আমার বিদ্যালয় আমার দায়িত্ব
:: নেত্রকোনা থেকে হেপী রায় ::
বিদ্যালয়ের শ্রেণীকক্ষ, আঙিনা ও পরিবেশ সুন্দর রাখার জন্য এবং উক্ত চর্চায় নিজেদের যুক্ত করার মাধ্যমেই নেত্রকোণা জেলার লক্ষ্মীগঞ্জ ইউনিয়নের অন্তর্গত লক্ষ্মীগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়কে একটি আদর্শ বিদ্যালয় হিসেবে সকলের সামনে তুলে ধরার জন্য এই বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা একটি উদ্যোগ গ্রহণ করে। তাদের এই উদ্যোগকে আরও ফলপ্রসু করার জন্য বারসিক কিছু ফেস্টুন ও বিদ্যালয়ের আঙিনা পরিচ্ছন্ন রাখার জন্য তিনটি ডাম্পার (ময়লা ফেলার ঝুড়ি) দিয়ে সহায়তা করে।
এই সময়োপযোগী উদ্যোগকে বাস্তবায়ন করার জন্য স্কুলের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা সিদ্ধান্ত নেয় যে, তারা বিদ্যুতের অপচয় রোধে শ্রেণিকক্ষের লাইট ও ফ্যানের সীমিত ব্যবহার এবং ক্লাস শেষে এগুলো নিজ দায়িত্বে বন্ধ রাখবে। তারা অকারণে পানির অপচয় করবে না, বিভিন্ন ময়লা কাগজ, প্লাস্টিকের বোতল, পলিব্যাগ, বাদামের খোসা, চিপস্ এর প্যাকেট ইত্যাদি বিদ্যালয়ের আঙিনায় না ফেলে নির্দিষ্ট ঝুড়িতে ফেলবে, যেখানে সেখানে কফ, থুতু ফেলবে না এবং টয়লেট ব্যবহারের সময় স্যান্ডেল ও সাবান ব্যবহার করবে। এই অভিনব উদ্যোগ বাস্তবায়নে আন্তরিক থাকায় বর্তমানে লক্ষ্মীগঞ্জ একটি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন এবং সচেনতার দিক থেকে একটি আদর্শ বিদ্যালয়ে পরিণত হয়েছে। কারণ বিগত প্রায় ছয় মাস যাবৎ লক্ষ্মীগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা নিজেদের বিদ্যালয়কে একটি আদর্শ বিদ্যালয়ে পরিণত করার জন্য কাজ করে যাচ্ছে। উপরোক্ত সিদ্ধান্তগুলো ছাড়াও প্রধান শিক্ষকের বিশেষ আগ্রহে প্রত্যেকটি শ্রেণি থেকে একজন করে দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষার্থী নিয়মিত শ্রেণিকক্ষ পরিষ্কার করছে। তাদের কার্যক্রম পরিচালনার জন্য সমন্বয়কারী হিসেবে একজন শিক্ষক রয়েছেন এবং এ সব বিষয় তত্বাবধানের দায়িত্বে আছেন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. এ.টি.এম এখলাছুর রহমান নিজেই। প্রধান শিক্ষক ময়লার ঝুড়িগুলো বিদ্যালয়ের বারান্দায় রাখার ব্যবস্থা করেছেন এবং ফেস্টুনগুলো বিদ্যালয়ের বিভিন্ন জায়গায় টানিয়ে রেখেছেন, যাতে করে শিক্ষার্থীরা ছাড়াও প্রতিষ্ঠানে আগত অতিথিবৃন্দ এগুলো দেখার সুযোগ পান এবং জ্বালানির অপচয় রোধ, পরিবেশ রক্ষা ইত্যাদি সম্পর্কে ধারণা লাভ করেন। সপ্তাহে একদিন শ্রেণিকক্ষ পরিষ্কার করে ময়লা আবর্জনা ঝুড়িতে জমা করা হয় এবং প্রতিমাসে একদিন সকল শিক্ষার্থী মিলে বিদ্যালয়ের আঙিনা পরিষ্কার করে।
শুধু তাই নয়, প্রধান শিক্ষক বিদ্যুৎ ব্যবহারে সাশ্রয়ী হতে এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানি শক্তির ব্যবহার করার উদ্যেশ্যে তাঁর বিদ্যালয়ে একটি সোলার প্যানেল এর সংযোগ নিয়েছেন। তিনি বিভিন্ন সময়ে শিক্ষার্থীদের এ বিষয়ে উদ্বুদ্ধ করতে তাদের সাথে বিভিন্ন আলোচনা করে থাকেন। পরিবেশ বান্ধব চর্চা সম্পর্কে তিনি বলেন, “আমি চাই শুধু আমার প্রতিষ্ঠান নয়, আমার অঞ্চলের সব প্রতিষ্ঠানগুলো এই ধরণের উদ্যোগের সাথে জড়িত হোক। আমি আমার শিক্ষার্থীদের বলি, তারা যেন নিজেদের বাড়িতেও এই চর্চা করে। তাদেরটা দেখে গ্রামের অন্যরাও যেন আগ্রহী হয়।”