সমাসপুরের স্বপ্নের রাস্তা

রাজশাহী থেকে শহিদুল ইসলাম শহিদ

তৈরি হলো সমাসপুরের স্বপ্নের রাস্তা। রাজশাহী তানোর উপজেলার তালন্দ বাজার সংলগ্ন সমাসপুর গ্রাম। চারিপাশে ধানের জমি মাঝখানে আদিবাসী পাড়া। পৌরসভার মধ্যে বসবাস হলেও মুল রাস্তা থেকে বিচ্ছিন্ন পাড়াটি। রাস্তার কোন যোগাযোগ না থাকায় জীবনযাত্রায় বড় বাধা তৈরি করেছে প্রতিনিয়ত। বর্ষায় আমন ফসল আর খরা মৌসুমে বোরো ধানের চাষ, মাঠও ফাঁকা থাকে না। ফলে সকল ধরনের মালামাল মাথায় ও ঘাড়ে করে বহন করতে হতো তাদের।

IMG_20151009_060709_1
পাড়ার অসুস্থ রোগীও চলতে পারেনা। এমনকি বৃদ্ধ মানুষদের খাটলিতে করে রাস্তায় নিয়ে আসতে হতো। গর্ভবতী নারীদের হাসপাতালে নিতে হলেও একইভাবে নিয়ে আসতে হয়। বর্ষাকালে হরহামেশা শিক্ষার্থীরা পড়ে যায় ও তাদের বই পুস্তক ভিজে যায়। পাড়া থেকে গরু ছাগল বের করতেও সমস্যায় পড়তেন তারা। বিগত চার বছর ধরে সংগঠনের সদস্যরা প্রচেষ্টা চালিয়েছেন, জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের সহায়তা পাওয়ার জন্য। লিখিতভাবে প্রশাসনের কাছে যোগাযোগও করেন সংগঠনের সদস্যরা। সংকট সমাধানে সকলের ইতিবাচক দৃষ্টি থাকলেও রাস্তা বের করার মত জায়গা পাওয়া বড় বাধা হয়ে দাঁড়ায়। অবশেষে ভূমি অফিস ও উপজেলা প্রশাসনের পর্যবেক্ষণ ও পৌরসভার সহযোগিতায় রাস্তা নির্মাণের পথ বের হয়। সংগঠনের সদস্যদের স্ব শ্রমের মাধ্যমে রাত দিন কাজ করে চলতি মাসেই তাদের স্বপ্নের রাস্তা নির্মাণ করেন। সূচনা হয় নতুন রাস্তা যোগাযোগের পথচলা।

IMG_20151009_060856
গ্রামে যে কোন মানুষ তাদের সমস্যার কথা জানতে চাইলে প্রথমেই রাস্তা না থাকার কথা সামনে আসতো। এখন গ্রামবাসীরা রাস্তাটি ব্যবহার শুরু করেছেন। এ প্রসঙ্গে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক নিরেন মর্মু (২৪) বলেন, ‘এই রাস্তাটি আমাদের উদ্যোগে নির্মাণ করতে পেরে আমাদের সকলের মনে আনন্দ ও উৎসাহ তৈরি করেছে। দীর্ঘ কষ্টের ফলে রাস্তার কাজটি সম্পাদন হয়েছে। আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মদের কাছে উন্নয়নের একটি ইতিহাস তৈরি করে রাখতে পারলাম। যাতে আমাদের ছেলে মেয়েরা বলতে না পারে যে, আমাদের পাড়ার রাস্তা যোগাযোগ নেই।’ যোগাযোগ বিষয়ে দিলিপ সরেন (৩০) বলেন, ‘আমার তালন্দ বাজারে ১৮ বছর ধরে মটরসাইকেল গ্যারেজ আছে। জরুরি কাজের জন্য আমি একটিবারও মটরসাইকেল বাড়িতে নিয়ে যেতে পারতাম না। পায়ে হেটে যেতে হতো, এখন আর সমস্যা রইলো না।’

IMG_20151009_060804
গ্রামের মোড়ল কান্দন মর্মু (৫৫)বলেন, ‘দাদা আমাদের আর রাস্তা যোগাযোগের কোন সমস্যা নেই। নিজে ঘাম ঝরিয়ে রাস্তার কাজে প্ররিশ্রম করেছি কিন্তু মনে অনেক উৎসাহ ছিল। আমরা পরিশ্রম করি ফলে ডাল ভাত হয়ে যায়। কিন্তু রাস্তার বিষয়টি নিজে নিজে সমাধান করার মত ছিল না। এক্ষেত্রে সকলের সহায়তা ও সংগঠিতভাবে কাজ করে যাওয়ার ফলে সমাধান করা সম্ভব হয়েছে।’

রাস্তা নির্মাণের কাজটির অবদান কারো একার নয়, সকলের। সমাজের উন্নয়নের জন্য কাজ করতে হলে সকলে একক মনোবল নিয়ে এগিয়ে যেতে হয়। শুধু ব্যক্তি চিন্তা করলে সমাজের এ ধরনের কাজ কখনই বাস্তবায়ন সম্ভব হয় না। সর্বজনীন উন্নয়নের জন্য মাঝে মাঝে কিছু ত্যাগও স্বীকার করতে হয়।

happy wheels 2

Comments