বাংলার পাখি : বসন্ত বৌরি

:: দেবদাস মজুমদার, বিশেষ প্রতিনিধি, উপকূল অঞ্চল : :

10150802_749957278361459_664474555_n::প্রতিবেদনের ছবি : কিরন খান

প্রকৃতি জুড়ে এখন বসন্ত ঋতুর সাজ। গাছের ঝড়া পাতার ডালে এখন সবুজ কচি পতা ছড়াছড়ি। বৃক্ষরাজিতে এসেছে নতুন প্রাণের আবহ। বসন্তে তাই বর্ণিল পাখির আনাগোনা যেন বেড়ে গেছে। নজরকাড়া রঙের বর্ণিল পাখি বাংলার প্রকৃতিতে এনে দেয় মায়া মুগ্ধ রূপ। পাখি বাংলার মুগ্ধ মায়বি প্রকৃতির অনুষঙ্গ। আর বসন্ত দিনে বৃক্ষের কচি ঘন পাতার গাছের মগ ডালে পাখির কুজন মনে দোলা লাগিয়ে দেয়। হাজারো বর্ণিল পাখির ভেতর উপকূলীয় এলাকায় বসন্ত বৌরির এখন ডাক শোনা যায়। এ পাখিকে আবার নীলগলা বসন্ত বৌরি,ধনিয়া,বড় বসন্ত বৌরি আবার বসন্ত বাউরি নামেও ডাকা হয়। এরা বাংলাদেশের স্থায়ী বাসিন্দা। পরিবেশবিদরা মনে করেন, ফলাহারি বসন্ত বৌরি গত কয়েক দশক ধরে আগের তুলনায় কমে গেছে। তবে বিলুপ্তির আশংকায় পাখিটি নেই ।

সুনন্দ বসন্তবৌরির ইংরেজি নাম Blue Throat Barbet বৈজ্ঞানিক নাম Megalaima asiatica, , বসন্তবৌরী হচ্ছে Capitonidae গোষ্ঠীর পাখি।

10154568_750210375002816_1558265942_nবসন্ত বৌরি বাংলাদেশ, ভারত, ভূটান, নেপাল,বার্মা, থাইল্যা-সহ চীনের দক্ষিণাঞ্চলে দেখা মেলে। বাংলাদেশে শোভন এ পাখিটির সাধারণত  গ্রামের চলার পথে গাছে এ মৌসুমে দেখা মেলে। বসন্ত দিনে তার ডাক শোনা যায় । বাংলাদেশে লাউয়াছড়া ও সাতছড়ি মিশ্র চিরসবুজ বনে নীলগলা বসন্তবৌরি বেশী দেখা মেলে। বাংলাদেশে তিন প্রজাতির বসন্তবৌরি রয়েছে। তারমধ্যে নীলগলা বসন্তবৌরি বেশী শোভন সুন্দর। পাখিটির মাথার উপরের রঙ লাল। গলার নীচে উজ্জ্বল নীল, চোখের দুই পাশে নীলচে। মাথার চাঁদির উপড় কালচে টান রয়েছে। বুক হলদেটে। ঠোঁটে হলুদ কালো মিশ্রণ রয়েছে। চক্ষু লালচে। উপড়ের সব পালক টিয়া পাখির মত সবুজ। লেজের তলার অংশে ফিকে নীল। ডানার তলায় সাদাটে। স্ত্রী-পুরুষ দেখতে ঠিক একই রকম। এদের গায়ের রঙ সবুজ বলে পাতার আঁড়ালে মিশে যায়। তাই সবুজ পাতার ফাঁকে সহজে এদেরকে দেখা যায়না। গাছের মগডাল পছন্দ করে। এরা কখনো দলবদ্ধ ভাবে থাকে না। সব বসন্ত বৌরির বাসার ধরণ একই রকম। এরা বাসার জায়গা খুঁজতে ব্যয় করে ৩-৫ দিন। কাঁঠঠোকরার মত গাছের গায়ে ছোট গোল গর্ত করে এরা বাসা বাঁধে। কখনও কাঠ ঠোকরা পাখির পরিত্যাক্ত বাসাও ব্যবহার করে। এদের প্রজনন কাল মার্চ থেকে জুলাই। পাখিটি ২-৩ টি সাদা রঙের ডিম পাড়ে। স্ত্রী ও পুরুষ পাখি পালাক্রমে ডিমে তা দেয় ও বাচ্চা লালন পালন করে থাকে। ডিম ফোটে ২০-২২ দিনে। খুব ঘন জঙ্গলে ফল-পাকুড়ের গাছ যেখানে বেশি সেখানে এদেরকে বেশি দেখা যায়। পাখিটি ফল আহারী পাখি। বটফল এদের প্রিয় খাবার। তবে ছোট পোকামাকড়ও এরা খেয়ে থাকে। বিশেষ করে পাকা বটের ফল,কদম, দেবদারু, আম, কলা, ডেউয়া ও তেলাকুচা ও কিছু পোকা মাকড় খেতে পছন্দ করে।

আলোকচিত্রী ও পাখি গবেষক কিরন খান জানান, বসন্ত বৌরি সুনন্দ পাখি। এরা গাছের ডালে বসে ‘পুক্রক-পুক্রক-পুক্রক’ করে তিনবার থেমে থেমে অবিরাম ডাকে। আবার এরা ডাক দিতে থাকলে সহজে থামে না। এদের ডাক অনেক দূর থেকে ভেসে আসে। শীতকালে এরা তেমন ডাকেনা। এখন বসন্ত দিনে নীলগলা বসন্তবৌরির ডাক বেশী ভেসে আসে। গাছের মগডালে অথবা কোন গাছের সবুজ পাতার আড়াল থেকে অবিরত ডেকে চলে বসন্তবৌরি।

happy wheels 2

Comments