উপকূলে জলাবদ্ধতার কবলে কৃষকের স্বপ্নবীজ
দেবদাস মজুমদার.বিশেষ প্রতিনিধি,উপকূল অঞ্চল ::
পঞ্চাশোর্ধ কৃষক আব্দুল হক এক একর জমিতে এবার স্থানীয় জাতের আমন বীজতলা তৈরি করেছেন। আমন আবাদের জন্য এ বীজতলা নিয়ে কৃষক এখন চরম বিপাকে পড়েছেন। চলতি বর্ষা মৌসুমে টানা ভারী বর্ষণে তাঁর এ বীজতলায় জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। বীজতলা ডুবে আছে দুই ফুট পানিতে। আবাদী জমিতে নেমে বীজের গোঁড়ায় হাত দিয়ে কৃষক নিশ্চিত হন বীজতলায় পচন ধরছে। গত সপ্তাহ থেকে টানা বর্ষণে আবাদী জমিতে জমে থাকা পানি সরে না যাওয়ায় বীজতলার মাঠে অবাঞ্ছিত পানি জমেছে। বিপন্ন কৃষক আব্দুল হক বলেন, “পানি না সরলে বীজতলা পুরোটাই নষ্ট হয়ে যাবে। বীজ পচে গেলে আমন বীজ কই পামু তা আল্লাহই জানে।
শুধু কৃষক আব্দুল হকই নন বরগুনা ও পিরোজপুর উপকূলে আবাদী জমি গত তিন সপ্তাহের অবিরাম ভারী বর্ষণের কবলে পড়েছে। বর্ষায় সৃষ্ট জলাবদ্ধতায় মাঠঘাট ডুবে থাকায় কৃষকের এমন সর্বনাশ ঘটেছে। বর্ষার পানি সরে না যাওয়ায় দুই/তিনফুট পানিতে আবাদী জমি তলিয়ে আছে। এতে উফশী আমন ও স্থানীয় জাতের আমন বীজতলা ও উফশী আউশ আবাদ নিয়ে কৃষক বিপাকে পড়েছেন।
বরগুনার বামনা উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, বামনা উপজেলার চার ইউনিয়নে উফশী আমন ও স্থানীয় আমন ৩৫ হেক্টর জমির বীজতলা পানিতে তলিয়ে আছে। এছাড়া উফশী আউশ ফসল ২০০ হেক্টর ৩/৪ ফুট পানিতে তলিয়ে থাকায় ফসলহানীর আশংকা দেখা দিয়েছে। এতে এক কোটি ২৮ লক্ষ ৭৫ হাজার টাকার ফসল ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে। মাঠের পানি দুই এক দিনের মধ্যে না কমলে ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়বে।
কালিকাবাড়ি গ্রামের কৃষক মজিবুর রহমান সরদার জানান, তাঁর উফশী আউশ ধানের ক্ষেত পানিতে তলিয়ে থাকায় ফসল বিনষ্ট হয়েছে। ধানের চারার গোড়ায় পচন ধরায় তা গোখাদ্য হিসেবে ব্যবহার করছেন।
এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ড. মো. সফিউদ্দিন বলেন, “অব্যাহত ভারী বর্ষণের কারণে আবাদী জমিতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। পানি না কমলে ব্যাপক ফসলহানী ঘটবে। অপরিকল্পিতভাবে নির্মাণ করা স্লুইজগেট দিয়ে পানি নিষ্কাশন না হওয়ায় এ জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে।
অপরদিকে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় মাসব্যাপী অতিবর্ষণের কারণে জলাবদ্ধতার কবলে পড়েছে উপকূলীয় মঠবাড়িয়া উপজেলার ৪৫০ হেক্টর জমির বীজতলা। জলাবদ্ধতায় আমন বীজতলা সম্পূর্ণ নষ্ট হওয়ার পথে। অতি বর্ষণ অব্যাহত থাকলে আমনের বীজ সংকটের আশংকা রয়েছে।
মঠবাড়িয়া উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্যমতে, এবছর দুই হাজার ২০০ হেক্টর জমিতে আমনের বীজতলা করা হয়েছিল। তবে মাসব্যাপী অতিবর্ষণের কারণে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হওয়ায় ৪৫০ হেক্টর বীজতলা সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে গেছে। সবচে’ বেশি ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলো হলো সাপলেজা, আমড়াগাছিয়া, বড়মাছুয়া, গুলিশাখালী ও মিরুখালী ইউনিয়ন। এসব এলাকার কৃষিজমি কিছুটা নীচু হওয়ায় অনেক স্থানে বীজসহ বীজতলা এখনও পানির নিচে তলিয়ে আছে। উপজেলার দাউদখালী ইউনিয়নের হারজী নলবুনিয়া গ্রামের কৃক্ষক বাবুল মিয়া জানান, ১০ শতক জমিতে বীজতলা করলেও প্রায় ৭ শতক জমির বীজতলা পানির নিচে তলিয়ে গেছে।
সাপলেজা ইউনিয়নের কচুবাড়িয়া গ্রামের ইউপি সদস্য মো. মাহবুব জানান, তার গ্রামের সব বীজতলা পানির নিচে তলিয়ে আছে। তাদের বীজ না পেলে আমন আবাদের সম্ভব হবে না বলে তিনি জানান।
এ বিষয়ে মঠবাড়িয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সুব্রত কান্তি দত্ত জানান, উপজেলায় ২২ শত হেক্টর জমিতে বীজতলা করা হয়েছে। সাম্প্রতিক অবিরাম বর্ষণে নীচু কৃষিজমিতে অবাঞ্ছিত পানি জমেছে। এতে কিছু ক্ষতির সন্মূখীন কৃষকরা। তবে সামনে আর প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে আমন বীজের কোন সংকট হলেও অন্য এলাকা হতে সংগ্রহ করে কৃষকরা বীজ সংকট মোকাবেলা করতে পারবেন বলে তিনি জানান।