মানিকগঞ্জে জেলা নারী উন্নয়ন কমিটি গঠন

মানিকগঞ্জ থেকে রাশেদা আক্তার

‘নারীর থাকলে ক্ষমতা, প্রতিষ্ঠা পাবে সমতা’ শ্লোগানকে সামনে রেখে বারসিক’র উদ্যোগে গতকাল জেলা নারী উন্নয়ন কমিটি গঠন বিষয়ক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। জরিনা বেগমের সভাপতিত্বে (সভাপতি, নারীর প্রতি বৈষম্য প্রতিরোধ কমিটি, সদর, মানিকগঞ্জ) সভায় মানিকগঞ্জ সদর, হরিরামপুর, সিংগাইর ও ঘিওর উপজেলার উপজেলা নারীর প্রতি বৈষম্য প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি, সদস্য সচিবসহ সদস্যরা অংশগ্রহণ করেন।

জরিনা বেগম (সভাপতি, নারীর প্রতি বৈষম্য প্রতিরোধ কমিটি, সদর, মানিকগঞ্জ) বলেন, ‘আজকে এই কমিটি গঠন করার মধ্য দিয়ে যার যার উপর যে যে দায়িত্ব দেওয়া হলো তা আমরা সঠিক ভাবে পালন করবো। যখন যে আমাদের ডাকবে আমরা সবাই একজোট হয়ে চলে আসবো। সবাই মিলে কাজ করবো।

53373575_1792494037523028_5032193647764832256_n
সিংগাইর উপজেলা নারী উন্নয়ন কমিটির সভাপতি সেলিনা বেগম বলেন, ‘আমরা উপজেলা পর্যায় কমিটি করছি সাধারণ মানুষের বিশেষ করে কৃষকেরা যাতে তাদের ন্যায্য অধিকার পায় তার জন্য কাজ করছি। কৃষকের জন্য অনেক কৃষি উপকরণ আসে, ভর্তুকি আসে কিন্তু গরিব কৃষকরা তা পায় না। আমরা তার প্রতিবাদ করি। উপসহকরী কর্মকর্তা, চেয়ারম্যান, মেম্বারকে বলি আপনারা কেন যে পাওয়ার যোগ্য তাকে দেন না। যে কোন অন্যায়ের নির্যাতন, বাল্য বিবাহের বিরুদ্ধে আমরা কথা বলি।

বায়রার কৃষক সংগঠনের সভাপতি রোকেয়া বেগম বলেন, ‘আমরা যদি সবাই মিলে একটা কাজ হাতে নেই তাহলে আমাদের নাম আরও বাড়বে। আমাদের কথা সবাই জানতে পারবে। বারসিক’র সহযোগিতায় আমরা আরও শক্তিশালী হতে চাই। সবাই মিলে একসাথে কাজ করতে চাই।

53343521_544493436042496_450117000732082176_n
মানবকল্যাণ কিশোরী সংগঠনের সভাপতি ও নারীর প্রতি বৈষম্য প্রতিরোধ কমিটির সদস্য সচিব ইয়াসমিন আক্তার বলেন, ‘আমরা কিশোরীদের বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে কাজ করি। বিশেষ করে বয়োঃসন্ধি, বাল্য বিবাহ রোধ, শিক্ষার্থী ঝরে পড়া রোধ, কিশোরীদের বিনোদন নিয়ে কাজ করি। একটা সময় ছিল যখন আমাদের বাড়ি থেকে বের হতে দিত না। কোথাও যেতে চাইলে নিষেধ করতো। কিশোরী সংগঠন করার পর আমরা এলাকায় বিভিন্ন ধরণে প্রোগ্রাম করেছি। সেখানে মায়েরা ছিল তারা আমাদের কাজ দেখেছে। এখন আর বাধা দেয়না। কারো বাল্য বিবাহের খবর পেলে আমরা ৯৯৯ নম্বরে ফোন করে জানাই।’

সুমি আক্তার সভাপতি, আলোর পথিক নারী সংগঠন, বলেন, “আমরা আমাদের গ্রামে সংগঠন করেছি অল্প কিছু দিন হয়। সংগঠন করার মধ্য দিয়ে আমরা জানতে পেরেছি আমাদের কোথায় কি অধিকার আছে এবং কিভাবে কার কাছে যেতে হবে। যে কোন কিছু আদায়ের জন্য সকলে একমত হতে হবে এবং সংগঠিত হতে হবে।”
হরিরামপুরের নারীর প্রতি বৈষম্য প্রতিরোধ কমিটির সহসভাপতি লিমা আক্তার বলেন, ‘কোন কাজেই একা গেলে গুরুত্ব দেয় না। আমাদের দলবদ্ধ হতে হবে। আমাদের কমিটি শক্তিশালী হতে হবে। গ্রাম, ইউনিয়ন, উপজেলা, জেলা পর্যায় কমিটি হলে সবাই সবার কাজ সম্পর্কে জানতে পারবো।’

স্বেচ্ছা সেবক কনিকা সরকার বলেন, ‘একটি মেয়ের অনেক কষ্ট সহ্য করে এই সমাজে পথ চলতে হয়। নানা ধরণের বাধা আসে আমাদের পরিবার থেকেও। কোন কিছুর জন্য মেয়েদেরকেই দায়ী করা হয়। আমরা একানে যারা আছি তারা প্রত্যেকেই সচেতন। আমাদের গ্রামের অন্যদের বুঝাতে হবে। আমরা সংসারের সব কাজ করবো কিন্তু আমাদের স্বাধীনতা থাকতে হবে।’

54209256_1226574430832794_8935261069383827456_n
সকলের আলোচনা শেষে উপস্থিত সকলের মতামত নিয়ে শামীমা চায়নাকে সভাপতি করে জেলা নারী উন্নয়ন কমিটি নামে ১৯ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়। নারী পুরুষের সমতা আনার জন্য নারীদের ক্ষমতায়িত হতে হবে বলে নারীরা মনে করছেন। তারা তাদের অধিকার চান ঠিকই তবে তা সমন্বয়ের ভিত্তিতে, সাম্যের ভিত্তিতে। নারীকে নারী হিসেবে নয় মানুষ হিসেবে মনে করার মানসিকতাই পারে সাম্যের সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে।

উল্লেখ্য, সভার শুরুতেই বারসিক’র আঞ্চলিক সমন্বয়কারী বিমল চন্দ্র রায় সভার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যে নিয়ে আলোচনা করেন। তিনি তাঁর আলোচনায় নারীর সক্ষমতা, নারীর মতামত প্রকাশ, ইচ্ছা, পছন্দ-অপছন্দ, সিদ্ধান্ত গ্রহণ, নারীর প্রতি বৈষম্য, সম্পত্তিতে নারীর অধিকারহীনতা ইত্যাদি বিষয়গুলো তুলে ধরেন।

happy wheels 2

Comments