শ্যামনগরে তরমুজ চাষের সম্ভাবনা এবং কৃষকদের আগ্রহ
সাতক্ষীরা থেকে রামকৃষ্ণ জোয়ারদার ও বিধান মধু
উপকূলীয় সাতক্ষীরা জেলার শ্যামনগর থানার কৈখালী একটি ইউনিয়ন। বিগত দিনে এলাকায় বেশিরভাগ মানুষ চিংড়ি চাষে ব্যস্ত থাকলেও বর্তমানে তারা যতটকু আবাদী জমি আছে তাতেই ধান ও বিভিন্ন সবজি করার পাশাপাশি কয়েকবছর ধরে তরমুজ চাষ করতে শুরু করেছেন। আইলার পরে প্রায় তিনবছর তরমুজ চাষ তেমন লাভের মুখ না দেখলেও বর্তমানে তারা এ ফসল চাষে লাভবান হচ্ছেন। এলাকার স্থানীয় কৃষকদের সাথে আলোচনা করে জানা যায়, তরমুজ চাষে খুব পরিশ্রম করতে হয়, পরিশ্রমের মাধ্যমে অনেক লাভ পাওয়া সম্ভব। চলতি মৌসুমে প্রায় এ ইউনিয়নে প্রায় ১৫০ বিঘা জমিতে তরমুজ চাষ হচ্ছে বলে তারা জানান।
তরমুজ গাছে একাধিক ফল ধরে। তার মধ্যে ভালো স্বাস্থ্যবান ফলটি রেখে তুলনামুলক দুর্বল ফলটি ডাল থেকে ফেঙে ফেলা হয়। কেননা একটি করে ফল রাখলে সেটা আকারে বড় হতে পারে। কৃষক মো. আব্দুল কাদের এবার এক বিঘা জমিতে বীজ, সার, পানি, ও অন্যান্য খরচ বাবদ প্রায় মোট ১৫ হাজার টাকা খরচ করেছেন তরমুজ চাষে। এবছর তিনি একবিঘা জমিতে প্রায় ১০০ মণ তরমুজ পেয়েছেন। মণ প্রতি ৪০০ টাকা দরে বিক্রি করে খরচ বাদ দিয়ে একবিঘা জমিতে তিনি প্রায় ২৫ হাজার টাকা লাভ করেছেন বলে জানান। তিনি জানান, তরমুজ বিক্রয়ের জন্য তাদের হাটে বাজারে যেতে হয় না। নিজেদের ক্ষেতে বসেই তরমুজ বিক্রয় করে পারেন। শ্যামনগরের বিভিন্ন এলাকার খুচরা ও পাইকারি ক্রেতারা এসব তরমুজ কিনে নিয়ে শহরের বিভিন্ন স্থানে বিক্রয় করেন। তরমুজ চাষে প্রথম পর্যায়ে চাষিরা লাভবান হয়। এরপর পর্যায়ক্রমে কয়েকধাপ বিক্রয়কারীরা লাভবান হয়। মৌসুমের শুরুতে ভালো দাম পাওয়া গেলেও শেষ পর্যায়ে অনেক কম দামে তরমুজ বিক্রয় করতে হয় তাদের। মানুষের পাশাপাশি পশুর খাদ্য হিসেবেও তরমুজ ব্যবহার হয়। ক্ষেতে অনেক তরমুজ ফেটে যায় এবং লাল অংশ খাওয়ার পর সাদা অংশ তারা গরু-ছাগলের খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করে। তরমুজ ক্ষেত থেকে উঠে যাওয়ার দুই তিন মাস পর তারা এ জমিতে আমন ধান রোপণ করেন। বর্তমানে এলাকার অনেক কৃষক তরমুজ চাষে এগিয়ে আসছেন। তবে এলাকায় যাদের মিষ্টি পানির পুকুর আছে কেবল তারাই তরমুজ চাষ করতে পারছেন। তরমুজ একটি লাভজনক ফসল। এলাকার অনেক কৃষকের দাবি, যদি মিষ্টি পানির একাধিক পুকুর বা খাল কাটা হত তাহলে এলাকার অনেক কৃষক তরমুজ চাষ করতে পারত।
তরমুজ চাষের প্রথম শর্ত হল কৃষি উপযোগি পানি। মিষ্টি পানির পুকুর বা খাল নিকটবর্তী নির্বাচিত জমিতে ছোট ছোট মাদা তৈরি করা হয়। প্রতি দুই থেকে আড়াই হাত পর পর এবং প্রতি সারির দূরত্ব একই এবং প্রতিটা গর্তে ৩/৪টি বীজ রোপণ করতে হয়, যাতে করে প্রতিটা গর্তে যেন অন্তত একটি চারা গজায়। অনেকে বীজ বপনের পূর্বে মাটির পাত্রে ওম দিয়ে বীজ অঙ্কুরোদগম (কোলা) করে। বীজ বপন পরবর্তী প্রথম দু’তিন দিন পরপর চারায় পানি দিয়ে ভিজিয়ে দিতে হয়। এরপর চারা যখন ২/৩ ফুট হয় তখন সমস্ত ক্ষেতে খড়/নাড়া বিছিয়ে দিতে হয়, যাতে করে ফলটি নাড়ার ওপর থাকতে পারে এবং ধীরে ধীরে বড় হতে থাকে। স্থানীয় কৈখালী গ্রামের তরমুজ চাষী কৃষক মো. আব্দুল কাদের ও হাবিবুর রহমান এ বিষয়ে বলেন, “সাধারণত জানুয়ারি (পৌষ-মাঘ) মাসে তরমুজের বীজ বপন করতে হয়। শীত থাকার কারণে বীজ ভালো কোলা (অঙ্কুরোদগম) হয় না। তাই আমরা মাজায় করে বীজ বেঁধে রাখি, শরীরের তাপের সাথে বীজ রেখে বীজের কোলা (অঙ্কুরোদগম) করি।
তরমুজ একটি বিষ্ময়কর স্বাস্থ্য উপকারিতা সম্পন্ন শক্তিশালী ফল যা শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারী। এতে থাকে প্রচুর পরিমাণে পুষ্টি, ভিটামিন এবং খনিজ। তরমুজের শতকরা ৯২ ভাগই পানি এবং প্রাকৃতিকভাবেই এতে কোনো চর্বি থাকে না।