সাম্প্রতিক পোস্ট

গ্রামীণ নারীর কাজের স্বীকৃতিই আনবে গ্রামীণ নারীর ক্ষমতায়ন

মানিকগঞ্জ থেকে রাশেদা আক্তার

“Rural women- agents of change fighting poverty hunger and climate change” প্রতিপাদ্য বিষয়কে সামনে রেখে গতকাল বারসিক’র উদ্যোগে মানিকগঞ্জ জেলার কৃষ্ণপুর ইউনিয়নের বাসুদেবপুর গ্রামে নানা আয়োজনে পালিত হলো বিশ্ব গ্রামীণ নারী দিবস।

গ্রামীণ নারীরা সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত নানা রকম কাজ করে থাকেন। গ্রামের নারীরা ঘরের কাজের পাশাপাশি কৃষি কাজও পুরুষদের তুলনায় বেশি করে থাকেন। কিন্তু নারীর ঘরের কাজের নেই কোন স্বীকৃতি। ¯ী^কৃতি নেই কৃষক হিসেবে। গ্রামীণ নারী তাদের বাড়ির আশেপাশে থেকে সংগ্রহ করে নানা ধরণের অচাষকৃত শাকসবজি। এসব শাকসবজি যেমন ভেজালমুক্ত তেমনি পুষ্টিগুণে ভরা।

44057822_155117155442834_2983074715167358976_n

গ্রামীণ নারী দিবসকে কেন্দ্র করে নারীর কুড়িয়ে পাওয়া এই অচাষকৃত শাকসবজির রান্না প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। ১২ জন নারী রান্না প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে মোট ১২ রকমের শাকসবজি রান্না করেন। সেগুলো হলো: সেচি শাক- ২, কলমী শাক, সাজনা শাক, কচুর লতি, ঢেঁকি শাক, পিপল পাতা, খারকুন পাতা, শাপলা, তেলাকুচ পাতা ও ঘোটা শাক। ৩০ মিনিট রান্ন করা এবং ১০ মিনিট পরিবেশন করাসহ মোট ৪০ মিনিট সময়ের মধ্যে প্রতিযোগিরা তাদের রান্ন করা খাবার পরিবেশন করেন। ৪ জন বিচারক (স্কুলের শিক্ষক) খাবারগুলো খেয়ে নম্বর প্রদান করেন। প্রতিযোগিতায় ১ম স্থান অধিকার করেন রিলিয়া বেগম, ২য় স্থান অধিকার করেন জরিনা বেগম এবং ৩য় স্থান অধিকার করেন রুবি বেগম।

44091776_770190860039797_7712431301222989824_n

রান্না প্রতিযোগিতা শেষে লতা বেগমের সভাপতিত্বে আলোচনা সভা শুরু হয়। আলোচনা সভায় এ্যাড: দীপক কুমার ঘোষ বলেন, “আজ বিশ্ব গ্রামীণ নারী দিবস। গ্রামের নারীরা অনেক কাজ করেন। ঘরে, বাইরে, মাঠে সর্বত্রই নারীরা কাজ করে। কিন্তু আমাদের পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্র নারীর সেসব কাজের কোন মূল্যায়ন করেনা। নারীরা বিভিন্নভাবে নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। আজকে আপনারা যারা এখানে উপস্থিত আছেন তারা আজ থেকে প্রতিজ্ঞা করেন সবাই তাদের মেয়েদের লেখাপড়া করাবেন। কারো বাল্য বিয়ে দিবেন না। কেউ যৌতুক দিবেন না। পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও সমান তালে এগিয়ে যাবে সেই সুযোগ নারীদের তৈরি করে দিতে হবে।’

বাসুদেবপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক মো. আসাদ খান বলেন, “এখানে একসাথে কত ধরণের শাক দেখলাম। খাইলাম। এর আগে কখনো একসাথে এতগুলো শাক আমি দেখিনি। প্রতিটি রান্নাই অসাধারণ হয়েছে। নারীরা কত ধরণের শাক কুড়িয়ে আনতে পারে তার একটি বড় উদাহরণ আজকের এই আয়োজন।”

একই স্কুলের সহকারী শিক্ষিকা খালেদা আক্তার বলেন, “আজ বিশ্ব গ্রামীণ নারী দিবস। দিবসটি এই গ্রামে পালন করা হয়েছে এটি খুবই ভালো হয়েছে। এখানে না আসলে জানতেই পারতাম না গ্রামীণ নারীরা কত ধরণের শাক রান্না করে খায়।”

44091787_2205213189755737_4211355647230345216_n

যুব প্রতিনিধি মো. শরীফ হোসেন, বলেন, “বিশ্ব গ্রামীণ নারী দিবসটি আমাদের এই গ্রামে করার জন্য বারসিককে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। নারীরা আসলে অনেক কাজ করেন। কিন্তু নারীরা তাদের অধিকার ঠিকমত পায় না।”

আলোচনা সভায় স্কুলের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কিশোরী সংগঠনের সদস্য, যুব, সমাজ কর্মী, স্থানীয় মেম্বার, নারী পুরুষসহ ১৪০ উপস্থিত ছিলেন। আলোচনা সভা শেষে গ্রামের নারীদের উদ্যোগে লতা বেগমকে সভাপতি করে ২৫ সদস্য বিশিষ্ট “আলোর প্রতীক নারী সংগঠন” নামে একটি সংগঠন গঠন করা হয়েছে।

আলোচনা সভা শেষে নারীদের অংশগ্রহণে ঝুড়িতে বল নিক্ষেপ প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। প্রতিযোগিতা শেষে রান্না প্রতিযোগিতা ও খেলায় বিজয়ীসহ রান্না প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারী সকলের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করার মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়।

happy wheels 2

Comments