চলনবিলে শামুক নিধন বন্ধ করার উদ্যোগ নিন
:: চাটমোহর, পাবনা থেকে ইকবাল কবীর রনজু
শামুক একটি উপকারী প্রাণী
শামুক নামটির সাথে আমরা ছোট বড় সবাই পরিচিত। শামুক একটি উপকারী প্রাণী এবং প্রকৃতি ও মানুষের বন্ধু। শামুক প্রকৃতিকে নানাভাবে ভারসাম্য ধরে রাখতে সহায়তা করে। এর ডিম মাছের পোনার খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়। শামুক নিঃসৃত পানির রয়েছে নানান ঔষধি গুণ। একটি কথা প্রচলিত রয়েছে যে, ঠান্ডা পাত্রে রক্ষিত শামুক নিঃসৃত পানি যে কোন ধরণের চোখের রোগের জন্য খুবই উপকারী। প্রাকৃতিক ফিল্টার খ্যাত শামুক পচে জমির মাটিতে প্রাকৃতিকভাবে ক্যালসিয়াম, ফসফরাস ও পটাশ সরবরাহ করে। ফলে জমির উর্বরতা বৃদ্ধিসহ ধানগাছের শেকড় মজবুত ও ফলন অধিক হতে সাহায্য করে। শামুক দূষিত পানি ফিল্টারিং করে প্রাকৃতিকভাবে পানিকে দূষণ মুক্ত রাখে। তবে অর্থকরী এ প্রাণীটি আজ প্রায় বিলুপ্তির পথে। চলনবিল এলাকার বিভিন্ন জলাভূমি ও কৃষিজমি থেকে নির্বিচারে শামুক নিধনের কাজ চলছে। শামকু নিধনের কাজটি বন্ধ না হলে পরিবেশ ও প্রাণবৈচিত্র্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। ইতিমধ্যে চলনবিল এলাকায় শামুক নিধনের কারণে নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ততার শিকার হয়েছে কৃষিজমি, দেশীয় মাছ ও প্রাকৃতিক পরিবেশ।
চলনবিলে চলছে শামুক নিধন
চলন বিলের বিস্তীর্ণ জলাভূমি থেকে প্রতিদিন শত শত বস্তা শামুক উত্তোলন করা হচ্ছে। মূলত দরিদ্র মানুষেরাই এ শামুকের উত্তোলনের কাজ করেন। জীবিকা নির্বাহের তাগিদে তাঁদেরকে এ কাজ করতে হয় বলে তাঁরা জানান। এ এলাকার শামুক উত্তোলন করে দরিদ্র মানুষেরা বিক্রি করেন পাইকারদের কাছে। পাইকাররা শামুক কিনে পাঠিয়ে দিচ্ছে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, খুলনাসহ বিভিন্ন এলাকার চিংড়ি ঘেরে। চলনবিল এলাকার চাটমোহরের মথুরাপুর গ্রামের ওয়াপদা বাঁধের বাসিন্দা বাখাতন, নাজমা, আসমা ও ফাতেমারা জানান, কোন কাজ না পেয়ে জীবিকা নির্বাহের জন্যই তাঁরা শামুক উত্তোলন করছেন। বাখাতনের স্বামী আব্দুল জুব্বার কয়েকবছর আগে মৃত্যুবরণ করেন। চার ছেলে দুই মেয়ে। কোন জমি-জমাও নেই! তাই সংসার পরিচালনার জন্য
তিনি প্রতিবছর আশ্বিনের মাঝামাঝি থেকে কার্তিকের মাঝামাঝি পর্যন্ত শামুক সংগ্রহ করে বিক্রি করে থাকেন। আমরা মনে করি, শামকু নিধনের কাজ বন্ধ করার জন্য যাঁরা এই শামকু উত্তোলন কাজের সাথে জড়িত তাঁদের জন্য বিকল্প পেশার নিশ্চয়তা দিতে হবে। পেটের টানেই এসব দরিদ্র মানুষেরা এ কাজ করেছেন। সুতরাং বিকল্প পেশা ব্যবস্থা করলে এবং শামুক হত্যার নেতিবাচকতা এবং শামুকের উপকারিতা সম্পর্কে সাধারণ মানুষকে সচেতন করার উদ্যোগ নিলে শামুকের মতো উপকারী প্রাণীসহ আরও অনেক প্রাণ মানুষের হাত থেকে বাঁচতে পারে।
উপসংহার
চলনবিল এলাকায় শামুক উত্তোলনের ফলে কমে যাচ্ছে দেশী প্রজাতির মাছের উৎপাদন। খাদ্যশৃঙ্খলও ভেঙে যাচ্ছে! দেশীয় প্রজাতির মাছ তথা কৈ, শিং, টাকি, টেংরা, শৈল মাছের ডিম থেকে সদ্যজাত পোনার একমাত্র খাদ্য হচ্ছে শামুকের নরম ডিম। কিন্তু শামুক নিধনের কারণে মাছের পোনা খাবার পাচ্ছে না। এতে করে কমে যাচ্ছে দেশীয় মাছের প্রাপ্তি। তাই দেশীয় মাছকে রক্ষা, বৃদ্ধির জন্য এবং পরিবেশের ভারসাম্য ও প্রাকৃতিক খাদ্যশৃঙ্খলকে রক্ষার জন্য শামকুসহ অন্যান্য প্রাণবৈচিত্র্য হত্যা বন্ধ করার উদ্যোগ নিতে হবে। এক্ষেত্রে রাষ্ট্রসহ, বেসরকারি সংস্থাগুলো এবং সাধারণ মানুষকে এগিয়ে আসতে হবে।