দেশী বাজারের উপর নির্ভরশীল উপকূলের পানচাষীরা হতাশ

::দেবদাস মজুমদার,বিশেষ প্রতিনিধি,উপকূল অঞ্চল ::

[su_slider source=”media: 142,141″]

দেশী পানের বাজার দখল করেছে বিদেশি পান। ভারত থেকে পান আমদানি হঠাৎ করে বেড়ে যাওয়ায় দেশি পানের বাজারে দেখা দিয়েছে চরম মন্দাভাব। এতে চরম বিপাকে পড়েছে পিরোজপুর, ঝালকাঠি ও বরগুনা উপকূলের ছয় হাজার পানচাষী। দক্ষিণ উপকূলের পিরোজপুরের জেলার মধ্যে কাউখালী উপজেলা পান, সুপারি উৎপাদন ও বাজারজাতের জন্য প্রসিদ্ধ। বর্তমানে হাটবাজারগুলোতে পানের দাম পড়ে যাওয়ায় পান চাষী হতাশ হয়ে পড়েছেন। বৈধ আর অবৈধ পথে ভারত থেকে পান  আসায় পান চাষীরা বিপাকে পড়েছেন। এতে দেশীয় পানের বাজারে নেমেছে ধস।

কাউখালী উপজেলা পান চাষী সমিতি সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে প্রায় দুই হাজার পান চাষী রয়েছে। এসব কৃষক প্রায় ২০০ হেক্টর জমিতে পান চাষ করছে। পান চাষের সাথে জড়িত উপজেলার কয়েক হাজার পরিবারের একমাত্র আয়ের উৎস এই পান চাষ। গত ঘূর্ণিঝড় সিডর ও জলোচ্ছ্বাস ও আইলায় চর বিপন্ন হয়ে পড়েছিল পানচাষীরা। এরপর নতুন করে বিপর্যস্ত পানচাষীরা ঘুড়ে দাঁড়ায়। তবে বৈরী আবহাওয়া, বর্ষা মৌসুমে ভারী বর্ষণের জলাবদ্ধতা ও লবণের আগ্রাসনে পান চাষীদের কয়েক বছর ধরে লোকসান গুণতে হয়েছে। এ উপজেলার পানের স্বাদের বৈশিষ্ট ভিন্ন। পান সুস্বাদু হওয়ায় চাহিদা রয়েছে দেশজুড়ে। গতবছর পানের ভালো ফলন ও মূল্য আশানুরূপ পাওয়ায় এবার চাষীরা ঝুঁকে পড়েন পান চাষে। কিন্তু এবার  বৈধ আর অবৈধ পথে ভারত থেকে পান আমদানীর ফলে পিরোজপুরের কাউখালী, মঠবাড়িয়া, ভা-ারিয়াসহ ঝালকাঠী,বরগুনা ও বরিশালের গৌরনদী উপজেলার  চাষীরা পানের বরজ নিয়ে পড়েছেন বিপাকে ।

মঠবাড়িয়া উপজেলার খেঁজুর বাড়িয়া গ্রামের পানচাষী বিরেন সিকদার জানান, একদিকে এক শ্রেণীর কাঁচামাল ব্যবসায়ীরা ভারত থেকে পান আমদানী করছেন। অন্যদিকে অবৈধভাবে চোরাই পথে আসছে পান। এসব পান বাজারজাত করায় দিন দিন কমতে শুরু করেছে স্থানীয় পানের দাম। খরচ পুষিয়ে নিতে না পেরে বিপাকে পড়েছে দেশী পান চাষীরা। অনেকে আবার গুটিয়ে নিয়েছেন পানের বরজ।

চাষীরা বলছেন, একমাস আগেও যে পান ১০০ টাকা বিড়া দরে বিক্রি হয়েছে সে পান বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ২০ টাকা দরে। যার ফলে পানের বরজে বিনিয়োগ করা অর্থ কোনোভাবে উঠে আসবে না বলে চাষীদের আশঙ্কা। যার ফলে পানের বরজ করতে বিনিয়োগ করা অর্থ উঠে আসা কোনভাবে সম্ভব নয় বলে জানিয়েছেন পান চাষীরা ।

সম্প্রতি হাট-বাজার ঘুরে পানচাষীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, চলতি মওসুমে প্রাকৃতিক দূর্যোগ বা কোন প্রকার রোগবালাই প্রভাব পানের বরজে  না থাকায় আশানুরূপ উৎপাদন হয়েছে। গত মৌসুমে দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যাওয়ায় পান বিক্রি করে শত শত পরিবার লাভবান হয়েছে। তবে চলতি বছরের শুরু থেকে পান উৎপাদনে উৎসাহী হয়ে কৃষকরা অধিক পরিমাণে পানের বরজ করেছে। কিন্তু বাম্পার ফলন হলেও দাম পড়ে যাওয়ায় চাষীদের লোকসান গুণতে হবে।
পান চাষে কাউখালী, মঠবাড়িয়া, ভা-ারিয়া থেকে প্রতি সপ্তাহে লাখ লাখ টাকার পান দেশের বিভিন্ন স্থানে চালান হয়। বর্তমানে জেলায় কৃষকের কয়েককোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। এ ক্ষতি পুষিয়ে ওঠার জন্য সরকার পান চাষীদের জন্য আর্থিকভাবে সহযোগিতা করলে আবারও তারা ঘুরে দাঁড়াতে পারবে।  কাউখালী, ভা-ারিয়া ও মঠবাড়িয়ার ঐতিহ্যবাহী পান  প্রতিদিন  ঢাকা ও চাঁদপুর কুমিল্লাসহ বিভিন্ন জেলায় অঞ্চলে সরবরাহ হয়। এছাড়া ব্যাগেজ রুলের মাধ্যমে দেশের বাহিরে রপ্তানী করা হয়।

পিরোজপুর জেলা পান চাষী সমিতির সভাপতি কমরেড নিমাই মন্ডল  বলেন, ঋণ ও মহাজনী দাদন নিয়ে চাষীরা পান চাষ করে থাকেন। ভারত থেকে এলসির মাধ্যমে পান আমদানি করায় চাষীদের জন্য মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। তারা বাজারে পানের দাম পাচ্ছেন না। সরকারের কাছে পানচাষীদের বাঁচাতে ভারত থেকে পান আমদানি বন্ধ করার দাবি জানানো হয় বর্তমানে জেলায় কৃষকের কয়েক কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। এ বছরে ক্ষতি পুষিয়ে ওঠার জন্য সরকার পান চাষীদের জন্য আর্থিকভাবে সহযোগিতা করলে আবারও তারা ঘুরে দাঁড়াতে পারবে।

পান আমদানির প্রতিবাদ জানাতে ও নিজেদের জীবন জীবিকা সচল রাখার তাগিদে পান আমদানী বন্ধের দাবিতে রাজপথে মিছিল, সমাবেশ, মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ করছে উপজেলার পান চাষীরা। তাদের এ আন্দোলনকে যৌক্তিক ও ন্যায়সঙ্গত বলে দাবি করছেন এলাকার জনপ্রতিনিধিসহ সকল সচেতন মহল।

এ বিষয়ে কাউখী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা অপূর্ব লাল সরকার বারসিক নিউজ ডট কমকে বলেন, এবার পান চাষে রোগবালাই নেই। ফলে বরজে পানের ফলন ভালো। তবে বাজারে দেশী পানের চাহিদা কমে গেছে। দেশী পানের বাজার ব্যবস্থাপনা সংকটের ফলে পানচাষীরা ক্ষতির সম্মূখীন হচ্ছেন।

তিনি আরও জানান আমাদের দেশী পান ইউরোপে রপ্তানি হত। কয়েকবছর আগে আমাদের পানচাষে সাইটোনেলা নামে একটি ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণ দেখা দেয় এতে ইউরোপে পান রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ হয়। তবে ওই নিষেধাজ্ঞার সময়সীমা শেষ হলেও ইউরোপ এখনও নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করেনি। ফলে দেশী পানচাষীরা মূলত দেশী বাজারের উপরই নির্ভরশীল।

happy wheels 2

Comments