সাতক্ষীরায় কুড়িয়ে পাওয়া উদ্ভিদবৈচিত্র্যের পাড়া মেলা : শতাধিক শাক-সবজির পসরা
::সাতক্ষীরা থেকে শেখ তানজির আহমেদ::
গ্রামীণ অপুষ্টি দূরীকরণে বরাবরই ভূমিকা রাখছে কুড়িয়ে পাওয়া উদ্ভিদ বৈচিত্র্যগুলো। বাংলাদেশের খাল-বিল, নদী-নালা, পতিত জমি, বাড়ির আশপাশেই রয়েছে এসব উদ্ভিদবৈচিত্র্যগুলো যা মানুষের খাদ্যদ্রব্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়, আবার যেগুলো মানুষ খায় না সেগুলো পশু খাদ্য হিসেবেও স্বীকৃত। এসব উদ্ভিদবৈচিত্র্যগুলো সংরক্ষণ যেমন জরুরি, তেমনি এর ব্যবহারও বাড়ানো দরকার। মূলত এসব উদ্ভিদবৈচিত্র্যগুলো সংরক্ষণে স্থানীয় জনগণ কিভাবে ভূমিকা রাখতে পারে সে বিষয়ে সচেতনতা তৈরি এবং উদ্ভিদবৈচিত্র্য সনাক্তকরণ, শ্রেণিকরণ, সংরক্ষণ, সম্প্রসারণ ও ব্যবহার বৃদ্ধির লক্ষ্যে বারসিক গত ২৯ নভেম্বর, ২০১৫ সাতক্ষীরা সদর উপজেলার তুজলপুরে কুড়িয়ে পাওয়া অচাষকৃত উদ্ভিদবৈচিত্র্য নিয়ে আয়োজন করে এই পাড়া মেলা। মেলার উদ্বোধন করেন ঝাউডাঙ্গা ইউপি চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম।
আমরুল, তেলাকচু, ঘ্যাটকল, সনচি, কাটানটি, কলমি, হেলাঞ্চা, থানকুনি, বউটুনি, ব্রাহ্মি, আতাড়িপাতাড়ি, বেত, তিত বেগুন, কাটাকচু, বন কচু, ডুমুর, কলার মোচা, গাধমনিসহ শতাধিক কুড়িয়ে পাওয়া শাকসবজি উঠেছিল মেলায়। গ্রামের গৃহবধূরা প্রতিযোগিতা করেই এগুলো সংগ্রহ করেছে। কুড়িয়ে পাওয়া শাকসবজির এ মেলাকে ঘিরে সবার মাঝে ছিল উৎসবের আমেজ। সবাই যেন নিজেকে চিনেছে নতুন করে। একই সাথে মেলায় আগত অতিথিবৃন্দ আনন্দে উদ্বেলিত হন, মিশে যান প্রকৃতির সাথে।
মেলায় তুজলপুর গ্রামের অর্ধশতাধিক গৃহবধূ কুড়িয়ে পাওয়া শতাধিক প্রজাতির শাকসবজির পসরা সাজান। কেউ ৮০ প্রজাতি, কেউ ৫০ প্রজাতি আবার কেউবা ২৫ প্রজাতির উদ্ভিদবৈচিত্র্য কুড়িয়ে এনে সাজান নিজের পসরা। আর এগুলো দেখতে ভীড় জমায় নারী-পুরুষ-আবাল-বৃদ্ধ-বণিতা সবাই।
মেলায় কুড়িয়ে পাওয়া সর্বোচ্চ ৮০ প্রজাতির শাক-সবজি প্রদর্শন করে ফজিলা খাতুন প্রথম স্থান, ৫০ প্রজাতির শাক-সবজি প্রদর্শন করে নিলুফা খাতুন দ্বিতীয় স্থান ও ৪৮ প্রজাতির শাক-সবজি প্রদর্শন করে ফাতেমা খাতুন তৃতীয় স্থান অধিকার করেন।
পরে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থান অধিকারীর হাতে পুরস্কার তুলে দেন অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি সাতক্ষীরা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কাজী আব্দুল মান্নান।
এ সময় প্রধান অতিথি বলেন, “আমাদের চারপাশে কুড়িয়ে পাওয়া এসব অচাষকৃত শাকসবজি পুষ্টির ভন্ডার। এগুলো সংরক্ষণ ও ব্যবহারের মাধ্যমে পারিবারিকভাবে অপুষ্টি দূর করা সম্ভব।” সাথে সাথে তিনি এসব অচাষকৃত উদ্ভিদবৈচিত্র্যের পুষ্টিগুণ সম্পর্কে জানতে সবার প্রতি আহবান জানান।
পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে স্থানীয় তুজলপুর-আখড়াখোলা সিআইজি সমবায় সমিতির সভাপতি ইয়ারব হোসেনের সভাপতিত্বে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, জেলা কৃষি প্রশিক্ষণ অফিসার জিএ আব্দুল গফুর, সদর উপজেলা কৃষি অফিসার আমজাদ হোসেন, ব্যাংকার সালাউদ্দিন আহমেদ, উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা হাসান রেজা, উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা কিরন্ময় সরকার, বারসিক’র আঞ্চলিক সমন্বয়কারী শাহীন ইসলাম, ব্যবসায়ী ফারুক হোসেন, জামাল নাসের ডিউক, তুজলপুর-আখড়াখোলা সিআইজি সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক গোলাম রহমান, শাহাঙ্গীর আলম, সাংবাদিক আব্দুস সামাদ প্রমুখ।