নারী শ্রমিকের কদর বাড়লেও বাড়েনি মজুরি

সিংগাইর, মানিকগঞ্জ থেকে শাহীনুর রহমান

ঘর, দুয়ার ঝাড় দেওয়া, বাসন কোসন মাঝা, গরু ছাগল খাওয়ানো, রান্না করা, ছেলে মেয়েদের স্কুলে পাঠানো এই হলো একজন নারীর প্রতিদিনের কাজ। সংসারের সকল কাজ সারতে একজন নারী কাক ডাকা ভোরে সবার আগে ঘুম থেকে উঠেন এবং সকল কাজ সেরে সবার পরে ঘুমাতে যান। সংসারের সকল দায়িত্ব পালনে যেন একজন নারীর উপরই বর্তেছে। তবুও নারী কোন অভিযোগ না করেই তার দায়িত্ব পালনে সর্বদা থেকেছেন আন্তরিক ও নিবেদিতপ্রাণ!

IMG_20180226_114654
পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের উন্নয়নে নারীর গুরুত্বপূর্ণ অবদান থাকলেও নারীর অর্থনৈতিক, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পুষ্টির নিশ্চয়তার বিষয়টি কখনই জাতীয় নিরাপত্তার প্রধান ইস্যূতে পরিণত হয়নি। রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক কিছু ক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ বর্তমানে কিছুটা বাড়লেও তা নারীর ক্ষমতায়নের জন্য যথেষ্ট নয়। তাছাড়া নারী এখনো পরিবার এবং সমাজে নানা ধরনের নির্যাতন ও বঞ্চনার শিকার হচ্ছেন। সেই সাথে যৌতুক প্রথা, বাল্য বিবাহ ধর্মীয় কুসংষ্কার ও পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতা নারীর উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত বারবার। সন্তান জন্মদান থেকে শুরু করে সকল প্রকার উৎপাদকের ভূমিকায় থাকেন একজন নারী। উন্নয়নের গতিধারায় আজকের বাংলাদেশে নারীরা উৎপাদনের হাতিয়ার হিসেবে নিজেদের যুক্ত করেছেন অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রায়।

received_247467686196743
সরকারি ও বেসরকারী প্রতিষ্ঠানগুলোতে নারী পুরুষের মজুিুর বৈষম্য কিছুটা কম হলেও ব্যক্তি মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান ও কৃষি কাজ এবং শিল্পের উৎপাদনশীলতায় নানাভাবে নারীরা মজুরি বৈষম্যর শিকার হচ্ছেন। কিন্তু কৃষি ও শিল্পায়নের ক্ষেত্রে নারীদের ভুমিকা ও কোন অংশে কম নয়। বীজ সংরক্ষণ থেকে শুরু করে চারা রোপণ, ফসলে মাড়াই ঝাড়াই সকল কাজই করতে হয় একজন নারীকে। তাছাড়া নারী গৃহস্থালী কাজের আর্থিক মূল্যয়ন তো কখনই স্বীকৃত নয়। যে কারণে একজন নারী তার জীবনের বেশির ভাগ সময় পরিবারের সকলের ঘানি টানলেও পরিবার ও সমাজে নিজের মতামত ও সিদ্ধান্ত দিতে পারে না। তারপরও নারীরা নানা ধরনের নির্যাতন বৈষম্য বঞ্চনা ও নিপীড়ণকে নিত্য দিনের সঙ্গী করে চেষ্টা করে সামনে এগিয়ে যাবার।

received_558808924628952
তবে কৃষিসহ নানা ক্ষেত্রে বেড়েছে নারী শ্রমিকদের কদর কিন্তু বাড়েনি তাদের মুজুরি। এলাকার গ্রামীণ অবকাঠামো, রাস্তা ঘাট, ইটের ভাটা, এমনকি নির্মাণ কাজও করছেন অনেক নারী। সেখানে স্বল্প মজুরিসহ তাদেরকে প্রতিনিয়ত সন্মুখীন হতে হয় নানা ধরনের অবহেলা, শারীরিক নির্যাতন ও বঞ্চনা। এ বিষয়ে কথা হয় সিংগাইর উপজেলার ব্রী- কালিয়াকৈর নয়াপাড়া গ্রামের কৃষি শ্রীমিক শাহনাজ বেগমের সাথে। তিনি বলেন, ‘সংসারে বাড়তি আয় ও স্বচ্ছলতার আশায় সকাল ৭টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত কাজ করি। মুজুরি হিসেবে পাই ২৫০ টাকা। একজন পুরুষ শ্রমিকের চেয়ে আমরা অর্ধেক টাকা কম পাই।’ একই বিষয়ে কথা হয় নবগ্রামের ইট ভাটার নারী শ্রমিক মর্জিনা বেগমের সাথে। তিনি বলেন, ‘নারী এবং পুরুষ একই সময়ে কাজে যোগদান করলেও সমান মুজুরি পাই না। বরং পুরুষের ক্ষেত্রে দেরি হলে কাজে নেওয়া হয়।’ কিন্তু নারীদের কাজে দেরি করা চলে না তারপরও সমাজের সকল, বাধা বিপত্তি, বৈষম্য অতিক্রম করে নারীরাই হবে সমাজের আলোক শিখা এ আমার প্রত্যাশা।

happy wheels 2

Comments