অবসরে কবুতর পালন করে লাভবান শংকর রিছিল
নেত্রকোনা কলমাকান্দা থেকে গুঞ্জন রেমা
হালুয়াঘাট উপজেলার ১০ কিলোমিটার উত্তর পশ্চিমে অবস্থিত আশকিপাড়া গ্রাম। এই গ্রামে বাস করেন শংকর রিছিল (৪০) নামের একজন কবুতর প্রেমী। তিনি একসময় হালুয়াঘাট উপজেলার ভূবনকুড়া ইউনিয়ন পরিষদের ৪নং ওয়ার্ডের মেম্বার ছিলেন এবং টানা ৮ বছর পদে থেকে মানুষের সেবা করেছেন সততার সাথে। ইউপি সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন শেষে তিনি তিন মাস পশু-পাখির প্রাথমিক চিকিৎসার উপর প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছেন। এছাড়াও তিনি মৌমাছি পালনের উপরও প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছেন।
শখের বসে তিনি ছোট কাল থেকেই কবুতর পালন করে আসছিলেন। একটা পর্যায়ে তিনি বাণিজ্যিকভাবে কবুতর পালনের সিদ্ধান্ত নেন। বাণিজ্যিকভাবে কবুতর পালনের জন্য তিনি বিভিন্ন এলাকায় বিভিন্ন জাতের কবুতরের সন্ধান করেন। এভাবে বর্তমানে তার কাছে মোট ১২ প্রজাতির কবুতর রয়েছে। এ ১২ প্রজাতির কবুতরের মধ্যে রয়েছে: কালো মুক্ষী, ঘিয়াচুল্লি, গিরিবাজ, কালো সিরাজী, লাল সিরাজী, কালো লক্ষা, সাদা লক্ষা, বিউটি উমার, উমার, সাদা কাগজী, লাল চুল্লি, পটারবল। বর্তমানে তার কাছে ১২ প্রজাতির মোট ৩০ জোড়া কবুতর রয়েছে। এই সব কবুতর তিনি সংগ্রহ করেছেন হালুয়াঘাট, শেরপুর, টঙ্গি, ঢাকা, কলসিন্দুর, মাজরাপাড়া, মোহাম্মদপুর, জয়রামকুড়া প্রভুতি স্থান থেকে। তিনি জানান, প্রতিমাসে ৫ থেকে ৬ জোড়া কবুতর বিক্রি করেন। এ পর্যন্ত তিনি ৩৫ জোড়া কবুতর বিক্রি করেছেন। বিভিন্ন জাতের কবুতরের মূল্য ভিন্ন। মূলত বাচ্চা অবস্থায় প্রতি জোড়া কবুতর ৫০০ টাকা থেকে ৮০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করেন। শংকর রিছিল প্রতিমাসে তিনি ৫ থেকে ৬ জোড়া কবুতর বিক্রি করেন। এ থেকে প্রতিমাসে তিনি আয় করেন ৫ থেকে ৬ হাজার টাকা। বিগত তিন বছর ধরেই তিনি কবুতর বিক্রি করেন। কবুতরের খাবার হিসেবে তিনি চাল, ডাল, ভূট্টা, গম ও ব্রয়লার দেন। প্রতি মাসে খাবারের পিছনে তাকে খরচ করতে হয় ৪০০ টাকা।
কবুতর পালনের অভিজ্ঞতা থেকে তিনি বলেন, “পর্থম পর্থম জানতাম না কি দরনের কবুতর কিনতে অয়। না জাইনা কিইনা লস খাইসি। ২ বসর কোন বাচ্চা ফুটাইতে পারসি না।” পশু পাখির প্রাথমিক চিকিৎসা পদ্ধতি জানার কারণে কবুতরের কোন রোগ দেখা দিলে তিনি নিজেই চিকিৎসা করেন। তাই কোন প্রকার সমস্যা দেখা দেয় না। ভবিষ্যতে আরও বৃহৎ আকারে কবুতর পালন করার পরিকল্পনা আছে তার। তিনি জানান, একটি নির্দিষ্ট ঘর তৈরি করে আগামীতে ৬০ প্রজাতির ৬০ জোড়া কবুতর পালন করবেন। এতে করে কবুতর পালন থেকে সংসারের খরচ যোগান দিতে পারবেন। বড় আকারে কবুতর পালন করে তিনি ঢাকায় সেগুলো বাজারজাত করবেন বলে জানান। শংকর রিছিল ঘরে বসেই অর্থনৈতিক উন্নয়নের পথ ঠিকই বের করে নিয়েছেন এবং সংসারের জন্য বাড়তি আয় নিশ্চিত করেছেন। বেকার যুবকসহ যেকোন মানুষই ইচ্ছে করলে নিজের অর্থনৈতিক উন্নয়ন পথ তৈরি করতে পারেন। এজন্য প্রয়োজন ইচ্ছাশক্তি ও মনোবল।