মধুমাসের ফলের রসে রঙিন করি মুখ
নেত্রকোনা থেকে পার্বতী রাণী সিংহ ও রোখসানা রুমি
নেত্রকোনা অঞ্চলে এখনো গ্রামের নারীরা জ্যৈষ্ঠ মাসকে মধু মাস হিসেবে পালন করেন। তাই জ্যৈষ্ঠ্য মাসকে কেন্দ্র করে জামাইকে আম কাঁঠালের দাওয়াত দেওয়া, মেয়েকে নাওর আনে, জামাইর বাড়ি আম, কাঁঠাল,লিচু, চিড়া, মুড়ি, দই, দুধ পিঠা নিয়ে বেড়াতে যায়। বৈশাখী দাওয়া মারি তুলে অনেক জামাই নতুন বইকে নিয়ে বেড়াতে যায় শ্বশুরবাড়ি। মধু মাসকে স্মরণ করেই আটপাড়া উপজেলার স্বরমুশিয়া গ্রামের নারীরা রামেশ্বরপুর রিসোর্স সেন্টারে মধুমাস পালনের আয়োজন করেন করে সম্প্রতি।
এই আয়োজনের কেন্দ্র করে সকাল থেকেই গ্রামের নারীরা আম, কাঁঠাল, নানা জাতের পিঠা, চিড়া, মুড়ি, দই, সেমাই, দুধ, কলা, পেঁপে, গোলাপজান, ছাগলবুড়ি নিয়ে রামেশ্বরপুর রিসোর্স সেন্টারে চলে আসেন। সকলে মিলে খেতে বসে, আনন্দ উল্øাসের মধ্য দিয়ে মধুর রসে মুখ রঙিন করে তুলেন তারা। এই আয়োজনের সাথে সাথে যোগ দেন গ্রামের কিশোরী, যুবক ও প্রবীণরাও। খাওয়ার পরপরই মেতে উঠেন প্রাণ-প্রকৃতি নিয়ে লেখা গ্রামীণ ছড়া পাঠ নিয়ে। তাঁরা কাজলাদিদি, মামাবাড়ি, আমাদের ছোট নদী, তালগাছ, আমার বাড়ি যাইও ভোমর, আতাগাছে তোতা পাখি, বনভোজন, সবদার ডাক্তার, কাঠবিড়ালি কবিতা আবৃতি করেন।
মধুমাস উপলক্ষে গ্রামের নারীরা প্রত্যেকের বাড়ির ফলের গাছের তথ্য সংগ্রহ করেন। আলোচনার শুরুতেই নারীদের পক্ষে মিনা আক্তার ফলের গাছের তথ্য উপস্থাপন করেন। তিনি জানান, তাঁর বাড়িতে ২৬ জাতের ফলের গাছ রয়েছে, হাজেরার বাড়িতে রয়েছে ২০ জাতের ফলের গাছ এবং রূপক রাণীর বাড়িতে আছে ১৯ জাতের ফলের গাছ। আয়োজকদের পক্ষ থেকে তিনজনকে পুরস্কৃত করা হয় এবং যার বাড়িতে ফলের গাছ কম আছে প্রত্যেকেই ১০টি করে ফলের চারা রোপণ করার উদ্যোগ নিতে আয়োজকদের পক্ষ থেকে পরামর্শ প্রদান করা।
মধুমাস পালন প্রসঙ্গে কৃষাণী রহিমা আক্তার বলেন, “আমরার ফলে কোন বিষ নাই, নিজের গাছের ফল একটু খাইলেও ভালা।” দিনব্যাপী অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন রামেশ্বরপুর গ্রামের কৃষাণী মিনা আক্তার। তাঁকে সহযোগিতা করেন বারসিক’র পার্বতী রানী সিংহ ও রোখসানা রুমি ।