কপালের টিপে বাঙালির সংস্কৃতি আঁকেন প্রিয়াংকা

পাবনা থেকে শাহীন রহমান

টিপ, একজন নারীর সৌন্দর্য বর্ধনের অন্যতম অনুসঙ্গ। একবার ভাবুন তো, যদি সেই টিপের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস, বাঙালির সংস্কৃতি থেকে শুরু করে মহিয়সীদের ছবি দেখা যায়, তাহলে বিষয়টি কেমন হবে। হ্যাঁ, সেই আসাধারণ কাজটি করেছেন একজন চারুশিল্পী। বাজারের সাধারণ টিপকে রং-তুলির ছোঁয়ায় অসাধারণে পরিণত করা এই চারুশিল্পীর নাম প্রিয়াংকা সিকদার। তিনি পাবনার চাটমোহর উপজেলা নির্বাহী অফিসার সরকার অসীম কুমারের স্ত্রী। কিন্তু সেই পরিচয় ছাপিয়ে এখন তিনি অসাধারণ চারুশিল্পী। তার প্রতিভায় মুগ্ধ সবাই।

Pabna Prianka Sikdar Tip Pic-03

বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম, মাদার তেরেসা, বেগম রোকেয়া, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস, বাঙালির সংস্কৃতিসহ নানা বিষয়ের প্রতিকৃতি এঁকেছেন তিনি কপালের টিপে। রং-তুলির ছোঁয়ায় যে ‘অসাধারণ’ কিছু হতে পারে তা চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা কঠিন। শখের বসে টিপের ওপর তৈরি করা শিল্পকর্ম এখন স্বপ্ন দেখাচ্ছে প্রিয়াংকাকে।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে চারুকলায় মাস্টার্স করা এই প্রতিভাধর নারীর শিল্পকর্ম অতি সম্প্রতি সামনে আসে সবার, চাটমোহর উপজেলা প্রশাসন আয়োজিত চিত্রকর্ম প্রদর্শনীতে। সেখানে প্রিয়াংকা সিকদারের তৈরি টিপের প্রতি সবার আগ্রহ ছিল বেশি। এর যথেষ্ঠ কারণও রয়েছে। বাজার থেকে কেনা একটি সাধারণ টিপ প্রিয়াংকা সিকদারের হাতের ছোঁয়ায় হয়ে ওঠে অসাধারণ।

Pabna Prianka Sikdar Tip Pic-02

আলাপকালে প্রিয়াংকা সিকদার জানান, রাজবাড়ির পাংশা উপজেলায় শৈশব পার করলেও রাজশাহী শহরের বেলদার পাড়ায় বেড়ে ওঠা। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে চারুকলা অনুষদের গ্রাফিক ডিজাইনে মাস্টার্স শেষ করে আঁকিবুঁকির কাজ শুরু। বাবা জয়দেব সিকদার কারুশিল্পের ব্যবসা করেন। মা নীলিমা সিকদার গৃহিণী। প্রায় ছয় বছর আগে বর্তমানে পাবনার চাটমোহর উপজেলা নির্বাহী অফিসার সরকার অসীম কুমারের সাথে বিয়ের বন্ধনে আবদ্ধ হন। তাদের আড়াই বছর বয়সী একমাত্র সন্তান অরিত্র। সংসার সামলানোর পাশাপাশি পড়াশোনা, ফ্রিল্যান্সিং, পোস্টার ডিজাইন, বইয়ের কভার ডিজাইন, টি-শার্ট ডিজাইন করাসহ নানা কাজে নিজেকে ব্যস্ত রেখেছেন প্রিয়াংকা।

তিনি জানান, ছোট বেলায় বাবা-মা’র উৎসাহে চিত্রকর্মের প্রেরণা পেলেও শ্বশুর অমূল্য সরকার ও স্বামী অসীম কুমারের উৎসাহ তাকে আরও নতুন কিছু করার স্বপ্ন দেখাচ্ছে। ছোটদের জন্য ‘রবিনের একদিন’ বইয়ের ডিজাইন, ‘ছোটদের নজরুল’ নামে বইয়ের ইলাস্টেশনের কাজ করাসহ অসংখ্য কাজ করেছেন। এছাড়া চাটমোহর উপজেলায় বিভিন্ন দিবসের আমন্ত্রণ পত্রের (কার্ড) ডিজাইনও তিনি করেছেন। এবার পয়লা বৈশাখে সাজের জন্যও এঁকেছেন অনেক টিপ। শুধু ইউএনও’র স্ত্রী হিসেবে নয়, কর্মময়ী একজন নারী হিসেবে নিজেকে সমাজে প্রতিষ্ঠিত করতে চান তিনি।

Pabna Prianka Sikdar Tip Pic-05

প্রিয়াংকা বলেন, ‘একটি টিপের ওপর প্রতিকৃতি আঁকতে সময় লাগে প্রায় আধা ঘণ্টা। এই টিপ তিনি নিজে পড়েন, অন্যকে উপহার দেন। ভারতের প্রখ্যাত সংগীত শিল্পী ঊষা উথুপ, দেশের মধ্যে ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণী ও ফ্যাশন ডিজাইনার বিবি রাসেল আঁকিবুঁকি করা টিপ পড়তেন। তাদের কপালের সেই টিপ দেখে ভালো লেগে যায়। এরপর থেকেই টিপের ওপর প্রতিকৃতি আঁকানো শুরু।’

স্ত্রীর এমন কাজে বেশ গর্বের সাথে ইউএনও সরকার অসীম কুমার বলেন, ‘সন্তান, সংসার সামলিয়ে সৃজনশীল কাজে মনোনিবেশ করা সত্যি কঠিন। আমি তার রুচি ও মননশীল কাজ দেখে অনুপ্রাণিত হয়েছি। তার কাজ আমাকে সত্যিই গর্বিত করেছে। সে তার নিজের মেধা ও যোগ্যতা দিয়ে আরো ভালো কাজ করুক এই প্রত্যাশা করি।’

happy wheels 2

Comments