তরুণই শক্তি, তরুণই ইতিবাচক পরিবর্তনের প্রতিনিধি
গত ১২ ডিসেম্বর,২০১৫ ইং শনিবার, রাজশাহীর তানোর উপজেলা অডিটরিয়ামে বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের বিশেষ বৈশিষ্ট্যপূর্ণ বরেন্দ্র অঞ্চলের রাজশাহী সদর, তানোর, নাচোল, গোদাগাড়ী, মান্দা, পত্নীতলা, মহাদেবপুর, নাটোর, পবা ও গাইবান্ধার চরাঞ্চলসহ নানা প্রান্ত থেকে তরুণ ও অভিজ্ঞ স্বজনদের অংশগ্রহণে “আমার বরেন্দ্র-আমার উন্নয়ন” বিষয়ক বরেন্দ্র তরুণ উৎসব ও অভিজ্ঞ স্বজন সমাবেশ-২০১৫ অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত উৎসবে বরেন্দ্র অঞ্চলের বর্তমান প্রজন্মের সচেতন তরুণরা বরেন্দ্র উন্নয়নে তাদের স্বপ্ন ও সম্ভাবনার কথা বলেন এবং অধিক অভিজ্ঞ বরেন্দ্র স্বজন তাঁদের স্বপ্ন পূরণের বাস্তব উদাহরণগুলো তুলে ধরেন। উক্ত উৎসবে “বরেন্দ্র অঞ্চল ও বাংলাদেশঃ আগামী দশকের শতাব্দীর তরুণ প্রত্যাশা” শীর্ষক একটি সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়। সংলাপে তরুণরা তাদের কর্মসূচি ও স্বপ্নগুলো সবার সাথে সহভাগিতা করেন এবং একটি ইতিবাচক পরিবর্তন রচনায় কাজ করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন। এই সংলাপের প্রত্যেক আলোচকদের বক্তব্যকে ভিত্তি করে বর্তমান লেখাটি সাজিয়েছেন মো. এরশাদ আলী ও মো. শহীদুল ইসলাম।
মনিরুজ্জামান ভুইঞা
উপজেলা নির্বাহি কর্মকর্তা, তানোর
বরেন্দ্র অঞ্চলের শস্য বৈচিত্র্যতা বৃদ্ধি করার জন্য আমাদের কাজ করতে হবে। তানোর অঞ্চলে প্রতিনিয়ত ধান চাষের জন্য মাটির নিচ থেকে পানি উত্তোলনের কারণে পানির স্তর নিচে নেমে যাচ্ছে। ফলে পানির জন্য হাহাকার তৈরি হচ্ছে। এজন্য বর্তমান তরুণ সমাজকে এগিয়ে আসতে হবে। কারণ তারা যদি এখন থেকে ধানের পাশাপাশি অন্যান্য ফসল চাষ করেন তাহলে ভবিষ্যতে পানির সংকট অনেকটাই কমে আসবে। শুধু কৃষি নয়; এর পাশাপাশি তরুণদের বিভিন্ন সামাজিক কাজে আরও বেশি এগিয়ে আসা দরকার।
তানোর অঞ্চল তথা বরেন্দ্র অঞ্চলকে অনেকেই নিচু দৃষ্টিতে দেখেন যেটি আমরা চাই না। মানুষের এই দৃষ্টিভঙ্গিকে পরিবর্তন করতে হবে। আর এর জন্য এলাকার তরুণ শক্তিকেই এগিয়ে আসতে হবে। বাল্যবিবাহ রোধ, যৌতুক প্রথার বিলোপ, মাদকমুক্ত এলাকা গঠনের মতো কাজগুলো করার জন্য তরুণদের কোন বিকল্প নেই। পাশাপাশি সমাজে যারা প্রবীণ আছেন তারা অনেক বেশি অভিজ্ঞ ফলে তাদের নিকট থেকেও পরামর্শ নিতে হবে। আমরা যদি একত্রিত হতে পারি তাহলে সমাজ পরিবর্তনে কেউ আমাদের পথে বাধা হতে পারবে না।
সুমন শীল
বন্য প্রাণী সংরক্ষক, পত্নীতলা, নওগাঁ
আমরা এলাকার বেশ কিছু তরুণ পাশাপাশি প্রবীণরা মিলে এলাকার বন্যপ্রানী সংরক্ষণের জন্য একটি কমিটি গঠন করেছি। এই কমিটির কাজ হল মানুষকে বন্য প্রাণী সংরক্ষণে সচেতন করা এবং বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ সংক্রান্ত যে সকল আইন আছে সেগুলো সম্পর্কে এলাকার মানুষকে অবহিত করা। বন্যপ্রাণী সম্পর্কিত আইনগুলো না জানার কারণে মানুষ এগুলোকে হত্যা করে। তাই এই আইনগুলো যদি মানুষকে জানানো যায় তাহলে বন্যপ্রাণী হত্যা থেকে মানুষ অনেকটাই বিরত থাকবে। আমাদের কার্যক্রমের ফলে এলাকার বন্যপ্রাণী হত্যা অনেকটাই বন্ধ হয়েছে।
মো. ইউনুসুর রহমান হেবজুল
অভিজ্ঞ স্বজন, নওগাঁ
আমাদের সংগঠনের নাম জীবন। আমরা যখন এই সংগঠনটি শুরু করি তখন অনেকেই এটির সমালোচনা করেন এবং অন্যান্য অনেক পেয়েছি। সকল প্রতিকূলতাকে কাটিয়ে আমরা সংগঠনকে দাঁড় করিয়েছি। বর্তমানে সংগঠনের সাথে অনেক মানুষ যুক্ত হয়েছে এবং অনেকে প্রশংসিত হয়েছেন। আমাদের সংগঠনটি এলাকার পাখি রক্ষার জন্য বিভিন্ন প্রচারণামূলক কাজ করে যাচ্ছে এবং আমাদের এই কাজের ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি আমাদের এলাকায় পাখি শিকার নিষিদ্ধ করেছি। বর্তমানে আমাদের এলাকায় পূর্বের তুলনায় পাখির সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। এখন অনেক মানুষই আমাদের এলাকায় পাখি দেখতে আসেন। সংগঠনটি বর্তমানে আমাদের এলাকার বাইরেও অন্যান্য এলাকাতে পাখি শিকার বন্ধে প্রচারণা চালাচ্ছে।
বোরহান বিশ্বাস
তৃণমূল সাপ গবেষক
কৃষি কাজে অতিরিক্ত পরিমাণে রাসায়নিক সার ব্যবহারের কারণে মাটি এবং পরিবেশ উভয়েরই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। রাসায়নিক সার ও কীটনাষক ব্যবহারের কারণে মাটিতে থাকা কেঁচো মরে যাচ্ছে যা প্রাকৃতিক লাঙ্গল হিসেবে কাজ করে। পানি না থাকলে গাছ থাকবে না। আর গাছ না থাকলে আমরা থাকবো না। সাপ যে সবসময় মানুষের ক্ষতি করে তা না, এটি মানুষের উপকারও করে। কোন ধানের জমিতে যদি সাপ থাকে তাহলে সেই সাপের কারণে জমিতে ইঁদুরের উৎপাত কম হয় আর ইঁদুরের উৎপাত কম হলে কৃষকের ফসল কম ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ফলে আমাদের তরুণদের এই বিষয়গুলো মাথায় রেখে কাজ করতে হবে।
মো. শামসুদ্দিন মন্ডল
গেছো মামা, মহাদেবপুর , নওগাঁ
৭১-এ দেশকে স্বাধীন করতে অস্ত্র হাতে লড়াই করেছি। এখন দেশের প্রাকৃতিক পরিবেশ বাঁচাতে গাছ লাগানোর মাধ্যমে লড়াই করছি। আমার একটি নার্সারি আছে এবং এই নার্সারির মাধ্যমে আমি বিভিন্ন এলাকায় এখন পর্যন্ত প্রায় ১৪ লাখ গাছ লাগিয়েছি যা আমাকে অন্যদের থেকে ভিন্ন করে তুলেছে। তরুণদের মুক্তিযুদ্ধের কথা স্মরণ রাখতে হবে। যে কোন ভালো কাজ করতে গেলে সেখানে বাধা আসবেই কিন্তু সেই বাধাকে ভয় পেয়ে পিছিয়ে আসলে হবে না যেমনটি আমরা পিছ পা হইনি। বাধাকে অতিক্রম করেই আমাদের এগিয়ে যেতে হবে তাহলেই সফলতা আসবে। পরিবেশ রক্ষা ও অন্যান্য সামাজিক কাজে তরুণদেরই ভূমিকা বেশি হওয়া উচিৎ বলে আমি মনে করি। তরুণদের যে কোন কাজ করার পূর্বে বড়দের পরামর্শ ও মতামত গ্রহণের মানসিকতা থাকতে হবে ।
অসীম কুমার সরকার
সাংষ্কৃতিক সংগঠক, তানোসপরি
তানোর , রাজশাহী
তানোর সাহিত্য পরিষদটি প্রায় বিলুপ্তের কাছাকাছি চলে গিয়েছিল। আমরা এলাকার তরুণ ও প্রবীণদের একত্রিত করে আবার কাজ শুরু করেছি। মানব জীবনে সাহিত্য চর্চার গুরুত্ব বলে শেষ করা যাবে না। তরুণরাই পারে একটি এলাকার সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে সেগুলো সমাধান করতে। একটু সাহস ও কাজ করার আগ্রহ থাকলেই কেবলমাত্র যেকোন কাজ করা সম্ভব।
দেবশ্রী মন্ডল
শিক্ষার্থী, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের
রাজশাহী শহরের তিনটি তরুণ সংগঠন ইচ্ছে, ছোট্ট স্বপ্ন ও নব জাগরণ। এই তিনটি সংগঠনই মূলত একই ধরনের কাজ করে আসছে আর সেটি হল: শিক্ষা বঞ্চিত পথ শিশুদের জন্য শিক্ষা নিশ্চিত করা। এদের মধ্যে ”ইচ্ছে” কাজ করে রাজশাহীর বিনোদপুরের বস্তিতে বসবাসকারী কিছু শিশুদের নিয়ে। তারা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিদিন বিকালে এই শিশুদের নিয়ে বসে এবং পাঠ দান করে। “ছোট্ট স্বপ্ন” রাজশাহীর ছোট বনগ্রাম বস্তির শিশুদের শিক্ষা নিশ্চিত কররা উদ্দেশ্যে কাজ করে। অন্যদিকে, “নব জাগরণ” রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের হরিজন পল্লীর শিশুদের শিক্ষা নিশ্চিতের জন্য কাজ করে।
প্রথমদিকে আমাদেরকে বিভিন্ন বাধার সম্মুখীন হতে হয়েছে কিন্তু আমরা পিছপা হইনি। আমাদের কাছে কোন টাকা ছিল না, কোন আয়ের উৎস ছিল না, বাচ্চাদের নিয়ে বসার কোন স্থান ছিল না। এই প্রতিকূল অবস্থা থেকে এখন অনেকটাই কাটিয়ে উঠতে পেরেছি। আমাদের স্বপ্ন আমাদের কার্যক্রমকে শুধু রাজশাহী অঞ্চলের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখবো না, এই কার্যক্রমকে অন্যান্য এলাকাতেও ছড়িয়ে দিতে চাই।
আদর্শ সমাজ গঠনে শিক্ষার কোন বিকল্প নেই। শিক্ষাই পারে একটি সমাজ একটি দেশকে পরিবর্তন করতে কিন্তু দুঃখের বিষয় এই যে, আমাদের দেশের প্রতিটি শিশু শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ পায় না। ফলে সমাজ পরিবর্তনে তারা অংশগ্রহণ করতে পারে না। আমারা আমাদের সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে সেই চেষ্টাই করে যাচ্ছি যেন শিক্ষা বঞ্চিত শিশুরা শিক্ষার আলোয় নিজেদের আলোকিত করতে পারে এবং দেশ গঠনে ভূমিকা রাখতে পারে। যদিও আমাদের কর্যক্রমটি এখনও খুবই সীমিত পর্যায়ে আছে কিন্তু আমরা স্বপ্ন দেখি যে, একদিন আমাদের মতো সব তরুণরা আমাদের কাজের সাথে নিজেদের শামিল করবে এবং দেশের ইতিবাচক পরিবর্তনে ভূমিকা রাখবে।
রুবেল হোসেন
সভাপতি, স্বপ্নচারী যুব সংগঠন
তানোর, রাজশাহী
স্বপ্নচারী তার নিজ গ্রামের শিশুদের শিক্ষা ও সামাজিকীকরণের জন্য কাজ করে চলেছে। সংগঠনটি বিনামূল্যে শিশুদের পড়া এবং বিভিন্ন নেতিক শিক্ষা প্রদান করে থাকে। সংগঠনের সদস্যরা নিয়মিত সন্ধ্যার পর বাড়ি বাড়ি গিয়ে দেখন যে, বাচ্চারা পড়ছে কি না, কোন সমস্যা হলে সমাধান করে দেওয়ার চেষ্টা করেন। ভবিষ্যতে তারা শিশুদের জন্য বিনামূল্য কোচিং সেন্টারের ব্যবস্থা করবেন বলে জানান। আর এর জন্য আমরা আরো অনেক তরুণকে সম্পৃক্ত করার চিন্তাভাবনা করছি এবং আহ্বান করছি তরুণদেরকে। পাশাপাশি আমরা প্রবীণদেরও সহযোগিতাও কামনা করি। সম্প্রতি আমরা গ্রামের একটি রাস্তা সংষ্কারের করেছি। এই রাস্তাটি অনেকদিন ধরেই সংষ্কারের অভাবে চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছিল। আমাদের এই সংগঠনটি রাস্তাটি সংষ্কারের উদ্যোগ গ্রহণ করে এবং সেটিকে চলাচলের উপযোগী করে তুলে। নিজেদের উদ্যোগেই আমরা এই রাস্তাটি সংস্কার করি; কারো সহযোগিতা নিইনি। আমার মতে, তরুণ শক্তির এটি একটি ভালো উদাহরণ হতে পারে যে তরুণরা চাইলেই অনেক কিছু করতে পারে শুধুমাত্র কাজ করার মানসিকতা থাকতে হবে।
সবজুল ইসলাম
তরুণ সমন্বয়ক- বরেন্দ্র তরুণ উৎসব-২০১৫
আমরা তরুণ, আমরা যুবা। আমরাই পারি আমাদের বরেন্দ্র অঞ্চলকে সকল প্রাণের জন্য নিরাপদ ও বাসযোগ্য করে গড়ে তুলতে। আমরা, তরুণরা থেমে নেই। আমরা আমাদের গ্রামকে নিরক্ষরমুক্ত করার জন্য কাজ করছি, আমাদের গ্রামের সনাতন ধর্মালম্বীদের সৎকারের জায়গার জন্যে কাজ করছি, নিজেদের এলাকার হারিয়ে যাওয়া খেলাধুলাগুলো আবার চর্চার মাধ্যমে ফিরে আনার জন্য চেষ্টা করছি। আমরা গ্রামের পুকুরে বিষ প্রয়োগে বাধা দিয়েছি। আমরা বিষমুক্ত খাবারের জন্যে লড়াই করছি। আমরা আমাদের শিব নদী দখল ও দূষণমুক্ত করতে নানাভাবে তদ্বির করছি। আমরা আমাদের প্রাকৃতিক খাদ্য সম্ভার রক্ষায় স্কুল কলেজ এবং কৃষক সংগঠনে সচেনতামূলক আলোচনা করছি। গ্রামের দরিদ্র এবং মেধাবী শিক্ষার্থীরা যাতে তাদের লেখাপড়া চালিয়ে যেতে পারে সে জন্য যৌথভাবে সহায়তা করছি। এলাকার খাল-খাড়ি খননে সরকারি এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সাথে সংলাপ করছি।
মো. মাহাবুব আলম শান্ত
মান্দা,নওগাঁ তরুন প্রতিনিধি
প্রত্যন্ত গ্রামে আমাদের বসবাস, সাওতাল, হরিজন, মুন্ডা, পাহান, হিন্দু-মুসলমানের সহ-অবস্থান আমাদের গ্রামগুলো। আমাদের মান্দার সামাজিক উন্নয়নে সাধ্যমত চেষ্টা করে যাচ্ছি আমরা তরুণরা। এলাকায় ইভটিজিং, বাল্যবিবাহ, যৌতুক প্রথার বিরুদ্ধে মানুষকে সচেতন করে তুলি আমরা। কোথাও কোন বাল্য বিবাহ হলে বা হওয়ার সম্ভাবনা দেখলে আমরা সেই পরিবারের কর্তাকে বোঝানোর চেষ্টা করি, যদি না মানেন আমরা আইনশৃঙ্গলা বাহিনীর সহায়তা নিই। তরুণদের মাদক থেকে দুরে রাখতে আমরা বিভিন্ন খেলা ধুলার ব্যবস্থা করি। আমরা নিজেরা মাদকের কুফল সম্পর্কে আলোচনা করি এবং অন্যান্য তরুণদের বলি। আমরা গ্রামের দরিদ্র এবং অতি দরিদ্রদের সহায়তার জন্যে ইউনিয়ন এবং উপজেলা পর্যায়ে যোগাযোগ করে ভিজিডি, ভিজিএফসহ প্রতিবন্ধীর তালিকা করে জমা দিই যাতে তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়। নানা বাধা বিপত্তি আসা সত্ত্বেও আমরা এসব কাজ করে যাচ্ছি, আমাদের যদি একটি বৃহৎ ঐক্য থাকে তাহলে কোন বাধাই আমাদের আটকাতে পারবে না।
আমরা মান্দার তরুণরা আমাদের অঞ্চলের সব ধরনের ঐতিহাসিক স্থাপনা সংরক্ষণ করার উদ্যোগ গ্রহণ করছি। আমরা আত্রাই এবং শিবনদীর আবার মিলন দেখতে চাই। নদীর মুখে বাঁধের অপসারণ চাই। বহু জাতির বসবাস আমাদের মান্দা তথা সম্পূর্ণ বরেন্দ্র অঞ্চল। আদিবাসীরা ভুমির অধিকার থেকে বঞ্চিত। সেই সাথে তারা সমাজে অবহেলিত। আমরা আদিবাসীদের মর্যাদার সাথে দেখতে চাই। সর্বত্র-সবখানে তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হোক। বরেন্দ্র অঞ্চলে কোন শিল্প কলকারখানা না থাকার কারণে আমরা তরুণরাই বেশি বেকারত্বের শিকার হই, বরেন্দ্র অঞ্চলে কলকারখানা করা হোক।
মো. মামুনুর রশিদ
মহাদেবপুর, নওগাঁ
গুরুজনরা বলেন, স্বাধীনতা পাওয়ার থেকে রক্ষা করা কঠিন, আমরা তাই সেই স্বাধীনতাকে সুরক্ষা করতে চাই। ২০১০ সাল এর আগে থেকেই আমি বাংলাদেশ বেতারসহ বিশ্বের নানা দেশের বেতার অনুষ্ঠানগুলো শুনি। নানা সমস্যার সমাধান জানতে চিঠি লিখি, উত্তরও পাই। কৃষকের শস্য ফসলের রোগবালাই দমনের জন্যে পরামর্শ চাই, তাও পাই। এভাবে স্বাস্থ্য, শিক্ষা, কিশোর-কিশোরীর সমস্যা, বাল্য বিবাহ, নারী নির্যাতন, যৌতুক প্রতিরোধ আইন, প্রাণবৈচিত্র্যের উপকার এবং আইনসহ আরো কতো কি আমি বেতার থেকেই শিখতে পারি। কিন্তু গ্রামাঞ্চলে নানান সামাজিক ও পরিবেশ সমস্যা দেখতে পাই। বাল্যবিবাহ, জমিতে বেশি পরিমাণে কীটনাশক ও রাসায়নিক সার দেওয়া, বন্দুক দিয়ে নির্বিচারে পাখি শিকারসহ নানান সমস্যা। এসব দেখে ঠিক থাকতে পারি না। কারণ আমি জানি বন্যপ্রাণী বা পাখি হত্যা বা শিকার করলে জেল জরিমানা হয়।
২০১৩ সালে কয়েকজন কৃষক এবং স্থানীয় পাড়া প্রতিবেশীদের নিয়ে আমরা নিয়মিত কৃষি এবং স্বাস্থ্যসচেতন এবং বাল্য বিবাহের কুফলসহ বিভিন্ন সচেতনতামূলক অনুষ্ঠানগুলো শুনি, দেখি এবং বাস্তবে সেই শিক্ষাকে কাজে লাগাতে চেষ্টা করি। গ্রামে পাখি শিকারী বন্ধ করার উদ্যোগ নিই। এভাবে আমরা নিজের গ্রামকে পাখি শিকারমুক্ত গ্রাম করতে পেরেছি। কৃষক তার ফসলের সমস্যা নিয়ে আসলে সরাসরি কথা বলে তার সমাধান পায়। এভাবে ধীরে ধীরে একটি ক্লাব গঠন করি। যার নাম দিই সোনালি রেডিও ক্লাব।
এখন নিয়মিত সামাজিক উন্নয়নমূলক কাজ করি। রেডিওতে সম্প্রচারিত সব অনুষ্ঠান যেমন-কমিউনিটি শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও সমাজ, নারীর অধিকার, গ্রামীণ ও এলাকাভিত্তিক উন্নয়ন, পরিবেশ, আবহাওয়া ও নিজের সাংস্কৃতিক বিষয় সম্পর্কিত অনুষ্ঠানগুলো নিয়মিত শুনি। সেগুলো নিয়ে সদস্যদের নিয়ে আলোচনা করি এবং শিক্ষাগুলোকে কাজে লাগাতে চেষ্টা করি। আমরা সদস্যরা পরিবেশ ও প্রাণবৈচিত্র্য রক্ষায় গণনাটক করেছি। এলাকার সফল এবং ভালো কৃষকদের রেডিওতে সাক্ষাতকার দেবার ব্যবস্থা করি। আগামীতে আমরা এই কার্যক্রম বরেন্দ্র এলাকায় ছড়িয়ে দিতে চাই।
শফি আলম
তরুণ সংগঠক, কালাসেনার চর, ফুলছরি, গাইবান্ধা
এ পর্যন্ত তিনবার নদী ভাঙনের শিকার হয়েছি। আমার সাথে আরও যারা আছেন তারা কেউ কেউ এর থেকেও বেশি নদী ভাঙনের শিকার হয়েছে। জমা-জমি হারিয়ে বিভিন্নজন বিভিন্ন খানে বসত গড়েছি। তবুও আমরা খুব পাশাপাশি আছি, বিভিন্ন উৎসব আর সমস্যায় আমরা একত্রিত হই। আমাদের সংগঠনের (কালাসোনা কৃষক সংগঠন) কোন সভা বা কোন যৌথ কাজ থাকলে আমরা একত্রিত হই, নিজেদের সম্পর্ক এবং সহায়তা অটুট রেখেছ আমাদের সংগঠনটি। এর মাধ্যমেই আমরা তৈরি করেছি কালাসোনাচর নাট্য দলটি। কাবিলপুর চর, কালাসেনার চর, উড়িয়ার কিছু তরুণদের নিয়ে আমরা একটি নাট্য দল তৈরি করেছি। শত সংকট আর সমস্যার মধ্যেও আমরা এই নাটকের মধ্যে দিয়ে নানা ধরনের সচেনতামূলক বিষয়গুলো তুলে ধরার চেষ্টা করি। আগামীতে চরের উন্নয়নে আমরা আরো নাটক রচনা করতে পারবো। চরের এই নাটকের দলটি যেন আমরা জাতীয় পর্যায়ে তুলতে ধরতে পারি এ বিষয়ে সবার সহযোগিতা কামনা করি।
ইউসুফ আলী মোল্লা
লুপ্ত ধানের গবেষক, তানোর, রাজশাহী
আমি আমার মতো মোল্লা তৈরি করতে চাই। আজকের যুবকদের মাঝে আমি নিজেকে দেখতে পাচ্ছি। আজকের এই যুব সমাজই একসময় হারিয়ে যাওয়া ধান সহ অন্যান্য শস্য ফিরিয়ে আনার জন্য কাজ করবে বলে আমি মনে করি।