প্রকৃতির সকল সম্পদ টিকিয়ে রাখার দায়িত্ব আমাদের

সাতক্ষীরা শ্যামনগর থেকে বিশ^জিৎ মন্ডল

সৃষ্টির শুরু থেকেই মানুষ প্রকৃতির সাথে মিশে আছে। প্রকৃতিতে এমন কোন উপাদান নেই যা মানুষের প্রয়োজনে আসে না। অনাদর, অবহেলা, অযত্নে বেড়ে উঠেছে এ সকল প্রাণবৈচিত্র্য। এ সকল প্রাণবৈচিত্র্যের কিছু ব্যবহার করছে মানুষ খাদ্য হিসেবে, কিছু চিকিৎসার কাজে আর কিছু উপাদান অবদান রাখছে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে অন্যান্য কর্মকান্ডে। জলবায়ু পরিবর্তন, লবণাক্ততা বৃদ্ধি, রাসায়নিক সার কীটনাশক ব্যবহার ও মনুষ্য বসতি স্থাপন বৃদ্ধিতে পতিত জায়গার সংকট সৃষ্টি হওয়ায় এ সকল প্রাণবৈচিত্র্য অনেকাংশে বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। এ সকল উদ্ভিদ ও প্রাণবৈচিত্র্য সংরক্ষণে ব্যক্তি ও সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে চলছে নানা রকম উদ্যোগ, পরিচালিত হচ্ছে নানান রকম কর্মকান্ড।

প্রকৃতির এসব উপাদান ও প্রাণবৈচিত্র্য ব্যবহার ও বিকাশ, সংরক্ষণ ও নতুন প্রজন্মের মাঝে পরিচিতিকরণে সম্প্রতি শ্যামনগর উপজেলার কাশিমাড়ি ইউনিয়নে কাঠালবাড়িয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রাঙ্গনে বারসিকের সহযোগিতায় কাঁঠালবাড়ি পরিবেশবান্ধব কৃষি নারী সংগঠনের আয়োজনে অচাষকৃত উদ্ভিদ ও শাকবৈচিত্র্যের সমন্বয়ে ‘পাড়া মেলা’ অনুষ্ঠিত হয়েছে। পাড়ামেলায় গ্রামের কৃষক-কৃষাণী, শিক্ষার্থী ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিসহ মোট ৯৮ জন অংশগ্রহণ করেন।

pic-1
মেলায় অংশগ্রহণকারী ১৪ জন নারী ২২ প্রকার কুড়িয়ে পাওয়া শাক এবং ৩২ প্রকার ঔষধি গাছের স্টল প্রদশন করে এবং এসব প্রাকৃতিক উপাদানের ব্যবহার, গুনাগুন ও প্রাপ্তিস্থান বর্র্ণনা করেন। বর্ণনা পরবর্তী বারসিক কর্মকর্তা মারুফ হোসেনের সঞ্চালনায় এবং প্রবীণ কৃষক আব্দুল ওয়াহিদ গাজীর সভাপতিত্ব এক সংক্ষিপ্ত আলোচনা হয়। আলোচনায় সভায় বক্তব্য রাখেন কাঠালবাড়িয়া নারী সংগঠনের সভানেত্রী আফরোজা বেগম, কৃষাণী আকলিমা বেগম, কৃষক আবু বক্কর ও বারসিক কর্মকর্তা বিশ্বজিৎ মন্ডল।

pic-2
মেলায় যে সব নারীরা সর্বোচ্চ কুড়িয়ে পাওয়া উদ্ভিদবৈচিত্র্য প্রদর্শন ও বর্ণনা করেন তারা পর্যায়ক্রমে প্রথম স্থান অধিকার করেন অযুফা বেগম, দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেন মফিজা বেগম ও তৃতীয় স্থান অধিকার করেন গীতা রানী মহালদার। পাড়া মেলায় অংশগ্রহণকারী নারী আফরোজা বেগম বলেন, ‘এ শাকগুলোতে কোন রকম সার বিষ ব্যবহার করতে হয় না। ক্ষেতের অন্য সব তরকারির সাথে অনাদরে বেড়ে ওঠে এই শাক ও ঔষধি গাছ। এগুলো টাকা দিয়েও কিনতে হয় না।’

pic-5

তিনি আরও বলেন, ‘বাড়ির কোন সাঁঝের একটি তরকারি কম থাকলে এই শাক রান্না করে তার অভাব পূরণ করা যায়। এতে ভিটামিন আছে প্রচুর। কিন্তু এখন আমরা কোটা-বাছার ভয়ে সহজে যে তরকারি কোটা যায় তাই রান্না করি। আমাদের অভ্যাসও হয়ে গেছে সেটা। আমাদের অভ্যাসের সাথে সাথে ছেলেমেয়েদের ও সেই অভ্যাস তৈরি হয়েছে। কোন বেলায় যদি এই শাক রান্না হয় তাহলে ছেলেমেয়েরা কেউ কেউ খেতেও চায় না। আজকের এ মেলায় আমাদের সাথে আমাদের ছেলেমেয়েরাও আছে তারাও জানলো এর গুরুত্ব। আশা করি এখন থেকে এই শাক সবজির প্রতি আর তাদের অনীহা থাকবে না। এ মেলা আমাদের প্রতিদিনের খাওয়ার অভ্যাসও পরিবর্তন করতে সাহায্য করবে।’

pic-3
অংশগ্রহণকারী উষা রানী, বকুল বেগম, আকলিমা, খাদিজারা বলেন, ‘ডায়বেটিস রোগীর ক্ষেত্রে আদাবরুণ শাক খুবই উপকার করে। এছাড়াও বাশক সিরাপ কিনে খাই তা বাশক পাতা দিয়ে তৈরি আমরা তা না খেয়ে ঔষধ কিনে খাই এরকম প্রায় সব ধরনের ঔষধ আমাদের এই প্রকৃতির সম্পদ থেকে তৈরি। তাই এ প্রাকৃতিক সম্পদগুলো টিকিয়ে রাখার দায়িত্ব আমাদের সকলের। এই সম্পদের উপর নির্ভর করে আমাদের জীবন-জীবিকা। এগুলো সম্পর্কে ছোট বড় সকলের ধারণা থাকলে এগুলোর ব্যবহারে সকলে আগ্রহী হবে। আবার সংরক্ষণেও সকলের মায়া বাড়বে।”

happy wheels 2

Comments