পাখিরা বেঁচে থাক, পৃথিবীটাজুড়ে থাক
রাজশাহী বরেন্দ্র অঞ্চল থেকে শহিদুল ইসলাম
“পাখিরা বেঁচে থাক, পৃথিবীটা জুড়ে থাক” গত ১২ ও ১৩ ফেব্রুয়ারি এই শ্লোগানে দ’ুদিনব্যাপী রাজশাহী নগরীরর পদ্মার তীরঘেঁষা বড়কুঠির উন্মুক্ত মঞ্চে (বালুর ঘাট) বরেন্দ্র অঞ্চলের ৪৯টি পাখির ছবি নিয়ে রাজশাহী বার্ড ক্লাবের তরুণদের উদ্যোগে ‘পাখির আলোকচিত্র প্রদর্শনী’র আয়োজন করা হয়েছে।
নতুন প্রজন্ম তথা শিশুদের মাঝে পাখি প্রেম ও সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যেই এই আলোকচিত্র প্রদর্শনী আয়োজন করা হয়েছে। এই আয়োজনটি উদ্বোধন করেন অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন। প্রর্দশনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন রাজশাহীর বিভাগীয় বন কর্মকর্তা, পাখি বিশেষজ্ঞ ইনাম আল হকসহ তরুণ পাখি প্রেমী আলোকচিত্রীগণ। পাখির আলোকচিত্র প্রদর্শনীতে উত্তরাঞ্চলের ২১জন পাখিপ্রেমীর ৪৯ প্রজাতির পাখির ছবি উপস্থাপন করা হয়েছে। বার্ড ক্লাবের সদস্যরা ফেসবুকের মাধ্যমে বিগত প্রায় দুমাস ধরে পাখির ছবি সংগ্রহের জন্যে আহবান জানান। ছবি পাঠানোর ক্ষেত্রে তারা উত্তরাঞ্চল তথা বরেন্দ্র অঞ্চলের পাখির ছবির উপর বেশি জোর দিয়েছেন। তাদের এই আহ্বানে বিভিন্ন আলোকচিত্রী তাদের তোলা পাখির ছবি বার্ড ক্লাবের সদস্যদের কাছে পাঠান। পাঠানের ছবি থেকে নির্বাচিত বেশ কয়েকটি ছবি নিয়েই এই প্রর্দশনী আয়োজন করেন তারা। এছাড়াও পাখি নিয়ে বিভিন্ন প্রকাশনাগুলোও স্থান পায় এই আলোচিত্র প্রদর্শনীতে। দর্শনার্থীরা আগ্রহসহকারে সেসব প্রকাশনা পড়েন এবং অনেকে সেসব প্রকাশনা কিনেন। এই প্রসঙ্গে বার্ড ক্লাবের সদস্য আরিফ উল আনাম বলেন, “নতুন এবং তরুণদের মধ্যে পাখি এবং বরেন্দ্র প্রকৃতির প্রতি ভালোবাসা ও সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে এই পাখির আলোকচিত্র উৎসবের আয়োজন করা হয়েছে।” তিনি বলেন, “আজ একটি বিশেষ দিন (বসন্তের প্রথম দিন) হওয়াতে তরুণসহ নানা বয়সের মানুষ রাজশাহীর পদ্মাপাড়ে আসে। তাই নবীণসহ অন্যান্য বয়সের মানুষের ভেতরে পাখির প্রতি ভালোবাসা এবং পাখি ও প্রকৃতি বিষয়ক সচেতনতা বৃদ্ধির জন্যে আমরা এ আয়োজন করেছি।” তিনি বলেন, “আগামীতে বিভিন্ন সমমনা সহযোগী সংগঠনের মাধ্যমে যৌথভাবে আমরা গোটা বরেন্দ্র অঞ্চলে এই কার্যক্রম ছড়িয়ে দিতে চাই।”
রাজশাহীর কিছু তরুণ উত্তরাঞ্চল তথা বরেন্দ্র অঞ্চলের পাখি ও প্রকৃতিপ্রেমী এক হয়ে রাজশাহী বার্ড ক্লাব প্রতিষ্ঠা করেন। বয়সে নবীন হলেও অল্পসময়েই তাঁরা এই অঞ্চলের অনেক পাখি প্রেমী ও প্রকৃতিপ্রেমীকে এক কাতারে দাঁড় করাতে সক্ষম হয়েছেন। এই পাখির ছবি প্রর্দশনী দিয়েই এই ক্লাবের প্রথম শুভযাত্রা শুরু হলো। আলোকচিত্র প্রদর্শীতে তরুণ পাখি বিশেষজ্ঞগণ নতুনদেরকে পাখির পরিচিতি এবং পাখি ও প্রকৃতির সম্পর্কের বিষয়গুলো নতুনদের মধ্যে তুলে ধরেন। অংশগ্রহণকারী তরুণরা জানান, বরেন্দ্র অঞ্চলের অনেকগুলো বৈশিষ্ট্যে রয়েছে। এখানে হাজারো ধরনের পাখির নিরাপদ আবাস স্থল ছিলো। কিন্তু দিনে দিনে প্রকৃতির বিরূপ প্রভাব, মানুষের প্রকৃতি বিনাশী কার্যক্রম এবং একই সাথে পাখি শিকারীদের নির্দয় আচরণের কারণে অনেক পাখি আজ বিলুপ্ত হয়েছে এবং কিছু পাখি বিলুপ্তির ঝুঁকিতে রয়েছে। পাখি ও প্রকৃতি এবং প্রাণীকুল একই সূত্রে গাঁথা। তাই পাখি রক্ষা করা আমাদের সবার নৈতিক দায়িত্ব।