আমন ধানের চারার ভাসমান হাট
::দেবদাস মজুদার, বিশেষ প্রতিনিধি, উপকূল অঞ্চল
আমন ধানের আবাদের ধুম পড়েছে এখন উপকূলজুড়ে। কৃষক এখন কৃষি জমিতে আমন আবাদ নিয়ে মহাব্যস্ত। তবে এবার বর্ষা মৌসুমের মাঝামাঝি অতিবর্ষণ আর বৈরী আবহাওয়ায় বীজতলার মাঠে জলাবদ্ধতায় আমন চারা কিছুটা বিপন্ন হয়ে পড়ে। অনেক কৃষকের বীজতলা নষ্ট হয়েছে। তাই বিপন্ন কৃষকেরা আমন চারা সংগ্রহ করছেন হাট থেকে। উপকূলীয় জেলা পিরোজপুরের কাউখালীতে এ অঞ্চলের সর্ববৃহৎ আমন চারার বিক্রয়ের ভাসমান হাট থেকে প্রতিবছর কৃষক আমন ধানের চারা সংগ্রহ করে সংকট মোকাবেলা করেন। কাউখালীতে যুগ যুগ ধরে গড়ে ওঠা এই ভাসমান ধানের চারার বাজার এখন জমে উঠতে শুর করেছে। সন্ধ্যা নদী তীরবর্তী কাউখালী শহরের দক্ষিণ বন্দর এলাকার চিরাপাড়া সেতুর কাছে নদীর পাড়ে প্রতি শুক্রবার ও সোমবার বসে আমন চারার এ ভাসমান হাট। উপকূলজুড়ে আমন চারার সংকট মোকাবেলায় বিপন্ন কৃষক ছুটে আসেন ভাসমান চারার হাটে।
আমন মৌসুমের আমন ধানের চারার হাটে প্রতিদিন কয়েক লাখ টাকার আমন চারা বেচা কেনা হয়। ফলে কাউখালী এলাকার কৃষকরা যুগযুগ ধরে বাণিজ্যিক ভিত্তিতেই আমনের বীজতলা তৈরি করে আসছেন। এখানে পিরোজপুর, বরগুনা, ঝালকাঠি ও মাদারীপুরের কৃষক ও বীজ ব্যবসায়ীরা এ হাটে বীজ কিনতে আসছেন। পরিবহনে সুবিধার কারণে নৌকা ও ট্রলারে করে ব্যবসায়ীরা ও কৃষকরা হাটে আসেন। আগামী তিন সপ্তাহ উপকুলজুড়ে কৃষকরা কাউখালীর ওই ভাসমান চারার হাটে জড়ো হবেন। গত শুক্রবার (৪ সেপ্টেম্বর) শুরুর দিনে এ হাটে কয়েক লাখ টাকার আমন চারা বিক্রয় হয়েছে বলে বীজ ব্যবসায়ী ও বীজ ক্রেতাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে।
স্থানীয় কৃষকরা জানান,কাউখালী অঞ্চলের কৃষিজমি আশপাশের জনপদের তুলনায় উচু বলে এখানে জলাবদ্ধতা তেমন নেই। ফলে এখানকার কৃষিজমির বীজতলা অন্য এলাকার তুলনায় ঠিকভাবে টিকে থাকে। একারণে অন্যান্য এলাকার কৃষকরা আমন চারার সংকট কাটাতে কাউখালীর এ ভাসমান বীজের হাটে আসেন। আর এ বাজারকে ঘিরে স্থানীয় কৃষকরা বাণিজ্যিকভাবেই এখানে ধানের চারার উৎপাদন করে আসছেন।
উপজেলার জয়কুল গ্রামের কৃষক এনায়েত জানান, এখানে ভালোমানের ধানের চারা পাওয়া যায় বলে এ হাট হতে তিনি বীজ ক্রয় করছেন।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, এখানকার কৃষকরা বীজতলা করে সফলতার মুখ দেখছেন। এখানে উৎপাদিত ধানের চারা অত্যন্ত ভালো মানের। তাই বিভিন্ন অঞ্চলের কৃষকরা এ হাট হতে চারা সংগ্রহ করছেন। চলতি বর্ষা মৌসুমে টানা বৃষ্টি আর বৈরী আবহাওয়ার পরও প্রতিবছরের ন্যায় এবারও এখানে ভালো ধানের চারা উৎপাদন হয়েছে। একারণে এখানের ভাসমান আমন চারার হাটে ক্রেতা বিক্রেতাদের সমাগম ঘটছে।
গত আমন মৌসুমে কাউখালীতে ৪ হাজার ৩০০ হেক্টর জমিতে আমন বীজতলার আবাদ হয়েছিল। ওই বছর অতিবর্ষণ ও মহাসেনে প্রায় এক হাজার ২০০ হেক্টর জমির বীজতলা ব্যাপক ক্ষতির সম্মূখীন হয়। তবে এ মৌসুমে স্থানীয় আমন ও উফশী জাতের আমন মিলিয়ে ৪ হাজার ৩৮০ হেক্টর জমিতে বীজতলা তৈরি করে কৃষক। এর মধ্যে উফশী ১৮০ হেক্টর আর স্থানীয় আমন ৪ হাজার ২শত হেক্টর। এখানে ধানের চারার উৎপাদন আশানুরূপ হয়েছে। পরিপুষ্ট চারায় এবার কৃষকরা ভালো ফলনের আশা করছেন।
কাউখালী উপজেলায় ২ হাজার ২০০ হেক্টর জমির বীজ স্থানীয় কৃষক ক্রয় করে চাহিদা মিটায়। বাকী ২ হাজার ৩০০ হেক্টর জমির বীজ বিভিন্ন অঞ্চলের কৃষক ও ব্যাবসায়ীরা পাইকারী ক্রয় করে নিয়ে যায়।
ঝালকাঠীর রাজাপুরের শুক্তগর গ্রামের কৃষক শাহ জামাল বলেন, গত মৌসুমে ৮০ গ–া ধান চারা সর্বোচ্চ ৮০০ টাকা করে বিক্রয় হয়েছিল। এবার সারা এলাকায় বীজতলা নষ্ট হওয়ায় সংকট দেখা দেয়। এতে বীজের মূল্য চড়া। গতবারের তুলনায় দ্বিগুণেরও বেশি মূল্যে এবার ধানের চারা বিক্রয় হচ্ছে। এ বীজ আবার অন্য অঞ্চলে আরো বেশি দামে বিক্রয় করা হবে।
এ ব্যাপারে কাউখালী উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা অপূর্ব লাল সরকার বলেন, অতি বর্ষণ ও জোয়ার জলোচ্ছাসে নিচু এলাকার কৃষিজমিতে আমন চারা উৎপাদনে কিছুটা সংকট ছিল। তবে কাউখালী অঞ্চলের কৃষিজমিতে অন্য এলাকার মত এ সংকট নেই। এখানে প্রতিবছর ভালো বীজ উৎপাদন করে আসছেন কৃষকরা। তাছাড়া এখানে যুগযুগ ধরে বাণিজ্যিকভাবেই কৃষক আমন চারা উৎপাদন করছেন। যার ফলে কাউখালীতে গড়ে উঠেছে এই ভাসমান বাজার, যা অন্য এলাকায়ও এ মৌসুমে আমন চারার সংকট মোকাবেলা করে থাকে।