সাম্প্রতিক পোস্ট

পিছিয়ে পড়া শিক্ষার্থীদের জন্য হরিরামপুর চরাঞ্চলের তরুণরা গড়ে তুললেন শিক্ষা কেন্দ্র

::মানিকগঞ্জ থেকে মো. মুকতার হোসেন::
school-1
হরিরামপুর উপজেলার লেছড়াগঞ্জ ইউনিয়নে খরিয়া গ্রামে স্থানীয় জনগোষ্ঠী, তরুণ ও বারসিক হরিরামপুর রিসোর্স সেন্টারের যৌথ উদ্যোগে চরাঞ্চলের পিছিয়ে পড়া ও ঝরে পড়া শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ার সুযোগ তৈরি করার জন্য লেছড়াগঞ্জ ইউনিয়নে খড়িয়া গ্রামে সততা সম্পা কিন্ডার গার্টেন গড়ে তোলা হয়। গত ৩ জানুয়ারি এই শিক্ষাকেন্দ্রটি চালু করা হয়।

চরাঞ্চলের শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ার উন্নয়ন করার লক্ষ্যে পাটগ্রামচরের রাসেল, রাজীব, আলামিন ও সেরাজুল ইসলাম এবং লালচাঁন খরিয়া গ্রামের কয়েকজন তরুণ ছোট ছেলেমেয়েদের জন্য প্রি-প্রাইমারি ইচ্ছা প্রকাশ করে। তরুণ প্রজন্মের এই ইচ্ছা ও আগ্রহকে সমর্থন করেন এলাকার সুশীল সমাজ, সমাজসেবক, স্থানীয় সরকারের প্রতিনিধি, উপজেলা শিক্ষা অফিস, শিক্ষানুরাগী ব্যক্তি, গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ এবং অভিভাবকবৃন্দ। সবার সমর্থন পেয়ে তরুণ ছুটে বেড়ান তহবিল সংগ্রহ করার কাজে। তাদের ঐকান্তিক ইচ্ছা, মনোবল ও আগ্রহের কারণে সততা সম্পা কিন্ডার গার্টেন গড়ে তোলার কাজে এগিয়ে যায়।

কিন্ডার গার্টেন এর জন্য জমি সন্ধানের কাজে তরুণরা বিভিন্নভাবে বিভিন্ন মানুষের সহযোগিতা চেয়েছেন এবং অবশেষে তারা খড়িয়া গ্রাম থেকে সেই জমিও লাভ করেন। তাদের উদ্যোগের সাথে যুক্ত হয় খড়িয়া গ্রামের সেরজন মোল্লা, আলাল শেখ, জালাল মোল্লা, শাসছুল, সমীর বেপারী, লালচাঁন, পাটগ্রামচরের রফিক মাতবর, বসন্তপুর গ্রামের জুবাইয়ের হোসেনসহ আরও বেশ কিছু মানুষ। এভাবে ৮০ হাজার টাকা ব্যয়ে কিন্ডার গার্টেনের জন্য নির্মিত হয় ২টি টিনের ঘর। পাঠদানের জন্য বেঞ্চ, চেয়ার টেবিল ও অন্যান্য উপকরণও তরুণ বিভিন্নভাবে সংগ্রহ করেন।

কিন্ডার গার্টেন পরিচালনার জন্য একটি কমিটিও গঠন করা হয়েছে। পাঠদানের জন্য আপাতত দু’জন সহায়ক বা শিক্ষক নিয়োগ করা হয়েছে। সবার অংশগ্রহণ ও মতামতের ভিত্তিতে এই কিন্ডার গার্টেন এর নামকরণ করা হয়েছে সততা সম্পা কিন্ডার গার্টেন।  বর্তমানে পাটগ্রামচর, খড়িয়া, হালুয়াঘাটা ৩টি গ্রামের ৪০ জন প্রাক-প্রাথমিক শ্রেণীর শিক্ষার্থীরা নিয়মিত লেখাপড়া করছে। সকাল ৬টা থেকে ৮টা এবং বিকাল ৪টা থেকে ৫টা পর্যন্ত পাঠক্রম চলে এই কিন্ডার গার্টেনে।

শিক্ষা কেন্দ্রটির পরিচালনায় দায়িত্ব প্রাপ্ত সেরাজুল ই্সলাম লালচাঁন জানান লেখাপড়ার পাশাপাশি চর এলাকার ঝরেপড়া, ছোট শিশুরা যেন প্রথম থেকে পিছিয়ে না থাকে সে কারণে এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তিনি বারসিককে ধন্যবাদ জানান এই উদ্যোগ বাস্তবায়নে উৎসাহিতকরণসহ বিভিন্ন ধরনের উপকরণ সহযোগিতার জন্য। বারসিক সবার সাথে যোগাযোগ করেছে শিক্ষা  উপকরণ তথা ব্লাক বোর্ড, চক, ডাষ্টার, রেজিষ্টার খাতা, হাজিরা খাতা, সাইনবোর্ড, ব্যানার, প্রচারের জন্য বিল বোর্ড, পোস্টার) প্রদান করেছে বলে তিনি জানান। এছাড়া শিক্ষকদের দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণও দিয়েছে।

গত ৩ জানুয়ারি, ২০১৬ এই কিন্ডার গার্টেন উদ্বোধনের দিনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে হরিরামপুর উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মো. আবুল বাশার সবুজ বলেন, “সরকারি প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি চরাঞ্চলে তরুণদের এই উদ্যোগ সত্যিই প্রশংসনীয়। এই কিন্ডার গার্টেনের পাঠক্রম পরিচালনার জন্য উপজেলা পরিষদের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে।” উপজেলা সহকারি শিক্ষা কর্মকর্তা নায়েব আলী বলেন, “শিক্ষা কেন্দ্রটি স্থাপনের মাধ্যমে এলাকার ঝরেপড়া, পিছিয়ে পড়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমে আসবে। এর পাঠদান সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য উপজেলা শিক্ষা অফিসের প্রাক-প্রাথমিক শ্রেণীর বই ও শিক্ষা উপকরণ সহযোগিতা করা হবে।” বারসিক’র বিমল রায় বলেন, “হরিরামপুর উপজেলার মধ্যে লেছড়াগঞ্জ ইউনিয়ন অত্যন্ত দুর্যোগ প্রবণ ইউনিয়ন হিসেবে চিহ্নিত। এখানকার মানুষ বন্যা, খরা, নদী ভাঙন বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ মাথায় রেখে জীবন-জীবিকায়ন করে থাকে। চর অঞ্চলে শিক্ষার আলো থেকে যেন কেউ বঞ্চিত না হয়, সেই কারণে তরুণদের এই ক্ষুদ্র প্রয়াস। আশা করি এর কার্যক্রম সুন্দরভাবে পরিচালিত হবে। বারসিক’র পক্ষ থেকে আমরা সাধ্যমতো সহযোগিতা করার চেষ্টা করবো।” আলোচনায় আরও অংশগ্রহণ করেন, আলাল শেখ, বাহা উদ্দিন, সামছুল ইসলাম, রফিক মাতবর, সেরজন মোল্লা প্রমুখ।

happy wheels 2