তিল চাষে লাভবান হচ্ছেন হরিরামপুরের কৃষকরা
হরিরামপুর, মানিকগঞ্জ থেকে মুকতার হোসেন
পদ্মার চরে পলিযুক্ত মাটিতে ফসলবৈচিত্র্য আবাদ করে চরের মানুষ জীবিকা নির্বাহ করে থাকে। খরিপ-২ মৌসুমে এলাকার কৃষকরা তিল, কাউন, পাট, আউশ পরাঙ্গী, আমন মধুশাল, ডেপুশাল, ঝোল দিঘা, দিঘা ধান ইত্যাদি চাষ করেন। তবে সম্প্রতি হরিরামপুর উপজেলার গ্রামগুলোতে তিলের চাষের পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। তিল চাষে তুলনামূলকভাবে কম খরচ হয় এবং মাটির উর্বরাশক্তিতে বৃদ্ধিতে সহায়তা করে বলে এলাকায় এ ফসলের চাষের দিকে আগ্রহ দেখাচ্ছেন কৃষকরা। এছাড়া চরের মাটি বেলে দোআঁশ হওয়ার কারণে এই মাটিতে তিল ভালো হয়। দু’একজন করে ধীরে ধীরে এলাকায় এলাকায় তিল চাষকারী কৃষকেরা সংখ্যা বেড়ে যায়। তিল চাষে খরচ কম বিধায় কৃষকরা লাভবান হন। এছাড়া তিল চাষে মাটির উর্বরতা শক্তিও বৃদ্ধি পায়। তাই মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলার লেছড়াগঞ্জ, সুতালড়ী, রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়নে গ্রামগুলোতে ধীরে ধীরে বিভিন্ন ধরনের তিল চাষের পরিমাণ বৃদ্ধি পেতে শুরু করে।
চর এলাকায় কৃষকগণ ২০ বছর আগে আউশ মৌসুমে ধান (কালো আউশ, কালামানিক) চাষের পাশাপাশি একই জমিতে তিল বপন করতেন। তবে বোরো ধান আবাদ শুরু হওয়ার পর থেকে এলাকায় আউশ ও তিল চাষের পরিমাণ কমে যায়। কিন্তু বোরো ধান চাষে উৎপাদন খরচ বেশি এবং বাইরের উপকরণের ওপর নির্ভরশীলতা বেশি হওয়ায় লাভবান হতে না পেরে কৃষকরা আবারও আউশ ও তিল চাষের দিকে ঝুঁকে পড়েন।
তিলের চাষ ভালোভাবে করার জন্য এবং বীজের সহজলভ্যতা তৈরির জন্য কৃষক পরস্পরের সাথে যোগাযোগ বৃদ্ধি করেন। মূলত অভিজ্ঞতা বিনিময় সফরের মাধ্যমে এলাকার কৃষকরা একে অপরের নিকট থেকে তিল বীজ সংগ্রহ চাষবাস করতে শুরু করেন। কোন কোন কৃষক বিভিন্ন জেলা থেকেও বীজ সংগ্রহ করে চাষ করছেন বলে জানান। অন্যদিকে এই ফসলের বীজ সহজলভ্য করার জন্য পাটগ্রামচর কৃষক সংগঠনের সদস্য জহুরার বীজবাড়িতে বীজ সংরক্ষণ করা হয়। এ বছর এ বীজবাড়ি থেকে কৃষক সিদ্দিক, বদুর উদ্দিন, সেলিম, সোনামুদ্দিন ও পারভিন বীজ সংগ্রহ করে ৯০ শতক জমিতে চাষ করছেন বলে জানান। তার মধ্যে বদুরউদ্দিন তাঁর বাড়ির পাশে ১৫ শতক জমিতে চার শিরা জাতের তিল চাষ করেন বলে জানান। ফলন বেশি হওয়ায় ৪ শিরা জাতের তিল এর চাহিদা বৃদ্ধি পায়।
সাধারণত এলাকায় ছয় শিরা, আটশিরা, চারশিরা ও কালো রঙের তিল চাষ করেন কৃষকরা। চর অঞ্চলে বন্যা হওয়ার কারণে মাটির উপরের অংশে পলি পড়ে জমির মাটির উর্বরতা বেশি। এই মাটিতে তিল চাষ করলে ভালো ফলন হয়। তিল সাধারণত মাটির জো আসলে ফাল্গুন মাসে বপন করা হয় এবং কর্তন করা বৈশাখ ও জ্যৈষ্ঠ মাসে। সাধারণত প্রতিবিঘা জমিতে বীজ লাগে দুই কেজির মতো এবং একবিঘা জমিতে তিল উৎপাদন হয় প্রায় ৫ থেকে ৬ মণ।
হরিরামপুর উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৩ সালে সুতালড়ী ইউনিয়নে ৩০ হেক্টর ও লেছড়াগঞ্জ ইউনিয়নে ১১৫ হেক্টর জমিতে তিল চাষ হয়। ২০১৫ সালে তিল চাষের পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়ে সুতালড়ী ইউনিয়নে ৫০ হেক্টর জমিতে এবং লেছড়াগঞ্জ ইউনিয়নে ১৩০ হেক্টর জমিতে তিল চাষ হয়। তিল চাষ বৃদ্ধি হওয়া প্রসঙ্গে পাটগ্রামচরের কৃষক সেলিম উদ্দিন বলেন, “চর এলাকায় প্রতিবছর বন্যার কারনে জমির ধরন পরিবর্তন হয়। ফলে ফসল চাষের পরিবর্তন হয়। চর এলাকার জমি তিল চাষের উপযোগি হওয়ার কারণে চাষ বেড়ে যায়।”