প্রবীণরাই নবীনদের পথ প্রদর্শক

ঢাকা থেকে মো. জাহাঙ্গীর আলম

আজ ১লা অক্টোবর আন্তর্জাতিক প্রবীণ দিবস। বাংলাদেশ সরকারের সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় এবং প্রবীণ হিতৈষী সংঘের উদ্যোগে প্রতিবছরের ন্যায় এবারও প্রতিটি জেলায় র‌্যালি, আলোচনা সভা, প্রবীণ সেবার জন্য পুরস্কার বিতরণীসহ বিভিন্ন ধরনের কর্মসূচি পালিত হচ্ছে। খুব সম্প্রতিক সময়ে সারা পৃথিবীর পাশাপাশি বাংলাদেশেও প্রতিবছর এই দিবসটি অত্যন্ত ভাবগাম্ভীর্য ও গুরুত্বের সাথে পালিত আসচ্ছে। সরকারের পাশাপশি বিভিন্ন ধরণের বেসরকারী সংগঠনও এই দিবসটি পালন উপলক্ষে বিভিন্ন ধরণের কর্মসূচি পালন করছে।

এবারের আন্তর্জাতিক প্রবীণ দিবসের প্রতিপাদ্য হলো; Celebrating Older Human Rights Champions প্রবীণ মানবাধিকার চ্যাম্পিয়নদের নিয়ে উৎসব করি। এই প্রতিপাদ্যের ভিতরই প্রবীণদের প্রতি চিরাচরিত অবিচার, অবহেলা, বঞ্চনা, অধিকারহীনতার অসংখ্য উদাহরণ বিদ্যমান রয়েছে। একই সাথে বৈশি^ক সমাজের বিভিন্ন অগ্রনী সৈনিক এই অধিকারহীন, অবিচার, অবহেলা, বঞ্চনা ও নিপীড়নের শিকার প্রবীণ মানুষের জন্য আন্দোলন করেছেন, লড়াই করেছেন এবং কাজ করেছেন এবং অনেক ক্ষেত্রেই তারা সফলও হয়েছেন। সেই বিজয়ী মানুষদের সম্মান প্রদানের মাধ্যমে এই দিবসটি আজ সবার কাছে এই বার্তা দিতে চায় সমাজে প্রবীণরাই বিজয়ী, তারাই চ্যাম্পিয়ন, এই কথাটা যেন সবাই সব সময় মনে রাখেন। কারণ প্রতিটি মানুষকেই যে জৈবিক পরিক্রমার মাধ্যমে এই বার্ধক্যকে বরণ করতে হবে। অন্যান্য প্রাণীর মতো বার্ধক্য মানুষেরও একটি স্বাভাবিক পরিণতি।

বাংলাদেশ একটি জনবহুল ও দূর্যোগপ্রবণ একটি ছোট দ্বীপ রাষ্ট্র। প্রবীণ ব্যক্তিগণ দেশের এই ক্রমবর্ধমান জনগোষ্ঠির এক উল্লেখযোগ্য অংশ। সরকারি হিসাব মতে, যাদের বয়স ৬০ বা তার অধিক তারাই দেশের প্রবীণ ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত। চিকিৎসা বিজ্ঞানের অগ্রগতি এবং স্বাস্থ্য সচেতনতা বৃদ্ধির কারণে অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশের ন্যায় বাংলাদেশের মানুষের গড় আয়ু দিন দিন বেড়েই চলেছে। জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী ১৯৭৫ সাল থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত সারাবিশ্বে প্রবীণ জনসংখ্যা ৩৬ কোটি থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ৬০ কোটিতে উন্নীত হয়েছে। বর্তমানে বাংলাদেশে প্রায় ১ কোটি ৩০ লাখের বেশি প্রবীণ মানুষ রয়েছেন, যা দেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় ১১ ভাগ। ধারণা করা হচ্ছে আগামী ২০৩০ সালে এ প্রবীণ জনসংখ্যা বেড়ে ১৯ ভাগ এবং ২০৫০ সালে হবে মোট জনসংখ্যার ৩০ ভাগ।
ক্রমবর্ধমান এই প্রবীণ জনগোষ্ঠির সার্বিক কল্যাণ ও আর্থ-সামাজিক সুরক্ষার জন্য বাংলাদেশ সরকার ১৯৯৮ সাল থেকে “বয়স্কভাতা” প্রদান কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে আসছে। সরকারী হিসাব মতে বর্তমানে বাংলাদেশের ৪০ লাখ মানুষ বয়স্কভাতা গ্রহণ করছেন এবং প্রত্যেক প্রবীণ প্রতিমাসে ৫০০ টাকা করে ভাতা পাচ্ছেন। প্রবীণদের কল্যাণের জন্য সরকার “জাতীয় প্রবীণ নীতিমালা ২০১৩” ঘোষণা করেছে এবং তাদেরকে সিনিয়ন সিটিজেন হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। তবে প্রবীণরা এখনও প্রবীণ ভাতা প্রাপ্তির ক্ষেত্রে নানান হয়রানি ও অবহেলার শিকার হন বলে নানানভাবে অভিযোগ রয়েছে। তাই এ সমস্যা সমাধানে সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে।

একজন মানুষ যখন প্রবীণ হয়ে যান তখন তার পরিবারের নিকট থেকে অনেক ধরণের সহযোগিতা প্রয়োজন হয়। পারিবারিকভাবে তার প্রতি আরো সহযোগিতামূলক ব্যবহার করা দরকার। এর জন্য দরকার পারিবারিক সচেতনতা। বেসরকারী গবেষণা প্রতিষ্ঠান বারসিক সারাবছর এই সচেতনতার কাজটি করে যাচ্ছে বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে। প্রবীণ দিবস উপলক্ষে বারসিক নেত্রকোনা, রাজশাহী, মানিকগঞ্জ এবং সাতক্ষীরা জেলায় বিভিন্ন বয়সী মানুষদের নিয়ে র‌্যালি, আলোচনাসভা, নবীন-প্রবীণ মতবিনিময়, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ইত্যাদি আয়োজন করছে। প্রবীণদের সমস্যার তুলনায় এই উদ্যোগ খুবই সীমিত। তাই প্রবীণদের নানামুখী সমস্যা সমাধানে দরকার নবীনদের সক্রিয় অংশগ্রহণ।

happy wheels 2

Comments