শিক্ষা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে মণিঋষির সন্তানেরা পড়াশোনার সুযোগ পাচ্ছে
হরিরামপুর মানিকগঞ্জ থেকে সত্যরঞ্জন সাহা
পরিবেশবান্ধব বাঁশ বেতের কুটির শিল্পের কাজই হচ্ছে মণিঋষিদের প্রধান পেশা। স্থানীয় সম্পদ ও নিজস্ব কারিগরি জ্ঞান, দক্ষতা দিয়ে তাদের তৈরিকৃত পণ্যের মধ্যে রয়েছে কুলা, চালুন, ডালি, টালি, সরবেশ, খাদি, দাঁড়িপালা, ঝুড়ি, খালই ইত্যাদি। একসময় এসব বাঁশ বেতের পণ্যসামগ্রীর ভালো কদর ছিলো; এমনকি বিদেশেও রপ্তানি হতো। কিন্তু আধুনিক পণ্যসামগ্রী বিশেষ করে প্লাস্টিক শিল্পের প্রসারের পর থেকে আস্তে আস্তে বাঁশ বেতের তৈরি পণ্যগুলোর কদর কমতে থাকে। উপরোন্তু বাঁশ বেতের পণ্যের কাঁচামাল বা উপকরণের দাম বেশি হওয়ায় তৈরিকৃত পণ্যের উৎপাদন খরচ বেশি। ফলে প্রতিযোগিতায় স্বল্প দামের প্লাস্টিক পণ্যের সামনে টিকতে না পারায় এসব বাঁশবেতের শিল্প আস্তে আস্তে হারিয়ে যাচ্ছে। বাঁশ বেতের কুটির শিল্প হারিয়ে যাওয়ার সাথে সাথে এসব পেশার ওপর নির্ভরশীল মানুষের জীবন-জীবিকা বিপন্ন হতে শুরু করে।
বাঁশ-বেত জাতীয় পণ্যসামগ্রী বাজারে বিক্রয় করতে না পারায় মণি ঋষিগণ বেকার হয়ে অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে পড়েছেন। অভাব-অনটন ও অর্থনৈতিক টানাপোড়েনের কারণে শিক্ষা এবং স্বাস্থ্যের উন্নয়নের দিকে তাদের মনোযোগ নেই; মনোযোগ দিবেন কীভাবে পরিবারের খোরাক যোগাতেই তাদে বেশির ভাগ সময় কেটেছে।
মণিঋষি সম্প্রদায়ের শিক্ষা ও স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতন করে তোলার জন্য নানাজন নানা উদ্যোগ নিয়েছে। এর মধ্যে এই সম্প্রদায়ের শিক্ষার উন্নয়নের জন্য বারসিক’র সহযোগিতায় জনউদ্যোগে গৃহীত শিক্ষা, স্বাস্থ্য কেন্দ্র (প্রি-প্রাথমিক) স্কুল প্রতিষ্ঠা ও কার্যক্রম শুরু অন্যতম। ইতিমধ্যে মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার হাটিপাড়ার ইউনিয়নের পাওনান গ্রামে ও হরিরামপুর উপজেলার কালই, পাটগ্রাচর ও সুতালড়ি গ্রামে মোট ৪টি জনউদ্যোগে শিক্ষা স্বাস্থ্য কেন্দ্র (প্রি-প্রাথমিক) শিক্ষা কার্যক্রম চলছে। শিক্ষায় পিছিয়ে পড়া, অবহেলিত, ঝরে পড়া মণিঋষি সম্প্রদায় এবং চরের ২৩২ জন শিক্ষার্থী এই শিক্ষা, স্বাস্থ্য কেন্দ্রে বর্তমানে পড়াশোনা করছে।
চরের পিছিয়ে পড়া ও মণিঋষি সম্প্রদায়ের সন্তানেরা ছোট থেকে শিক্ষার অভাবে, প্রাথমিক শিক্ষার উপযোগযুক্ত হলেও প্রাথমিক শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হয়ে আসছে। পড়তে ও লিখতে না পারায় সরকারি প্রাথমিক স্কুলে ভর্তি হতে পাছেন না। বারসিক’র উদ্যোগে এবং সমাজের লোকজনের সমর্থনে শিক্ষা স্বাস্থ্য কেন্দ্রের শিক্ষা কার্যক্রম ভালোমত চলছে। প্রতিটি শিক্ষা স্বাস্থ্য কেন্দ্রের একটি স্কুল পরিচালনার জন্য কমিটি রয়েছে। কমিটির সদস্যরা শিক্ষা সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখার জন্য সমাজের বিভিন্ন মানুষের সহযোগিতা নিয়ে শিক্ষা, স্বাস্থ্য কেন্দ্রের জন্য ঘর তৈরি করা হয়েছে। এসব স্কুল ঘর মূলত তৈরি করা হয় সমাজের লোকজন, সমাজসেবক, রাজনৈতিক ব্যক্তি ও উন্নয়ন সংগঠনের সহযোগিতায়।