গ্রামীণ লোক সংস্কৃতি বিষয়ক আড্ডা

নেত্রকোনা থেকে শংকর ম্রং

বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ, লোক সংস্কৃতি উপকরণ সংগ্রাহক, বামপন্থী নেতৃবৃন্দ ও উন্নয়ন কর্মীদের অংশগ্রহণে গতকাল (১৮ জুন) বারসিক রামেশ্বরপুর রির্সোস সেন্টারে গ্রামীণ লোক সংস্কৃতি বিষয়ে এক আড্ডা অনুষ্ঠিত হয়েছে। আড্ডায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাচ্যকলা বিভাগ এর সহযোগি অধ্যাপক ও লোকজ সংস্কৃতি সংগ্রাহক ডঃ মিজানুর রহমান, জোবাইদা রহমান, মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও লেখক আনোয়ার হাসান, বামপন্থি রাজনীতিক মাহাবুবর রহমান তালুকদার, আবুল হাসেম, উন্নয়ন কর্মী অহিদুর রহমান, শংকর ম্রং ও আব্দুর রব অংশগ্রহণ করেন।

IMG_20180618_182146-W600
নেত্রকোনা অঞ্চলের সনামধন্য ও বিশিষ্ট লোকজ সংগীত শিল্পী, তাদের সৃষ্টি বিখ্যাত গান, গ্রামীণ সংস্কৃতি ও সাহিত্যাঙ্গনে তাদের অবদান, বর্তমান সময়ে সেসব সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বদের পরিবারের সদস্যদের (স্ত্রী ও পরিজন) বর্তমান সামাজিক ও আর্থনৈতিক অবস্থা এবং বর্তমান সময়ের লোক সংস্কৃতি শিল্পী, লোক শিল্পের বর্তমান হালচাল ইত্যাদি বিষয় আড্ডায় স্থান পায়। আটপাড়া উপজেলার স্বরমুশিয়া ইউনিয়নের অভয়পাশা গ্রামের লোকজ শিল্পী মরহুম বাউল মিরাজ আলী (একাধারে বাউল গীতিকার, সুরকার ও গায়ক) জীবনী, গ্রামীণ লোকজ সংস্কৃতি অঙ্গনে বিশেষভাবে বাউল শিল্পে তার অবদান সম্পর্কিত বিষয়গুলো আলোচনায় প্রাধান্য পায়।

প্রখ্যাত সংগীত শিল্পী আব্দুল বারী সিদ্দিকী ও মনির খানসহ অনেক শিল্পী বাউল মিরাজ আলীর রচিত ও সুরকৃত জননন্দিত গান গেয়ে (যেমন- সরল মনে এত দুঃখ দিলে…….., অপরাধী হইলেও বন্ধু তুমি আমার….ইত্যাদি) খ্যাতি অর্জন করেছেন। যে গানগুলো দেশের সাধারণ মানুষের মূখে মূখে সর্বদা শোনা যায়। সংগীতাঙ্গনে বাউল মিরাজ আলী গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে গেলেও সমাজ ও রাষ্ট্রে তিনি ছিলেন খুবই অবহেলিত। বাউল মিরাজ আলীর মৃত্যুর পর তার স্ত্রী হালিমা খাতুন চরম অর্থনৈতিক দূরবস্থায় রয়েছেন। বয়সের ভারে প্রবীণ এই বাউল শিল্পীর সহধর্মনীর জন্য মেলেনি স্থানীয় সরকার প্রদত্ত্ব কোন সেবা (বয়স্ক ভাতা/বিধবা ভাতা)।

বারসিক এর উদ্যোগে তার স্ত্রীর জন্য একটি বয়স্ক ভাতা/বিধবা ভাতা কার্ডের জন্য ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা ও জেলা প্রশাসনের নিকট আবেদন করা হয়েছে। বিভিন্ন গণমাধ্যমেও বিষয়টি প্রচার করা হয়েছে। স্থানীয় সরকার ও প্রশাসন থেকে প্রয়োজনীয় সহায়তার আশ্বাস পাওয়া গেছে।

IMG_20180618_182212-W600
বাউল মিরাজ আলীর অবর্তমানে তার শিষ্য বাউল নূরুল ইসলাম, বাউল আয়নাল হক প্রমূখ বাউল মিরাজ আলীর রচিত গানগুলো বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ও আড্ডায় পরিবেশন করে তার স্মৃতি ধারণ করে আসছেন। আলোচকদের মতে, নেত্রকোনা অঞ্চলে অনেক প্রখ্যাত বাউল শিল্পীর আবির্ভাব হলেও (রশিদ উদ্দিন, বাউল সুনীল, অন্ধ সিরাজ, আব্দুল মজিদ, বাউল আঃ হেকিম সরদার, বাউল খেলু মিয়া, সিরাজ উদ্দিন পাঠান, বাউল চাঁন মিয়া, বাউল ইদ্রিস আলী, কাঙ্গাল হরিনাথ, বাউল ইসলাম উদ্দিন, বাউল মওলা, বাউল নুরু প্রমূখ) বাউল মিরাজ আলী ছিলেন অন্যতম। তিনি ভাববাদ ও বস্তুবাদ উভয় দর্শন অনুসরণ করে তার সমস্ত শিল্প কর্ম রচনা করেছেন। তার মৃত্যুতে বাংলার গ্রামীণ লোকজ শিল্পকর্মের অপুরণীয় ক্ষতি হয়েছে বলে আলোচকগণ মনে করেন। আলোচকগণ মনে করেন বাউল মিরাজ আলী শিল্প ও কর্মকে একই সুতায় গেঁথে ছিলেন। কিন্তু বর্তমান সময়ে শিল্প ও কর্মকে পৃথক করা হয়েছে।

গ্রামীণ লোকজ উপকরণ প্রস্তুতকারী (কাঠের বিভিন্ন উপকরণ) মো. চাঁন মিয়া’র লোকজ শিল্পকর্ম ও গ্রামীণ লোকজ শিল্পের তার অবদানের বিষয়টিও আড্ডায় স্থান পায়।

happy wheels 2

Comments