড়া অনুষ্ঠানে শিলুক দেন দিলজোরা আক্তার। গ্রামীণ নারীরা বিয়ের এসব শিলুক আনন্দের সাথে উত্তর দিয়ে আনন্দ উপভোগ করেন। কুইজ প্রতিযোগিতায় কুড়িয়ে পাওযা খাদ্যর নাম,স্থানীয় জাতের ধানের নাম, ঔষধি গাছের নাম, মাছের নাম, ফলের নাম জানার জন্য প্রশ্ন করা হয়। গ্রামের কৃষাণীরা তা মনে করার চেষ্টা করেন এবং উত্তর দেন। অনুষ্ঠান শেষে সবাই মিলে পিঠা খাওয়া ও পুরস্কার করা হয়।
গ্রামের সার্বিক উন্নয়নের জন্য এখনও কাজ করে যাচ্ছেন এ সংগঠনের সদস্য সখিনা আক্তার, রোকেয়া আক্তার, জাহানারাসহ আরও অন্য সদস্যরা। তাদের এ উদ্যোগ আরও সফলতা মুখ দেখুক এবং তাদের সফলতা অন্যদের অনুপ্রাণীত করুক।