বায়োগ্যাস: একটি পরিবারের নিত্য সাথী
নেত্রকোনা থেকে হেপী রায়
নেত্রকোণা জেলার দক্ষিণপূর্ব দিকে বালি গ্রামটি অবস্থিত। সেই গ্রামের বাসিন্দা আহাম্মদ আলী। তিনি নিজ বাড়িতে বায়োগ্যাস প্ল্যান্ট স্থাপন করেছেন। এই গ্যাসের সাহায্যেই চলে তাঁর পরিবারের সমস্ত রান্না-বান্নার কাজ।
গত দুই বছর আগের কথা। তিনি বাড়ির জন্য একটি বিদেশি গরু কিনেছিলেন। এই গরু আমাদের দেশের চারটি গরুর সমপরিমাণ গোবর দেয়। গোবর ব্যবহার করা বা সংরক্ষণ করার মত জায়গা নেই তাঁর। তাই চিন্তা করছিলেন এই গোবরের সঠিক ব্যবহার কিভাবে করা যায়। ঠিক তখনই তাঁর পাশে এসে দাঁড়ালো একটি বেসরকারি সংস্থা।
তিনি ওই সংস্থার কাছ থেকে ৩৬ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে গরুর একটি খামার তৈরি করেন। প্রথমে তাঁর খামারে একটি গরু থাকলেও বর্তমানে তা দাঁড়িয়েছে আটটিতে। গরুগুলোর গোবর দিয়ে তিনি বায়োগ্যাস উৎপাদন করছেন। সরবরাহকৃত গ্যাসের মতই এই গ্যাস ব্যবহার করা যায়।
এই গ্যাস প্ল্যান্ট তৈরি করতে তিনি খামারের পেছনে তিনটি বড় আকারের ট্যাংক তৈরি করেছেন। একটিতে গোবর সংরক্ষণ করেন। অন্যটিতে গোবর ও মিশ্রিত পানির তরল পদার্থ। বাকিটাতে গোবরের অবশিষ্টাংশ জমা হয়। প্রথম গর্তটিতে ৫ মণের মতো গোবর রাখা যায়। এরপর একটি ঘূর্ণায়মান যন্ত্রের সাহায্যে এর সাথে পানি মেশানো হয়। মেশানো পানি যে ট্যাংকটিতে জমা হয় এর গভীরতা প্রায় ১১ ফুট। মূলত এই মিশ্রণ দিয়েই গ্যাস তৈরি হয়। ট্যাংক থেকে একটি নলের সাহায্যে গ্যাস সরবরাহ করা হয়, যা রান্না ঘরে দু’টি চুলার সাথে সংযুক্ত।
এই গ্যাস দিয়ে ৭ জনের পরিবারের তিন বেলা রান্না করা হয়। তাছাড়া গরুর খাবারও তৈরি করা হয়। বিদেশি গরু হওয়ার কারণে একে দেশীয় খাবারের পাশাপাশি কেনা খাবারও দিতে হয়। এই গ্যাস ব্যবহারকারী আহাম্মদ আলী বলেন, “অহন আমরার অনেক খরচ কইম্যা গেছে। আগে তো মাসে ২০/২৫ মণ খড়ি লাগতো। সময়ও বেশি লাগতো। অহন লাগেনা। তাড়াতাড়ি রান্ধা অয়। আগে খড়ি দিয়া রানলে ঘর ধোঁয়ায় ভইরা যাইতো। কালি কুলি ভরতো। অহন সুবিধা অইছে”।
তাঁর স্ত্রী বলেন, “আগে অনেক সময় নিয়া রান্ধন লাগতো। বাসনপত্রে কালি অইতো। বাসন মাজতে মাজতে হাত ব্যথা করতো। রান্ধনের কথা মনে অইলেই রাগ লাগতো। কিন্তু অহন কোন ঝামেলা নাই। রানতে আনন্দ লাগে”।
বায়োগ্যাসের সুবিধা হলো খরচ কম, ধোঁয়া হয় না, পরিশ্রম নাই এবং রান্না করতে সময় কম লাগে। তাছাড়া গোবরের উচ্ছিষ্টাংশ জৈব সার হিসেবে ব্যবহার করা যায়। এলাকাবাসীর সাথে কথা বলে জানা যায় তার এই গ্যাস প্ল্যান্ট অনেকেই দেখতে আসে। আমাদের দেশে বায়োগ্যাস এখনো তেমনভাবে প্রচলিত হয়নি। খরচের দিক চিন্তা করে অনেকেই এটি তৈরি করে না। কারণ প্রচুর গোবরের প্রয়োজন হয়। দেশীয় প্রজাতির গরু লাগবে কয়েকটি। সাধারণ শ্রেণির কৃষকের বাড়িতে গরুর সংখ্যা নিতান্তই কম থাকে। আবার অনেকের থাকেই না। তাছাড়া কোন প্রতিষ্ঠান সহজ শর্তে বায়োগ্যাস প্ল্যান্ট স্থাপন করে দিলেও কিছুটা সম্ভব হতো। যাদের অর্থনৈতিক সচ্ছলতা আছে তারা এটি তৈরি করে ব্যবহার করতে পারছেন।