দলিত ঋষিদের জীবনমান উন্নয়নে চাই সকলের সম্মিলিত উদ্যোগ
মানিকগঞ্জ থেকে রাশেদা আক্তার
‘প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর দলিত মনিঋষি বৈষম্যমুক্ত উন্নত জীবনমান নিশ্চিত হোক’ শ্লোগানকে সামনে রেখে বাংলাদেশ দলিত পঞ্চায়েত ফোরাম, মানিকগঞ্জ ও দলিত ছাত্রকল্যাণ পরিষদ, মানিকগঞ্জ এর যৌথ আয়োজনে এবং বারসিক এর সহযোগিতায় গতকাল জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মানিকগঞ্জের জেলা প্রশাসক এস এম ফেরদৌস।
জেলা প্রশাসক এস এম ফেরদৌস বলেন, ‘ঋষিদের দলিত হিসাবে স্বীকৃতির জন্য বারসিক এর সহযোগিতায় সমাজসেবা অফিসে প্রয়োজনীয় কাগজ পত্র জমা দেন। আমি চেষ্টা করবো যাতে আপনারা দলিত হিসাবে স্বীকৃতি পান। সরকারি সেবা ও সহযোগিতা পাওয়ার জন্য আমি আপনারদের সব রকমের সহযোগিতা করবো। তবে আপনাদের নিজেদের সচেতন হতে হবে। আজকাল মাস্টার্স পাশ করেও অনেকে চাকুরি পায় না। আপনারা আপনাদের সন্তানদের কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত করে তোলেন। তাহলে চাকুরির জন্য তাকে মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরতে হবে না। চাকুরি তার পিছনে ঘুরবে।’
মানিকগঞ্জের সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক জোয়ারদার মোহাম্মদ মহসিন বলেন, ‘সমাজসেবা অধিদপ্তর থেকে বিশেষভাবে সুবিধা বঞ্চিত জনগোষ্ঠীর জন্য শিক্ষা উপবৃত্তি ও বিভিন্ন ভাতা প্রদান করে থাকে। আপনারা সমাজসেবা অফিসে যোগাযোগ করবেন, তালিকা জমা দিবেন। উপজেলা নির্বাহী অফিসারের সহযোগিতায় আমরা তা দেওয়ার চেষ্টা করবো। আর প্রত্যয়নপত্রের জন্য আপনার বারসিকের সাথে যোগাযোগ করে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দেন আমরা কাজ করবো।’
মতবিনিময় সভায় মানিকগঞ্জ সদর ও হরিরামপুর উপজেলার পূর্বদাশড়া, সরুন্ডি, পশ্চিম দাশড়া, বেউথা, লওখন্ডা, বড়িয়াল, মিতরা, অষ্টদোনা, পাওনান, কালই গ্রামের মোট ৬০ জন প্রতিনিধি অংশগ্রহণ করেন। এছাড়াও স্যাক এর সভাপতি এডভোকেট দীপক কুমার ঘোষ, বারসিক এর আঞ্চলিক সমন্বয়কারীসহ বারসিক কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। মতবিনিময় সভায় দলিত জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধিরা তাদের সমস্যার কথা তুলে ধরেন। বিশিষ করে মনিঋষিদের দলিত হিসাবে স্বীকৃতি, ঋষি সম্প্রদায়ের জনগোষ্ঠীর শিক্ষার্থীদের শিক্ষা বৃত্তি, সরকারী চাকুরীতে কোটার ব্যবস্থা ইত্যাদি সমস্যা তুলে ধরে কতিপয় দাবি জানান।
২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ মধ্য আয়ের দেশে পরিণত হবে। এই লক্ষ্যকে সামনে রেখে সরকার জনকল্যাণমূলক নানা ধরণের কার্যক্রম গ্রহণ করেছে। যার মাধ্যমে রাষ্ট্রের সকল নাগরিক মানসম্মত শিক্ষা গ্রহণ করার সুযোগ পাবে, বিভিন্ন ধরণের প্রশিক্ষণ গ্রহণের মাধ্যমে দক্ষ জনশক্তিতে পরিণত হবে। পিছিয়ে পড়া প্রান্তিক, দলিত, ঋষি, হরিজনসহ অপরাপর সুবিধা বঞ্চিত, তথ্য বঞ্চিত জনগোষ্ঠী সরকারি সকল ধরণের সহায়তা পাওয়ার মধ্য দিয়ে তাদের অসহায়ত্ব, দারিদ্র্যতা, কুসংস্কার, অবহেলা দূর হবে এবং তাদের ভিতর স্বতঃস্ফূর্ততা ও সাবলীল মানসিকতার উন্মেষ ঘটবে; রাষ্ট্রের অপরাপর নাগরিকের মতো। তাদের অংশগ্রহণ রাষ্ট্রের উন্নয়নের গতিকে আরো গতিশীল করবে।
উল্লেখ্য যে, বারসিক ২০০৯ সাল থেকে মানিকগঞ্জ জেলায় দলিত জনগোষ্ঠীকে নিয়ে কার্যক্রম শুরু করে। কাজের ধারাবাহিকতায় মানিকগঞ্জ পৌরসভার পূর্বদাশড়া, সরুন্ডি, পশ্চিম দাশড়া, নওখন্ডা, উচুটিয়া, বেউথা, রাইন্তা, বেতিলা- মিতরা ইউনিয়নের বড়িয়াল, মিতরা, অষ্টদোনা, হাটিপাড়া ইউনিয়নের পাওনান, হরিরামপুর উপজেলার গালা ইউনয়নের কালই গ্রামে স্বাস্থ্য শিক্ষা কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করে স্থানীয় জনগোষ্ঠীর সহায়তায় পরিচালনার মাধ্যমে দলিত জনগোষ্ঠীর মনিঋষি (মনিদাস), রবিদাস, হরিজন, লৌহকার, হেলা ও বেদে জনগোষ্ঠীর শিক্ষার্থীদের শিক্ষার মান উন্নয়ন ও ঝরে পড়া রোধ, মা ও শিশুদের স্বাস্থ্য সচেতনতা ও পুষ্টি বৃদ্ধির লক্ষ্যে স্বাস্থ্য ক্যাম্প, খাদ্যাভাস সচেতনতা, সেলাই, বিউটি পার্লার, হাঁস-মুরগির ভ্যাকসিন প্রশিক্ষণ, আইনগত সহায়তা ও তথ্য বিনিময় প্রভৃতি কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। এসব দলিত জনগোষ্ঠীকে রাষ্ট্রের মূলস্রোতধারায় যুক্ত করাই বারসিক এর কাজের অন্যতম লক্ষ্য।