ডায়াবেটিকস নিয়ন্ত্রণ করে নিম

সাতক্ষীরা থেকে সোনিয়া আফরোজ:
নিম একটি অতি পরিচিত গাছ। নিমের দাতন দাঁতের জন্য খুবই উপকারি। নিমকে আবার মহাঔষুধি বৃক্ষও বলা হয়। তাই ডায়াবেটিকস নিয়ন্ত্রণে, খুশকি ও উঁকুন বিনাশে, বাত ব্যাথায়, ক্ষত নিরাময়ে, পাতলা পায়খানা সমস্যায়, এলার্জি, একজিমা, পোকামাকড়ের বিষ কাটাতে নিমের জুড়ি নেই। এছাড়া রক্ত পরিষ্কার করতে, ব্রণ দূর করতে, ওজন কমাতে ও ত্বকের পরিচর্যায় নিম গাছের পাতা, ছাল, ফুল, ডাল ও বীজ ব্যাপক কার্যকরি ভূমিকা পালন করে থাকে।

বাংলাদেশের প্রায় সর্বত্র নিম গাছ দেখা যায়। নিম লবণাক্ত ব্যতিত সব পরিবেশেই টিকে থাকতে পারে। নিম একটি বহুবর্ষজীবি ও কাষ্ঠল প্রকৃতির উদ্ভিদ। এর কা- ৪০-৫০ ফুট পর্যন্ত লম্বা হতে পারে। কা-ের ব্যাস ২০-৩০ ইঞ্চি পর্যন্ত হতে পারে। এর বাঁকল পুুরু ও কালচে বর্ণের হয়। এর শাখা প্রশাখা অনেক দূর পর্যন্ত বিস্তৃত হতে পারে।

Nim Feature 1এছাড়া নিমের পাতা হালকা সবুজ বর্ণের হয়ে থাকে। এর ডালের চারিদিকে যৌগিক পাতা জন্মে। পাতার অগ্রভাগ সূচালো প্রকৃতির হয়। এর পাতা দেড়-দুই ইঞ্চি পর্যন্ত লম্বা হয়ে থাকে। পাতার কিনারা করাতের মতো খাঁজযুক্ত ও কাস্তের মতো বাঁকানো হয়। এর পাতা গন্ধহীন কিন্তু স্বাদে খুব তেঁতো।

নিমের ফুল দেখতে সাদা ও হালকা বেগুনী রঙের হয়ে থাকে। ফুল থেকে ফল হয়। এর ফল দেখতে আঙুরের মতো। ফল কাঁচা অবস্থায় সবুজ থাকে। ফল পাঁকলে হলুদ বর্ণ ধারণ করে; যা মিষ্টি ও তেঁতো স্বাদের হয়ে থাকে। এই পাঁকা ফল পাখি ও বাচ্চারা খায়। সাধারণত নিমের বীজ থেকে চারা তৈরি হয়। বাংলাদেশসহ ভারতীয় উপমহাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে প্রাকৃতিকভাবে নিমের চারা জন্মে।

নিমের ছাল, পাতা, ডাল, ফুল, বীজ ও শেকড় বিভিন্ন ওষুধের কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এছাড়া নিম ছত্রাক নাশক, ব্যাকটেরিয়া রোধক, ভাইরাসরোধক, কীটপতঙ্গ বিনাশে, ম্যালেরিয়া নিরাময়ে ও জন্ম নিয়ন্ত্রণ ছাড়াও আরও অনেক রোগ নিরাময়ে নিম ব্যাপকভবে ব্যবহৃত হয় বলে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডঐঙ) নিম গাছকে ‘একুশ শতকের বৃক্ষ’ বলে ঘোষণা দিয়েছে।

নিমের গুণাগুণের ব্যাপারে ব্রহ্মরাজপুর গ্রামের বাসিন্দা মো. কফিল উদ্দীনের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “নিম পাতা গুড়ো করে খেলে আমাশয় রোগে ভালো কাজে দেয়। নিমের ছাল ভিজিয়ে সেই পানি খেলে চর্মরোগ ও এলার্জিজনিত সমস্যায় ভলো উপকার পাওয়া যায়। এছাড়া নিমের ছাল পেটের কৃমি দূর করতে ব্যাপক ভূমিকা পালন করে থাকে। নিম ফল থেকে উৎপাদিত তেল এ্যান্টিসেপটিক হিসেবে বিভিন্ন ওষুধ বা প্রসাধনী তৈরিতে ব্যবহৃত হয়।”

একই গ্রামের বাসিন্দা আফরোজা খাতুন বলেন, “নিমের কচি পাতা, পেঁয়াজ, হলুদ, লবণ ও সরিষার তেল একসাথে মাখিয়ে খেলে পাতলা পায়খানা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। দাঁতের সুরক্ষায় নিমের ডাল যুগে যুগে দাঁতন হিসেবে সমাদৃত।

Nim Feature 3পাইকগাছা উপজেলার শ্রীকণ্ঠপুর গ্রামের বাসিন্দা হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক মো. আফায উদ্দীন বলেন, প্রতিদিন সকালে খালি পেটে ১৫-২০টি নিমের পাতা চিবিয়ে খেলে রক্তে সুগারের পরিমাণ কমিয়ে ডায়াবেটিকস নিয়ন্ত্রণে রাখে। এছাড়া দাঁতের ব্যাথা, মাড়ি ফোলা, পুঁজ-রক্ত পড়া ও ঠা-া পানি লাগলে দাঁত শির শির করলে নিম ফুল পানিতে সিদ্ধ করে সামান্য গরম অবস্থায় কুলি করলে এসব সমস্যায় ভালো উপকার পাওয়া যায়। নিম পাতার রস ছোটদের তিন চামচ ও বড়দের ৫ চামচ পরিমাণ খাওয়ালে কৃমি সমস্যায় ভালো উপকার পাওয়া যায়। নিম ফুল ভেজে খেলে রাতকানা রোগের উপশম হয়।”

মুক্ত বিশ্বকোষ উইকিপিডিয়ার তথ্য মতে, ‘নিম গবষরধপবধব গোত্রের একটি উদ্ভিদ। এর বৈজ্ঞানিক নাম অুধফরৎধপযঃধ রহফরপধ। এর ইংরেজী নাম গধৎমড়ংধ।

নিমের পাতা ও তেলে প্রধানত গ্লিসারাইড ও ২% তিক্ত উপাদান থাকে। যা এ্যান্টিসেপটিক হিসেবে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে থাকে। নিম পাতা সিদ্ধ করে সেই পানিতে গোসল করলে চুলকানি ও খোঁস-পাঁচড়া ভাল হয়ে যায়।

এছাড়া পোকামাকড় কামড়ালে ঐ স্থানে নিম পাতার প্রলেপ লাগালে ব্যাথা উপশম হয়। নিম তেল মহিলাদের গর্ভনিরোধক হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে। এর কারণ নিম তেল একটা শক্তিশালী শুক্রানুনাশক হিসেবে কাজ করে যা ভারতীয় বিজ্ঞানীরা প্রমাণ করেছেন।

গ্রামীণ অঞ্চলে প্রায় সব জায়গায় নিম গাছ সচারচার দেখতে পাওয়া যায়। গ্রামে একটা কথা প্রচলিত আছে “যে বাড়িতে একটা নিমের চারা থাকে সেই বাড়িতে রোগ বালাইয়ের সম্ভাবনা কম থাকে।” এ কারণে গ্রামের প্রায় প্রতিটি বাড়িতে নিমের চারা দেখতে পাওয়া যায়। এছাড়া নিম কাঠ দামী আসবাবপত্র তৈরিতেও ব্যবহৃত হয়। কারণ নিম কাঠ তিতো প্রকৃতির হওয়ায় সহজে পোকা-মাকড় আক্রমণ করতে পারে না। নিম গাছের ফল থেকে যে তেল তৈরি হয় সেটির বাজার দর অনেক। তাই বাণিজ্যিকভাবে নিম গাছ চাষ করে আর্থিভাবে লাভবান হওয়া সম্ভব। নিম কাঠের বাজার মূল্যও অনেক বেশি।

happy wheels 2

Comments