রোপণকৃত বৃক্ষগুলো ডালাপালা মেলে ধরেছে, বৃক্ষের নীচে বসেছে মেলাও

হরিরামপুর, মানিকগঞ্জ থেকে সত্যরঞ্জন সাহা

মাটি, পানি, আলো, বাতাস প্রাণ-প্রকৃতির পারস্পরিক সম্পর্ক অত্যন্ত নিবিড়। তাই অরণ্যের বিভিন্ন গাছপালার সঙ্গে মানুষের জীবন ও জীবিকা অঙ্গাঅঙ্গীভাবে জড়িত। গ্রাম বাংলার বট পাকর গাছের নিচে পূজা, মেলা আমাদের ইতিহাস ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির অংশ। গ্রামের দিকে তাকালে বট, পাকর গাছ চোখে পড়ে খুবই কম। ষড়ঋতুর বাংলাদেশে পরিবেশ ভারসম্য বিনষ্ট হচ্ছে বৃক্ষ নিধনের ফলে। গাছ পালা কম থাকায় পরিবেশের ভাম্য নষ্ট হচ্ছে। প্রয়োজনের তুলনায় বৃষ্টিপাত কম আবার হঠাৎ অতিবৃষ্টিতে ফসল হানি হচ্ছে। আকস্মিক বন্যা, খরা ও ঘুর্ণিঝড়ে প্রতিবছর বিপর্যস্ত হচ্ছে বাংলাদেশ।

IMG_20170905_171222
প্রাকৃতিক দুর্যোগ রোধে বৃক্ষের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। বৃক্ষ যেমন প্রকৃতির ভারসম্য রক্ষা করে তেমনি মানুষ ও প্রাণির খাদ্যের প্রধান উৎস। তবে ফলজ ও কাঠ জাতীয় গাছ রোপণে মানুষের আগ্রহ ও উদ্যোগ পূর্বের তুলনায় বৃদ্ধি পেলেও বট, পাকর, শিমুল রোপণে মানুষের আগ্রহ ও উদ্যোগের অভাবে বট বৃক্ষ দিন দিন কমে যাচ্ছে। প্রকৃতি থেকে যখন বট, পাইকর, কদম, কৃষ্ণচুড়া হারাতে বসেছে তখন বারসিক পরিবেশবান্ধব কার্যক্রমের প্রচার ও উদ্যোগ সৃষ্টির মাধ্যমে হরিরামপুর উপজেলার স্থানীয় কৃষক সংগঠন, স্বেচ্ছাসেবক টিম, তরুণ সমাজ, পরিবেশবান্ধব উদ্যোগী ব্যক্তি, স্কুল, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগে বট, পাকর চারা রোপণে উদ্যোগ গ্রহণ করেন।

এই প্রসঙ্গে প্রকৃতি প্রেমিক এয়াকুব আলী (৪৮), মনিদাস (৩০), শহীদ বিশ্বাস (৪০), নিত্য সরকার (৩৫), মোঃ রাসেল (২৬), ছিদ্দিক মোল্লা (৫৫) জানান, বট, পাকরের ফল পাখির খাবার। বট গাছে বিভিন্ন ধরনের পোকামাকড় থাকে। আবার পাখি মুখে নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় ফেলে দেওয়ায় বটের ফল থেকে চারা হয়। আগে বিভিন্ন বাজারে, রাস্তার মোড়ে দেখা যেত বট, পাকরের গাছ এখন এগাছগুলো খুবই চোখ পড়ে কম। বট গাছের নিচে বাজার বসত, মেলা হতো, জারিসারি, ভাব-বইটকি, লালন গীতি গান হতো মানুষ আনন্দ উৎসবে মেতে থাকত। কৃষকগণ কাজে ক্লান্ত শরিল জুরিয়ে নেওয়ার জন্য, বট গাছের নিচে বসে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে প্রয়োজনীয় তথ্য বিনিময় করেন।

পালকের সভাপতি মিরাজুল ইসলাম শিমুল (২৬) বলেন, ‘বয়ড়া ইউনিয়ন পরিষদের সামনে, যাত্রাপুরে, লাউতা বাজারে আন্ধারমানিক স্বেচ্ছাসেবক টিম ও পালকের উদ্যোগে বট, পাকর গাছের চারা রোপণ করি পাঁচ বছর আগে। দেখতে দেখতে বট পাকর গাছ বড় হয়। আবার গাছের নিচে মেলা বসে দেখে আমাদের খুব আনন্দ লাগে।’ আ: মালেক মীর (৫৭) বলেন, ‘আমার জীবনে আমি ৩টি বট পাকর চারা রোপণ করেছি। এগাছগুলো প্রকৃতির বুকে বড় হয়ে উঠেছে। এগাছগুলো দেখলে আমার খুবই ভালো লাগে, দেখে মনের অজানতেই আমি খুব খুশি। হাটে বাজারে, সরকারি জায়গায় আমি বট পাকর রোপণের সময় আমার সাথে আরো উদ্যোগী মানুষ যুক্ত হয়। এলাকার মানুষকে আমার সাথে যুক্ত করে চারা রোপণ করার ফলে, চারাগুলো সযত্নে বড় হয়।

অন্যদিকে পাটগ্রামচরের মো. সেলিম মিয়া (৩০) বলেন, ‘সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগে বৃক্ষ রোপণ কার্যক্রম দেখেছি কিন্তু বট, পাকর রোপণ বারসিক কর্মীদের সহযোগিতায় হয়েছে। আমি এলাকার ছেলে-মেয়েদের নিয়ে বট, পাকর রোপণ করতে আমার ভালো লাগে। এলাকায় বট গাছ খুবই কম থাকায়, পাখির খবারের সংকট রয়েছে। বট গাছে পরিবেশ সুরক্ষা করে, অক্সিজেন দেয়। আমরা সকলে বেঁচে থাকি।’

বট, কদম, শিমুলসহ বিভিন্ন প্রজাতির দেশীয় গাছ একদিকে পরিবেশের ভারসম্য রক্ষা করে, অন্যদিকে প্রকৃতির শোভাবর্ধন করে চলছে। বট, পাকর গাছের ফল পাখির খাবারের অন্যতম উৎস। শুকনো ডাল পালা জ্বালানি হিসাবে ব্যবহত হয়। সর্বোপরি এই গাছগুলো জীবন রক্ষাকারী অক্সিজেনের এক বিশাল আধার। প্রকৃতি রক্ষায় এ সকল গাছ যেমন টিকিয়ে রাখা প্রয়োজন, তেমনি সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও জন উদ্যোগে এসকল গাছের চারা রোপণ একান্ত প্রয়োজন।

happy wheels 2

Comments